টেক জায়ান্ট আমাজন উত্তর কোরিয়ার এজেন্ট সন্দেহে ১ হাজার ৮০০ জনের বেশি চাকরিপ্রার্থীর আবেদন বাতিল করে দিয়েছে; এমনটি জানিয়েছেন আমাজনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
আমাজনের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা স্টিফেন শ্মিট লিংকডইনে শেয়ার করা এক পোস্টে বলেন, উত্তর কোরিয়রা চুরি করা অথবা ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে রিমোট আইটি চাকরির জন্য আবেদন করার চেষ্টা করেছিল। তিনি উল্লেখ করেন, ‘তাদের লক্ষ্য সাধারণত খুব সহজ—চাকরিতে যোগ দেওয়া, বেতন নেওয়া এবং সেই অর্থ দিয়ে তাদের দেশের অস্ত্র কর্মসূচিতে তহবিল জোগানো।’ তিনি আরও বলেন, এই প্রবণতা সম্ভবত পুরো শিল্পজুড়ে বড় আকারে ঘটছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে।
যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ পিয়ংইয়ংয়ের এজেন্টদের এই ধরনের অনলাইন জালিয়াতি সম্পর্কে আগেই সতর্ক করেছিল। শ্মিট তাঁর পোস্টে জানান, গত এক বছরে আমাজনে উত্তর কোরিয়দের চাকরির আবেদন প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, এই এজেন্টরা সাধারণত ‘ল্যাপটপ ফার্ম’ পরিচালনাকারীদের সঙ্গে যোগসাজশে কাজ করে। ল্যাপটপ ফার্ম বলতে এমন সব কম্পিউটারকে বোঝায়, যা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত হলেও দেশের বাইরে থেকে রিমোটলি পরিচালনা করা হয়।
শ্মিট জানান, চাকরির আবেদনগুলো যাচাই করার জন্য আমাজন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং কর্মী দিয়ে সরাসরি যাচাইকরণের একটি সমন্বিত পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, এই জালিয়াতিদের কৌশল এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত।
দুষ্কৃতকারীরা ভেরিফিকেশন পাওয়ার জন্য ফাঁস হওয়া তথ্য ব্যবহার করে লিংকডইনের নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টগুলো দখল করে নিচ্ছে। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য তারা প্রকৃত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের লক্ষ্য বানাচ্ছে। শ্মিট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সন্দেহজনক চাকরির আবেদনের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানোর অনুরোধ করেন। নিয়োগকর্তাদের প্রতি শ্মিট পরামর্শ দেন-যেন তারা উত্তর কোরিয়ার জালিয়াতিপূর্ণ আবেদনের কিছু লক্ষণের দিকে নজর রাখেন; যেমন ভুল ফরম্যাটের ফোন নম্বর এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্যে অসংগতি।
গত জুনে মার্কিন সরকার জানিয়েছিল, তারা দেশজুড়ে অবৈধভাবে পরিচালিত ২৯টি ‘ল্যাপটপ ফার্ম’ খুঁজে পেয়েছে, যা উত্তর কোরিয়ার আইটি কর্মীরা ব্যবহার করছিল। মার্কিন বিচার বিভাগ জানায়, তারা উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য আমেরিকানদের চুরি করা বা জাল পরিচয় ব্যবহার করত।
এই ঘটনায় উত্তর কোরিয়ার এজেন্টদের চাকরি পেতে সাহায্য করার দায়ে মার্কিন দালালদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া গত জুলাইয়ে অ্যারিজোনার এক নারীকে আট বছরের বেশি কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি ৩০০-এর বেশি মার্কিন কোম্পানিতে উত্তর কোরিয়ার আইটি কর্মীদের রিমোট চাকরি পাইয়ে দিতে ল্যাপটপ ফার্ম পরিচালনা করতেন।
বিচার বিভাগ জানিয়েছে, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে ওই নারী এবং পিয়ংইয়ং প্রশাসন ১ কোটি ৭০ লাখ ডলারের বেশি অবৈধ অর্থ আয় করেছে।
আরআই/টিএ