বহুল আলোচিত ওয়ানএমডিবি কেলেঙ্কারির চূড়ান্ত মামলায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন মালয়েশিয়ার কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) পুত্রজায়ার প্যালেস অব জাস্টিস এ চলা দীর্ঘ সাত বছরের শুনানি শেষে আদালত তাকে ক্ষমতার অপব্যবহারের চারটি প্রধান অভিযোগেই দোষী সাব্যস্ত করেছেন।
বিচারক কলিন লরেন্স সেকুয়েরাহ তার রায়ে জানান, নাজিব রাজাক রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিল ওয়ানএমডিবি থেকে ২৩০ কোটি রিঙ্গিত (প্রায় ৫৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) আত্মসাৎ করতে নিজের পদের অপব্যবহার করেছেন। বর্তমানে নাজিব এই মামলার বাকি ২১টি মানি লন্ডারিং অভিযোগের রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন।
পুরো বিচারপ্রক্রিয়া চলার সময় নাজিবের আইনজীবীরা দাবি করে আসছিলেন যে, এই অর্থ সৌদি আরব থেকে আসা ‘বৈধ রাজনৈতিক অনুদান’ এবং পলাতক অর্থদাতা ঝো লো নাজিবকে প্রতারিত করেছেন।
তবে বিচারক সেকুয়েরাহ এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘তথ্য-প্রমাণ স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, ঝো লো নাজিব রাজাকের একজন ‘প্রক্সি’ বা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। নাজিবের মতো একজন উচ্চশিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ নিজেকে পরিস্থিতির শিকার বা ‘গ্রাম্য সাধারণ মানুষ’ হিসেবে দাবি করতে পারেন না।
৭২ বছর বয়সি নাজিব রাজাক বর্তমানে ‘এসআরসি ইন্টারন্যাশনাল’ কেলেঙ্কারিতে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কাজাং কারাগারে ৬ বছরের সাজা ভোগ করছেন। আজকের রায়ের ফলে তার সাজা আরও দীর্ঘ হতে যাচ্ছে। প্রতিটি অপব্যবহারের অভিযোগে তার ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত জেল এবং আত্মসাৎকৃত অর্থের পাঁচগুণ জরিমানা হতে পারে।
২০১৫ সালে প্রথম প্রকাশ্যে আসা এই দুর্নীতি মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে ব্যাপক সাড়া ফেলে। মার্কিন তদন্তকারীদের মতে, ওয়ানএমডিবি তহবিল থেকে মোট ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লুট করা হয়েছে। এই অর্থ দিয়ে নিউইয়র্ক ও লস অ্যাঞ্জেলেসে বিলাসবহুল রিয়েল এস্টেট কেনা হয়েছে।
এই কেলেঙ্কারির জেরে ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে নাজিবের নেতৃত্বাধীন বারিসান ন্যাশনাল জোটের ছয় দশকের শাসনের অবসান ঘটে।
যদিও গত অক্টোবরে নাজিব এক বিরল বিবৃতিতে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন, তবে তিনি দাবি করেছিলেন যে এই দুর্নীতির বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন না। আদালত আজ সেই দাবিকেও ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত করলেন।
বর্তমানে কারাগারে থাকা নাজিবের গৃহবন্দী হওয়ার আবেদনও গত সপ্তাহে আদালত নাকচ করে দিয়েছে। আজকের এই রায়টি মালয়েশিয়ায় দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ের একটি বড় মাইলফলক হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
এমকে/এসএন