করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে ঘরে থাকতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কল কারখানা। ফলে পৃথিবীর উৎপাদন ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সংকট দেখা দিতে পারে নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তুর। এমনকি কৃষিকাজ বন্ধ থাকায় খাদ্যেরও সংকট দেখা দিতে পারে। একই সঙ্গে দেখা দিচ্ছে, চাকরি হারানোর ভয়। ফলে আমরা, হতে যাচ্ছি ভিন্নরকম এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
এ অবস্থায় আমাদের কিছুটা সংযমের সঙ্গে জীবনযাপন করা প্রয়োজন। যাতে ভবিষ্যতে চরম খারাপ সময় আসলেও আমরা পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারি। সেজন্য এই সংকটময় সময়ে আমাদেরকে সব কিছুতে হিসেবি হতে হবে। এর জন্য আমাদের যা করতে হবে, তা হলো-
জরুরি ফান্ড গঠন
অর্থনৈতিক দুরবস্থার সম্ভাবনা দেখে দিলে ভবিষ্যতের জন্য কিছু সঞ্চয় করে রাখা ভালো। এখন যতটুকু না হলেই নয়, ততটুকু খরচ করুন ও সঞ্চয়ে মনোযোগ দিন। যদি নিয়মিত সেভিংস একাউন্টে রাখা টাকা দ্রুতই খরচ হয়ে যায়, তাহলে আলাদা একাউন্ট খুলে সেখানে জমা রাখুন। অন্তত তিন থেকে ছয় মাসের আয়ের সম পরিমাণ টাকা জমা রাখা ভালো। এতে ধার করার প্রয়োজন হবে না। অনেকেরই হয়ত আয়ের পুরো টাকাটা খরচ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আপনাকে হয় আয় বাড়াতে হবে অথবা খরচ কমাতে হবে।
ঋণ পরিশোধ করুন
ঋণ মানেই অতিরিক্ত বোঝা। অর্থনৈতিক মন্দার সময় চাকরিবাকরির সমস্যা, হাতে টাকা না থাকা হবে একটি সাধারণ সমস্যা। এমন অবস্থায় ঋণ শোধ করা হবে অতিরিক্ত চাপের। তাই সময় সুযোগ থাকতেই সব ঋণ পরিশোধ করুন।
নির্দিষ্ট বাজেট মেনে চলুন
এমন সময় প্রতিদিনের খরচ মেটানো দুঃসাধ্য হয়ে যেতে পারে। তাই দীর্ঘমেয়াদী খরচের পরিকল্পনা করুন। চেষ্টা করুন কড়াভাবে সেই বাজেট মেনে চলতে। অনেক সময় শিশুরা বায়না করে এটা সেটার। তাই প্রয়োজনে নির্দিষ্ট খরচে চলার বিষয়টি বাড়ির শিশুদের বুঝিয়ে বলুন।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা
বিষয়টি হয়ত আপনার জন্য নতুন। এতদিন যখন যা ইচ্ছা করেছে খেয়ে অভ্যস্ত। কিন্তু হিসেব করে চলার এই সময়ে আপনাকে খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনতে হবে। খাবারের পেছনে সপ্তাহে কত টাকা ব্যয় করবেন সেটি ঠিক করুন। এরপর পুষ্টিগুণ হিসেব করে বাজার করুন। অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার ও বাইরে খাবার অভ্যাস নিয়ন্ত্রণে আনুন। শিশুদেরও ঘরোয়া পুষ্টিকর খাবারে অভ্যস্ত করুন।
এছাড়াও আপনার যদি গাছ লাগানোর মত জায়গা থাকে তবে মরিচ, টমেটো, লেবু বা অন্যান্য শাকসবজি লাগাতে পারেন। যাদের জমি আছে তারা কৃষিকাজে বিনিয়োগ করুন। খাদ্যসংকট মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার বিকল্প নাই।
পরিবর্তন আসুক ধীরে ও ক্ষুদ্র পরিসরে
আসলে একটি নির্দিষ্ট জীনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে গেলে শুরুতেই বড় কোন পরিবর্তন আনা সম্ভব হয় না। তাই ভাবনা চিন্তা করে পরিকল্পনা করুন ও ধীরে ধীরে খরচ কমান। যেমন আপনার যদি দুটো গাড়ি থাকে, তবে একটি বিক্রি করে দিন। যদি সপ্তাহে তিন দিন বাইরে খাওয়ার অভ্যাস থাকে, সেটিকে এক দিন এক দিন করে কমাতে কমাতে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনুন।
যদি প্রতিমাসেই শপিং করার অভ্যাস থাকে সেটিকে শুধুই উৎসবকেন্দ্রিক করে ফেলুন। একাধিক টেলিভিশন, স্মার্টফোন, কম্পিউটার বা সবকিছুর ক্ষেত্রেই এভাবে ধীরে ধীরে বাদ দিন। মনে রাখবেন একসময় হয়ত ক্যাবল কানেকশন ও ইন্টারনেট লাইনও কেটে দিতে হতে পারে।
এছাড়াও আরও কিছু পরিবর্তনের জন্য মানসিকভাবে তৈরি হতে হবে আপনাকে। যেমন ছোট বাসায় উঠতে হতে পারে। সাবলেট দিয়ে ভাড়া ভাগাভাগি করতে হতে পারে। সবকিছুর জন্যই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিন। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাই পারে সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তা দিতে।
টাইমস/জিএস