বিল ক্লিনটনের গল্প

উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটন। ১৯৭৭-৭৯ মেয়াদে আরকানসাসের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। ১৯৭৯-৮১ ও ১৯৮৩-৯২ মেয়াদে ছিলেন আরকানসাস অঙ্গরাজ্যের গভর্নর। এরপর ১৯৯৩-২০০১ পর্যন্ত দুই মেয়াদে তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

বিল ক্লিনটন ১৯৪৬ সালের ১৯ আগস্ট আরকানসাসের হোপ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, জন্মের পূর্বেই এক সড়ক দুর্ঘটনায় তার বাবা মারা যান। এরপর তার মা আবার বিয়ে করেন। সেই সৎ বাবার কাছেই তিনি বড় হয়েছেন। এখান থেকেই তিনি বিল ক্লিনটন নামে পরিচিত হন।

প্রথম দিকে তিনি জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক বিষয়ে স্নাতক করেন। পরে চলে যান ইংল্যান্ডে। সেখানে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি কলেজে কিছু দিন পড়েছেন। এরপর আইন বিষয় নিয়ে পড়তে চলে আসেন আমেরিকার ইয়েল ল’ স্কুলে। আর এখানেই তিনি হিলারি রডহ্যাম এর সঙ্গে পরিচিত হন। ১৯৭৫ সালে তারা বিয়ে করেন।

শৈশবে তার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবেন। কিন্তু ওয়াশিংটনে যুবদের এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট কেনেডির সঙ্গে দেখা হবার পর তিনি রাজনীতিতে আসার মনস্থির করেন। তবে লেখাপড়া শেষে আরকানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু।

১৯৭৪ সালে তিনি কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে হেরে যান। তবে ঠিক দুই বছর পরই তিনি আরকানসাসের অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হন।

১৯৭৮ সালে তিনি আরকানসাসের গভর্নর নির্বাচিত হন। এক মেয়াদ পর পরবর্তী নির্বাচনে হেরে যান। তবে দুই বছর পর ১৯৮৩ সালে আবারও গভর্নর নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে তিনি ডেমোক্রেট দল থেকে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করেন। এসময় ক্লিনটনের জয় নিয়ে কেউই আশা করেননি। কারণ তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ বুশ সিনিয়র। তবে এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রস পেরুট অংশ নিলে ক্লিনটনের ভাগ্য খুলে যায় এবং তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

প্রেসিডেন্সির শুরুতেই হোঁচট খান ক্লিনটন। কারণ এসময় মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ দুটিরই নিয়ন্ত্রণ চলে যায় রিপাবলিকানদের হাতে। তবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে রিপাবলিকানদের সমঝোতার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন তিনি। ফলস্বরূপ ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে পুনরায় নির্বাচিত হন ক্লিনটন।

১৯৯৮ সালে যৌন হয়রানির অভিযোগে তাকে অভিসংশিত করার প্রস্তাব করে প্রতিনিধি পরিষদ। তবে সিনেট অনুমোদন না দেয়ায় সে যাত্রা বেঁচে যান ক্লিনটন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্লিনটনের সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে আমেরিকার নাজুক অর্থনীতির পুনরুদ্ধার। তিনি আমেরিকায় মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নাফটা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তার নেতৃত্বে কিছু দিনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ভঙ্গুর অর্থনীতি আবারও চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তার সময়ে আমেরিকায় বেকারত্বের হার ছিল তখনকার সময়ে কয়েক দশকে সর্বনিম্ন।

বিদেশনীতির ক্ষেত্রেও ক্লিনটনের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তার মধ্যস্থতায় ১৯৯৩ সালে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে ঐতিহাসিক ‘অসলো শান্তি চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়, যা ফিলিস্তিন সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখে। এছাড়া ঐতিহাসিক ‘ডেটন চুক্তি’র মাধ্যমে বসনিয়া সংকট নিরসন ও সার্বিয়া কর্তৃক কসভোর আলবেনিয়দের জাতিগত নিধন বন্ধেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

২০০১ সালে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অবসর নেন ক্লিনটন। এরপর নিজের প্রতিষ্ঠিত ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন মানব কল্যাণ মূলক কাজে তিনি জড়িয়ে পড়েন। তার প্রচেষ্টায় ক্লিনটন ফাউন্ডেশন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গবেষণা খাতে বিনিয়োগ করে। ২০১০ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর হাইতির পুনর্গঠনে এগিয়ে আসে ক্লিনটন ফাউন্ডেশন।

তার লেখা প্রথম বই ‘বিটউইন হোপ অ্যান্ড হিস্টোরি’ ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয়। অবসরের পর তিনি আবারো লেখালেখি শুরু করেন। ২০০৪ সালে প্রকাশিত হয় তার আত্মজীবনী ‘মাই লাইফ’, যা ছিল সর্বাধিক বিক্রিত আত্মজীবনী সমূহের একটি।

সর্বশেষ ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় জেমস পেটারসনের সঙ্গে লেখা তার বহুল আলোচিত বই ‘দ্য প্রেসিডেন্ট ইস মিসিং’। বর্তমানে লেখালেখি আর স্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী কাজে সহযোগিতা করার কাজেই ব্যস্ত রয়েছেন আমেরিকার অন্যতম সফল প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন।

 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
তিস্তার পানি বেড়ে বিপৎসীমার কাছে, আতঙ্কে মানুষজন Sep 14, 2025
img
না খেলার চেয়ে কষ্ট করে খেলা ভালো : আকরাম খান Sep 14, 2025
img
পদ্মা সেতুতে চালু হচ্ছে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন পদ্ধতি Sep 14, 2025
img
টসের সময় হাত মেলাননি ভারত-পাকিস্তানের অধিনায়ক Sep 14, 2025
img
দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় চট্টগ্রামে মাঠে থাকবে বিএনপি Sep 14, 2025
img
সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বক্সার হ্যাটন আর নেই Sep 14, 2025
img
ইউটিউবে বিশেষ উপায়ে রেকর্ড আয় আমির খানের সিনেমার Sep 14, 2025
img
বাংলাদেশে প্রবেশকালে মহেশপুর সীমান্তে আটক ৩ Sep 14, 2025
img
এটা শুধু প্রাপ্তি নয়, সবার ভালোবাসা : অপরাজিতা Sep 14, 2025
img
নির্ধারিত সময়ের আগেই সংবিধান সংশোধন করে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে: গোলাম পরওয়ার Sep 14, 2025
img
বাবার শিক্ষা ও স্টপওয়াচের গল্পে অনুপ্রেরণা দিলেন লেডেকি Sep 14, 2025
img
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৫ জন সনাতন ধর্মাবলম্বী যোগ দিলেন জামায়াতে Sep 14, 2025
img
কুষ্টিয়ায় পৌঁছেছে ফরিদা পারভীনের মরদেহ Sep 14, 2025
img
ট্রাম্পের ১০০ শতাংশ শুল্কারোপের হুমকির কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাল চীন Sep 14, 2025
img
ঢাকা-৮ এ ভোটযুদ্ধে নামলেন ইনকিলাব মঞ্চের শরিফ ওসমান হাদি Sep 14, 2025
img
টাকার বদলে পারিশ্রমিক হিসেবে এক গ্লাস দুধ পেয়েছিলেন অভিনেতা গুলশান গ্রোভার! Sep 14, 2025
img
সবাইকে সমীহ করে ট্রফি জয়ের পরিকল্পনা বাংলাদেশের! Sep 14, 2025
img
সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খানসহ ৪ জনের জামিন নামঞ্জুর Sep 14, 2025
img
ব্রাজিলের পর আবারও রিয়ালে ফিরতে চান আনচেলত্তি Sep 14, 2025
img
সিঙ্গেল-ইউজ প্লাস্টিক মুক্ত করতে সচিবালয়ে শুরু হচ্ছে চেকিং কার্যক্রম Sep 14, 2025