ভালো মানের ছবি সম্পাদনা এক সময় কম্পিউটারে সীমাবদ্ধ ছিল, ছবি তুলতেও প্রয়োজন হতো এক ব্যাগ সরঞ্জাম। কিন্তু সময় বদলে গেছে, এখন যে কেউ চাইলে মোবাইলেই ভালো মানের ছবি ওঠাতে আর কম্পিউটারের সমমানের সম্পাদনা করতে পারেন।
আইফোন বা অ্যান্ড্রয়েড যাই ব্যবহার করেন না কেন, উন্নতমানের ছবি সম্পাদনা অ্যাপস সব অপারেটিং সিস্টেমেই সহজলভ্য।
আসুন জেনে নিই, ছবি সম্পাদনার এমন সাতটি মোবাইল অ্যাপস সম্পর্কে-
অ্যাডব লাইটরুম
অ্যাডবের ছবি সম্পাদনা অ্যাপগুলি তাদের সহজ ব্যবহার আর সিঙ্ক বৈশিষ্ট্যের কারণে বর্তমানে ডিজিটাল ছবি সম্পাদনার গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। অ্যাডব লাইটরুম শুধু প্রফেশনালদের জন্য নয়, চাইলে যে কেউ এটি ব্যবহার করতে পারেন। অ্যাডব লাইটরুমে ফটোশপের জটিল সব ফিচারসমূহ খুব সহজ প্যানেলে পাওয়া যায়। কেউ চাইলে ইম্পোর্ট, ম্যানেজ, অর্গানাইজ ও সম্পাদনার মতো ফিচারগুলি ফ্রিতেই ব্যবহার করতে পারবেন।
যদি কেউ ছবিগুলো সিঙ্ক করতে চান আর একইসঙ্গে বিভিন্ন ডিভাইসে ব্যবহার এবং লাইটরুমের প্রিমিয়ার ফিচারগুলিও পেতে চান তাহলে মাসে মাত্র ১০ ডলার খরচ করে অ্যাডব ফটোগ্রাফি ক্রিয়েটিভ ক্লাউড প্ল্যান সাবস্ক্রাইব করতে পারবেন। এই প্ল্যানে কম্পিউটারে ব্যবহারের জন্য অ্যাডব ফটোশপ আর মোবাইলের জন্য লাইটরুম ক্লাসিক পাওয়া যায়।
আফটারলাইট
আফটারলাইটে সব বেসিক ফটো ইডিটিং টুলস, বিল্ট-ইন ফ্রেম, লোকাল অ্যাডজাস্টমেন্ট ও ফিল্টার পাওয়া যায়। ছবিকে স্বতন্ত্র চেহারা দেয়ার জন্য কেউ চাইলে সহজে নিজের ফিল্টার তৈরি করতে পারবেন। অ্যাপ্লিকেশনটিতে ফিল্ম লাইট লেকিংস ঠিক করতে ওভার লেইস, ডাবল অ্যাক্সপোজার টুলস এবং গ্রাফিকযুক্ত করার সুবিধাসহ বিভিন্ন ধরণের অনন্য ফিচার রয়েছে। এককালীন ৩ মার্কিন ডলার দিয়ে ক্রয় করলে আফটারলাইটের সব সুবিধা ব্যবহার করতে পারবেন।
স্ন্যাপসিড
স্ন্যাপসিড একটি পেশাদার ফ্রি অ্যাপ, যাতে টিউনিং লেভেল কিংবা হোয়াইট ব্যাল্যান্স সহজে ঠিক করতে পারবেন। এই অ্যাপটির অনন্য বৈশিষ্ট্য এর ‘সিলেক্টিভ অ্যাডজাস্ট’ টুলস। এর মাধ্যমে ছবির একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল চিহ্নিত করে আলাদাভাবে সে অংশের ব্রাইটনেশ, কন্ট্রাস্ট ও স্যাচুরেশন সামঞ্জস্য করতে পারবেন। এছাড়াও এতে ফটোশপের ন্যায় ছবির উপর ইফেক্ট স্ট্যাক করার সুবিধা রয়েছে।
ভিএসসিও
ভিএসসিও এমন একটি ফটো অ্যাপ্লিকেশন যেটার মাধ্যমে ফটো ক্যাপচার করতে এবং সেগুলি প্রিসেট ফিল্টার আর ইডিটিং টুলসের দ্বারা সম্পাদনা করা যায়। বেশ কিছু ফিল্টার ফ্রিতেই ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া বিশেষ ফিল্টার কেনার সুবিধাও এতে রয়েছে।
ভিএসসিও অ্যাপটি আপনাকে পেশাদার ও অপেশাদার ছবি প্রেমীদের কমিউনিটি গড়ে তোলার জন্য বিশেষ সুবিধা দেবে। অ্যাপ্লিকেশনটির একটি ভার্সন বিনামূল্যেই ডাউনলোড করা যায়। তবে ফ্রি ভার্সনটিতে সুবিধা সীমিত। প্রফেশনাল সুবিধা পেতে প্রতি বছর ১৯.৯৯ মার্কিন ডলারে ভিএসসিও মেম্বারশিপ সাবস্ক্রিপশন করা যায়।
পিকসআর্ট
যারা ছবি রি-মিক্সিং করতে আগ্রহী তাদের জন্য পিক্সআর্ট ফটোশপের চেয়ে সহজ টুলস সরবরাহ করছে। তবে এই অ্যাপটি পেইন্টের চেয়ে বেশি পেশাদার। ফিল্টার, ব্রাশ টুলস, পাঠ্য প্রভৃতি দিয়ে ছবি সম্পাদনা করতে যে কেউ অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন। পিক্সআর্টের সাহায্যে কোনো ছবি থেকে কোনো বস্তু কেটে অন্য ছবিতে সেটা ব্যবহার করা যায়, যা অনেকটা ফটোশপে ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পাদনা করার অনুরূপ।
অ্যাপ্লিকেশনটি মৌলিক ফিচারসহ ফ্রিতে ব্যবহার করা যায়। তবে প্রফেশনাল ভার্সন ব্যবহার করতে প্রতি বছর ৪৭.৮৮ মার্কিন ডলার বা প্রতি মাসে 8 মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হবে।
ওভার
ছবি সম্পাদনা করার চেয়ে গ্রাফিক্স তৈরি করতে যারা বেশি আগ্রহী, তাদের জন্য ওভার একটি দুর্দান্ত বিকল্প। অ্যাপ্লিকেশনটিতে ছবি বা ভিডিওর উপর পাঠ্য ও গ্রাফিক ওভারলে করা যায়। এছাড়াও এটি স্টক ছবি, ফন্ট, গ্রাফিক্স, লেআউট টেম্পলেট প্রভৃতি দিয়ে ঠাসা। অ্যাপ্লিকেশনটি সীমিত গ্রাফিক্স ও ফন্টসহ বিনামূল্যে ব্যবহার করা যাবে, তবে কাস্টম ফন্টসহ প্রফেশনাল বৈশিষ্ট্যগুলি আনলক করার জন্য প্রতি বছর ৪৯.৯৯ মার্কিন ডলার বা প্রতি মাসে ৯.৯৯ মার্কিন ডলার খরচা করতে হবে।
প্রিভিউ
প্রিভিউ অ্যাপটির প্রধান লক্ষ্য ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী হলেও অ্যাপটি ব্যবহার করা খুব সহজ। পাশাপাশি ব্লেমিশ স্মুদার, কালার অ্যানহেন্সমেন্ট, ওভারলে, স্প্ল্যাশ কালার, ফিল্টারসহ আরও অনেক সহজে ব্যবহার যোগ্য অসাধারণ টুলস এতে রয়েছে।
সম্পাদনা শেষ হয়ে গেলে ইনস্টাগ্রামের জন্য ছবিগুলির ক্রম সেট করা যায়। প্রিভিউ ব্যবহার করে যে কেউ ক্যাপশন লিখতে, পোস্ট শিডিউল করতে এবং হ্যাশট্যাগ সংমিশ্রণগুলি সংরক্ষণ করতে পারবেন। ঠিক ভিএসসিওর মতো, প্রিভিউতে নির্দিষ্ট নান্দনিকতা বজায় রাখার জন্য ডিজাইন করা প্রিমেড ফিল্টার সেট রয়েছে। বেশ কিছু ফিল্টার বিনামূল্যে ব্যবহার করা যাবে এবং বেশকিছু ফিল্টার কিনতে হবে। অ্যাপটি বিনামূল্যে ব্যবহার করা যাবে, এছাড়া প্রাইমের মেম্বারশীপের জন্য প্রতি মাসে ৬.৬৭ মার্কিন ডলার এবং প্রিমিয়ামের জন্য প্রতি মাসে ১২.৫০ মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হবে। তথ্যসূত্র: ইন্টারন্যাশনাল জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক
টাইমস/এনজে/জিএস