সামরিক বাহিনী ও পুলিশের মধ্যে পার্থক্য

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড আধা সামরিক বাহিনী দু'টি সাধারণ সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকে। তবে যুদ্ধকালীন সময়ে এই বাহিনীদ্বয় যথাক্রমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অধীনে পরিচালিত হয়।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় হল প্রধান প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান যেখানে সামরিক আইন তৈরি ও বাস্তবায়ন করা হয়। সামরিক নীতিমালা এবং কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা প্রদানের জন্য রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর একটি ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা কমিটি রয়েছে। এই উপদেষ্টা কমিটির সদস্যরা হলেন- বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর অন্তর্গত তিন বাহিনীর প্রধান, সামরিক বাহিনী বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিবগণ। এছাড়া এনএসআই, ডিজিএফআই, এবং বিজিবি এর সাধারণ পরিচালকগণ এই উপদেষ্টা পদের ক্ষমতাপ্রাপ্ত।

একটি রাষ্ট্রর সামরিক বাহিনী হলো ওই রাষ্ট্রের সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিরক্ষা ও আক্রমণকারী বাহিনী এবং এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সংস্থা সমূহ। রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রনীতির উপর তাদের অস্তিত্ব নির্ভর করে।

সামরিক বাহিনীর ব্যবহার শিক্ষাকে সামরিক বিজ্ঞান বলে। ব্যাপক অর্থে, সামরিক বিজ্ঞান আক্রমণ ও প্রতিরক্ষাকে তিনটি “স্তরে” বিবেচনা করে: স্ট্র্যাটিজি ,অপারেশনাল এবং কৌশল। তিনটি স্তরেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য শক্তি প্রয়োগ ব্যবস্থা আলোচিত হয়।

সামরিক বাহিনী জবাবদিহিতাসহ সবকিছুই তাদের নিজস্ব আইনের ধারায় পরিচালিত হয় যার সঙ্গে আমাদের প্রচলিত আইনের অনেক পার্থক্য রয়েছে। আর সামরিক বাহিনীর বাইরে যা কিছু আছে তার সবই বেসামরিক এবং বেসামরিক সব কিছু সিভিল প্রশাসন ও আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। সামরিক বাহিনীর আইন যেমন বেসামরিক ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না, তেমনি বেসামরিক বা সিভিল আইন সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী গঠিত হয়। এ কারণে এই দিনটিকে সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসাবে পালন করা হয়। এই দিনে বঙ্গভবন, ঢাকা, সামরিক বাহিনী সদর দপ্তর, ঢাকা সেনানিবাস এবং দেশের প্রতিটি সামরিক প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে।

অপরদিকে "শান্তি শৃঙ্খলা নিরাপত্তা প্রগতি" এই নীতিবাক্যকে ধারণ করে বাংলাদেশ পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের পুলিশ বাহিনীর মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জনগণের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, অপরাধ প্রতিরোধ ও দমনে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ পুলিশের ট্র্যাডিশনাল চরিত্রে বিরাট পরিবর্তন এনে দিয়েছে। শুধু আইন পালন আর অপরাধ প্রতিরোধ বা দমনই নয়, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গত এক দশকে জঙ্গিবাদ দমন এবং নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ পুলিশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। পুলিশের সদস্যরা তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা আর পেশাদারিত্ব দিয়ে অপরাধ মোকাবিলায় প্রতিনিয়ত সৃজনশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন। ঘুষ দুর্নীতির কারণে একসময়ে অভিযুক্ত এই বাহিনী তার পেশাদারিত্ব আর জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে জনগণের গর্বের বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।

বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের মহামারি রুখতে বাংলাদেশ পুলিশ সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে চলেছে। ইতিমধ্যে সাত জন পুলিশ সদস্য এই মহামারির কাছে হার মেনে মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া বহু সংখ্যক পুলিশ সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশের প্রধান হলেন মহা পুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি)। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশ সংগঠন বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, রেঞ্জ পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি), ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি), আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), র‌্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি), ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ ইন্টারনাল ওয়েবসাইট (পিআইও), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ট্রেনিং ইন্সটিটিউটস, ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং নৌ-পুলিশের শাখা রয়েছে। যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরাধ দমনে কাজ করে চলেছে।

লেখক: সংবাদকর্মী

Share this news on: