কোভিড-১৯ সংক্রমিত না হয়েও যেভাবে প্রভাবিত হতে পারে আপনার স্বাস্থ্য

প্রতিদিন বেড়েই চলেছে কোভিড-১৯ রোগটিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিশ্বজুড়ে ইতিমধ্যে ১৮৫টি দেশের ৩৫ লাখের বেশি মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছেন, মৃতের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ।

এমন অবস্থায় রোগটির সংক্রমণ ঠেকাতে দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক দূরত্ব মেনে গৃহবন্দী থাকতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। রোগটির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়, আতঙ্ক আর উদ্বেগ।

ফলে দেখা গেছে, সংক্রমিত না হলেও উদ্বেগের ফলে নানা স্বাস্থ্য জটিলতার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। কারণ ভয়, আতঙ্ক কিংবা উদ্বেগের মতো সাধারণ অনুভূতিগুলি আমাদের দেহের উপর বিভিন্নভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

আমাদের শরীর সবসময় বিশেষ উপায়ে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকে। তবে, আমাদের দেহ যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় তা কেবল স্বল্পমেয়াদী মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর। কিন্তু আমরা এখন যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তা সত্যিকার অর্থেই ভিন্ন।

অন্যদিকে, করোনাভাইরাস মহামারী স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা সৃষ্টির জন্য নিখুঁত ট্রিগার। কারণ এটি একদিকে অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অন্যদিকে আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ফলে এটি সহজেই আমাদের মানসিক চাপের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে সক্ষম।

মানসিক চাপ বনাম উদ্বেগ
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ সাধারণ দৃষ্টিতে একই জিনিস মনে হলেও দু'টির মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। মানসিক চাপ বা স্ট্রেস হলো- একটি সাধারণ পরিস্থিতি, যা আমরা প্রতিদিনের ক্রিয়াকলাপে মোকাবেলা করে থাকি। আমাদের জীবনে আনন্দের পরিস্থিতিও স্ট্রেস হতে পারে। যেমন- আপনি যখন আবাসন পরিবর্তন করেন তখন সেটি থেকে স্ট্রেস হতে পারে। তবে নতুন স্থানটি আপনার অফিসের কাছে হলে সেটি একইসঙ্গে আনন্দেরও। তাই মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শরীরে সর্বদা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।

অন্যদিকে, উদ্বেগ ভয়ের মতো। এটি ভয়ের উপর ভিত্তি করে সৃষ্ট একটি প্রতিক্রিয়া। তাই শরীরে এর নেতিবাচক প্রভাব তুলনামূলকভাবে বেশি। মহামারী বা এই জাতীয় সময়ে চাপ ও উদ্বেগে একইসঙ্গে আক্রান্ত হবার ঝোঁক থাকে, এটি মোকাবেলা করাও অপেক্ষাকৃত কঠিন।

যখন দীর্ঘকাল মহামারী জাতীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ চলতে থাকে তখন মানসিক চাপ ও উদ্বেগ আপনার শরীরে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। এর ফলে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে এবং আরও বেশ কয়েকটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

কীভাবে চাপ ও উদ্বেগ আপনার দেহে প্রভাব ফেলবে?
মানসিক চাপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আমাদের শরীর এক ধরণের রাসায়নিক নিঃসরণ ঘটায়, যা থেকে শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই প্রদাহ থেকে আপনার ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে। এছাড়া চুলকানি ও সোরিয়াসিসও দেখা দিতে পারে।

মানসিক চাপ ও উদ্বেগের ফলে আমাদের দেহে করটিজল নামক হরমোনের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। এর বর্ধিত মাত্রা আপনার ত্বকে প্রচুর পরিমাণে তেল তৈরি করে এবং ত্বকের নানা সমস্যা তৈরি করে। ফলে এই সময়ে ব্রণ হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেতে পারে।

স্ট্রেস প্রজনন সিস্টেমকেও প্রভাবিত করার জন্য দায়ী। সুতরাং, এর ফলে নারীদের দেরীতে বা অনিয়মিত পিরিয়ড দেখা দিতে পারে, এমনকি পিরিয়ড মিস হবার সম্ভাবনাও রয়েছে। যতদিন আমরা মানসিক চাপের মধ্যে থাকব ততদিন পর্যন্ত এসব উপসর্গ থাকতে পারে। এছাড়াও নানাভাবে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

মানসিক চাপ ও উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণের উপায়
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ আমাদের জন্য এই মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নানাভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। সামাজিক সহমর্মিতা এর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।

যদিও আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছি। এর অর্থ এই নয় যে, নিজেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রাখতে হবে। আপনার প্রতি সহানুভূতিশীল লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন, আপনি এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে পারেন।

আপনার প্রিয়জনদের সঙ্গে আপনার চিন্তাভাবনা ও উদ্বেগের বিষয়টি ভাগ করে নিন, এটি আপনাকে স্ট্রেস হ্রাস করতে সহায়তা করবে।

আপনি নিয়মিত শরীরচর্চা, যোগা, মেডিটেশন কিংবা মাইন্ডফুলনেশ অনুশীলন করতে পারেন। তাছাড়া বিভিন্ন সখের কাজ যেমন বাগান করা, ছবি আকা, গান করা প্রভৃতি আপনাকে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করবে। সব পরিস্থিতিতে ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করুন। তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ