বক্সিং ডেতে মেলবোর্ন টেস্টে বোলারদের পারফরম্যান্সে মুখে হাসি ফুটেছিল ইংল্যান্ডের। তবে সেই হাসি বেশিক্ষণ টিকলো না। অস্ট্রেলিয়াকে ১৫২ রানে গুটিয়ে ইংল্যান্ড অলআউট হয়ে গেলো মাত্র ১১০ রানে। ফলে প্রথম ইনিংসে ৪২ রানের লিড পায় অজিরা।
ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ধসের মূলে ছিলেন মাইকেল নেসার এবং লোকাল বয় স্কট বোল্যান্ড। এই দুইজন মিলে নিয়েছেন ইংল্যান্ডের ৭ উইকেট। যেখানে নেসার ৪টি এবং বোল্যান্ড তিনটি উইকেট পান। এছাড়াও, মিচেল স্টার্ক দুইটি এবং ইংল্যান্ডের শেষ উইকেটটি তুলে নেন গ্রিন।
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে খেলেছে ৪৫.২ ওভার, ইংল্যান্ড ৩০ ওভারও খেলতে পারেনি, গুটিয়ে গেছে ২৯.৫ ওভার। ৪২ রানে এগিয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়াকে তাই দ্বিতীয় ইনিংসেও আজই ব্যাটিংয়ে নামতে হয়। সেটা অবশ্য এক ওভারের জন্য। সেজন্যই সম্ভবত ট্রাভিস হেডের সঙ্গে ওপেনিংয়ে ‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে নেমেছিলেন পেসার স্কট বোল্যান্ড।
স্ট্রাইক নিয়ে পুরো ওভার খেলে দিনটা কোনোভাবে তিনিই শেষ করেছেন।
দিনের শেষ বলে বোল্যান্ড উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে পেয়েছেন বাউন্ডারি। তবে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওপেন করেছেন, সেটা এখন থেকে বুক ফুলিয়ে বলতে পারবেন। অস্ট্রেলিয়া তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে বিনা উইকেটে ৪ রান তুলে প্রথম দিনের খেলা শেষ করায় ৪৬ রানে এগিয়ে।
শুক্রবার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস জিতে অজিদের ব্যাটিংয়ে পাঠান ইংলিশ অধিনায়ক বেন স্টোকস।
২০০০ সালের পর এ নিয়ে তৃতীয়বার অ্যাশেজে ন্যূনতম ৫০ ওভারও খেলতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। এর আগে ২০১০ সালে একই ভেন্যু এমসিজিতে ৪২.৫ ওভারে স্রেফ ৯৮ রানে তারা অলআউট হয়েছিল। চলমান সিরিজের পার্থ টেস্টে ৪৫.২ ওভারে গুটিয়ে যায় ১৩২ রানে। এবার ১৫২ রান করার পথে ৪৫.২ ওভার খেলেছে অস্ট্রেলিয়া।
ঘরের মাটিতে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজে ২০০০ সালের পর চতুর্থ সর্বনিম্ন রানে অলআউট হলো স্টিভ স্মিথের দল। এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই স্বাগতিক ব্যাটারদের ওপর ইংলিশ পেসাররা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেন। দলীয় ২৭ রানে ট্রাভিস হেডকে (১২) ফেরানোর পর জ্যাক ওয়েদারল্ড (১০) এবং মার্নাস লাবুশেন (৬) আউট হয়েছেন স্রেফ ৭ রানের ব্যবধানে। শুরুটা করেছিলেন গাস অ্যাটকিনসন, এরপর একের পর এক উৎসবের উপলক্ষ্য এনে দিয়েছেন জশ টাং।
প্যাট কামিন্সের অনুপস্থিতিতে অধিনায়কত্ব পাওয়া স্মিথও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৯ রান করা এই ডানহাতি ব্যাটারকে সুইং ডেলিভারিতে বোল্ড করেছেন টাং। মিডল অর্ডারে নামা উসমান খাজার ব্যাট থেকে আসে ২৯ রান। মধ্যাহ্ন বিরতির পর নেমে তিনিও দ্রুত ফেরেন। এ নিয়ে ২০২৩-২৪ মৌসুম শুরুর পর থেকে ডানহাতি পেসারদের বলে ২০তম বার আউট হলেন খাজা। যদিও ক্রিজ ছাড়ার আগে তিনি টেস্টে আট হাজার রানের মাইলফলক পূর্ণ করেছেন। ২০ রানে ফিরেছেন সিরিজের অন্যতম সেরা ব্যাটার অ্যালেক্স ক্যারি।
অস্ট্রেলিয়ার পুঁজিটা কিছুটা বেড়েছে সপ্তম উইকেটে ক্যামেরন গ্রিন ও মাইকেল নেসারের গড়া ৪৫ রানের জুটিতে। তবে ১৭ রান করে দুর্ভাগ্যের রানআউটে কাটা পড়েন গ্রিন। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৩৫ রান আসে নেসারের ব্যাটে। ১৫২ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ইংলিশদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট নিয়েছেন জশ টাং। টেস্টে এটি তার তৃতীয় ফাইফার। ১৯৯৮ সালের পর এই প্রথম মেলবোর্ন টেস্টে কোনো ইংলিশ বোলার এই কীর্তি গড়লেন। এ ছাড়া অ্যাটকিনসন দুই এবং ব্রাইডন কার্স ও স্টোকস একটি করে শিকার করেন।
জবাব দিতে নেমে ১৬ রানে ৪ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। অবস্থা বেগতিক দেখে মেরে খেলে চাপ কমাতে চেষ্টা করেন হ্যারি ব্রুক। অনেকটা সফল হয়েছিলেনও। কিন্তু ৩৪ বলে তার ইনিংসটি ৪১ রানে থামলে ফের ধস নামে।
ইংল্যান্ডের ইনিংসে কেবল হ্যারি ব্রুক, অধিনায়ক বেন স্টোকস (১৬) আর শেষদিকে গুস এটকিনসন (২৮) ছাড়া আর কেউ দুই অংক ছুঁতে পারেননি। ৯১ রানে ৯ উইকেট হারানোর পর এটকিনসনই দলকে একশ পার করে দেন। ২৯.৫ ওভারে ১১০ রানে থামে ইংল্যান্ডের ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ার মাইকেল নেসার ৪টি আর স্কট বোল্যান্ড নেন ৩টি উইকেট। মিচেল স্টার্ক দুইটি এবং ক্যামেরন গ্রিন নেন একটি উইকেট।
পুরো দিনে উইকেট পড়ে ২০টি। গত ৭৪ বছর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে একদিনে যা সর্বোচ্চ। সব মিলিয়ে টেস্ট ইতিহাসে এক দিনে অন্তত ২০ উইকেট যাওয়ার সপ্তম ঘটনা এটি, সর্বশেষ ১৯৫১ সালে অ্যাডিলেডে এক দিনে গেছে ২২ উইকেট। মেলবোর্নে একদিনে সর্বোচ্চ উইকেট গেছে ২৫টি, সেটি ১৯০২ সালে, মানে ১২৩ বছর আগে।
আরআই/এসএন