বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের মহামারী লিঙ্গ ভেদে মানুষকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করছে। কারণ, লিঙ্গ বর্তমান স্বাস্থ্য জরুরী অবস্থার প্রাথমিক ও গৌণ প্রভাবগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
যদিও প্রাথমিক প্রভাবের দৃষ্টিকোণ থেকে, কোভিড-১৯ রোগে পুরুষের মারা যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বলে মনে করা হয়। তবে, সামাজিক স্তরে মহামারীটি নারীদের জন্য বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। এসবের জন্য দায়ী ঐতিহ্যগতভাবে নারীদের যত্নশীল ভূমিকা পালনের দায়িত্ব, গৃহস্থালির সহিংসতা বৃদ্ধি এবং নিজস্ব যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে তাদের সক্ষমতার অভাব।
পূর্ববর্তী ইবোলা মহামারীর সময়েও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নারীর প্রতি ঘরোয়া সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। সম্প্রতি বায়োথিকসে প্রকাশিত এক গবেষণায় কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন অ্যান্ড উইমেনস হেলথ বিভাগের প্রফেসর নীটু জন পূর্ববর্তী মহামারীর ফলে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত নারীর প্রতি ঘরোয়া সহিংসতার সঙ্গে কোভিড-১৯ জরুরী অবস্থার তুলনা করেছেন।
গবেষকরা বলছেন, যেহেতু জরুরী অবস্থার সময় সবাই ঘরে অবস্থান করছেন তাই নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধির এই ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের ওয়েবসাইটে মন্তব্য করেছে, “যদিও ডেটা এখনও খুব কম। তবে চীন, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনগুলি থেকে ধারণা করা হচ্ছে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে ঘরোয়া সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। হুবেই প্রদেশের জিংজহু শহরে একটি পুলিশ স্টেশনে রিপোর্ট হওয়া ঘরোয়া সহিংসতার সংখ্যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনগুণ বেড়েছ।”
সংস্থাটি কোভিড-১৯ এর ফলে নারীর প্রতি সহিংসতা বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য কারণের কথা উল্লেখ করেছে। এসবের মধ্যে প্রাথমিক কারণ হিসেবে স্ট্রেস, সামাজিক ও প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থার ব্যত্যয়, পরিষেবাগুলি গ্রহণের সুযোগ হ্রাস, সামাজিক বিচ্ছিন্নতার ফলে বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ হ্রাস প্রভৃতি নারীদের প্রতি সহিংসতার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ফ্রান্সে ঘরোয়া সহিংসতার ঘটনা এই সময়ে ৩০% বেড়েছে। তবে এর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
সাইপ্রাস ও সিঙ্গাপুরের ঘরোয়া নির্যাতনের হেল্পলাইনে কলের সংখ্যা প্রায় এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে।
আর্জেন্টিনায় ঘরোয়া সহিংসতা সম্পর্কিত জরুরি পরিষেবাগুলিতে যোগাযোগ ২৫% বেড়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম গার্হস্থ্য নির্যাতন দাতব্য সংস্থা রিফিউজ তার হেল্পলাইনে একদিনে ৭০০% কল বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে।
গবেষকরা বলছেন- বিশ্বজুড়েই কোভিড-১৯ এর ফলে পরোক্ষভাবে নারীদের প্রতি ঘরোয়া সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু এই মুহূর্তে সব তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই এই জরুরী অবস্থায় দায়িত্বশীল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে আরও সচেতন হতে হবে। তথ্যসূত্র: মেডিক্যাল নিউজ টুডে ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট
টাইমস/এনজে/জিএস