গাড়ির পার্টস দিয়ে ভেন্টিলেটর বানাচ্ছে আফগান মেয়েরা

যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা এমনিতেই নাজেহাল, তাই কোভিড-১৯ মহামারী সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দেশটিকে। রয়েছে প্রযুক্তির অভাব, প্রয়োজনীয় ভেন্টিলেটরের সরবরাহ নেই হাসপাতালে।

এমন অবস্থায় এগিয়ে এসেছে আফগানিস্তানের একটি কিশোরী রোবোটিক দল। এই কিশোরীরা ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত একটি বিশেষ প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতে নিয়েছিল। বর্তমানে তারা মে মাসের শেষের মধ্যে স্বল্প খরচে ভেন্টিলেটর সরবরাহের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

শনিবার পর্যন্ত আফগানিস্তানে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৯,২১৬ এবং রোগটিতে মৃত্যুর সংখ্যা ২০৫। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ পীরিত দেশটিতে ৩ কোটি ৮৯ লাখ মানুষের জন্য মাত্র ৪০০টি ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা রয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ বলছে, ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে দেশটির পক্ষে কোভিড-১৯ সামাল দেয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতে পারে।

কিশোরী রোবোটিক দলটির ১৭ বছর বয়েসী সদস্য নাদিরা রাহিমী তাদের কাজ সম্পর্কে বলেন, “যদি আমরা আমাদের প্রচেষ্টা দ্বারা কিছু জীবন বাঁচাতে পারি, তাই এই মুহূর্তে খুব গুরুত্বপূর্ণ।” এই কিশোরী ‘আফগান ড্রিমার’ হিসেবে পরিচিত, তার জন্মস্থান আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত প্রদেশে, যেখানে দেশটির প্রথম কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এটি বর্তমানে দেশটিতে করোনার হটস্পট হয়ে দাঁড়িয়েছে, এর অন্যতম কারণ প্রদেশটি ইরান সীমান্তে অবস্থিত।

নারী রোবোটিক দলটির সদস্যদের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। এরা ইতিমধ্যে টয়োটা করোলা ও হোন্ডা মোটর সাইকেলের পার্টস থেকে একটি প্রোটো-টাইপ ভেন্টিলেটর তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

দলটির দাবি, তাদের তৈরি এই ভেন্টিলেটর শ্বাসকষ্টে ভোগা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীকে তাৎক্ষণিক উপশম দিতে সক্ষম। বিশেষত প্রচলিত ভেন্টিলেটর না থাকলে এটি জরুরি অবস্থায় রোগীর জীবন বাঁচাতে কাজে লাগবে।

দলটির নেতা সুমাইয়া ফারুকী গণমাধ্যমকে বলেন, “আমি আমাদের ডাক্তার ও নার্সদের সহায়তা হয় এমন কিছু করতে পেরে খুবই গর্ব বোধ করছি, তারা আমাদের হিরো।”

কোভিড-১৯ সংক্রমণের ফলে বিশ্বজুড়ে ভেন্টিলেটর সংকট দেখা দিয়েছে। বিশ্ব বাজারে একটি ভেন্টিলেটরের আনুমানিক মূল্য বর্তমানে ৩০,০০০ ডলার থেকে ৫০,০০০ ডলার। কিন্তু আফগানিস্তানের এই কিশোরী যোদ্ধারা বলছে মাত্র ৬০০ ডলারেই তারা তাদের ভেন্টিলেটর সরবরাহ করতে পারবে।

তবে হেরাত প্রদেশ জুড়ে লকডাউন চলতে থাকার কারণে পার্টস সংগ্রহ করতে তাদের বেশ ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। ভেন্টিলেটর তৈরির কাজ প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ বলে জানিয়েছেন দলটির সদস্যরা। এখন শুধু এয়ার সেন্সরের কমতি রয়েছে।

ইতিমধ্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে তারা রোবোটিক দলটির সাহায্যে এগিয়ে আসে। তথ্যসূত্র: বিবিসি নিউজ

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: