ঘরবন্দি শিশুদের মানসিকতায় পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষ এখন ঘরবন্দি। শিশু-কিশোরদেরও বন্দিদশা। স্কুল-কলেজ বন্ধ। বাইরে যাওয়া বারণ। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ নেই। ফলে তাদের মানসিকতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অভিভাবকদের পাশাপাশি মনরোগ বিশেষজ্ঞরাও এই কথা বলছেন। কলকাতার এই সময় এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানায়।

এই সময়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশু-কিশোরদের অনেকেরই তাদের পড়াশোনায় একদম মন বসছে না। কারো কারো ঘুম অনিয়মিত। কেউ বা আবার হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে অন্যদের ওপর চড়াও হচ্ছে। খাবারদাবার ছুড়ে ফেলছে বা বাড়ির লোকজনকে আঁচড়ে-কামড়ে দিচ্ছে!

সম্প্রতি কলকাতার স্পিচ অ্যান্ড হিয়ারিং ইন্সটিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের (এসএইচআইআরসি) সমীক্ষায় শিশু-কিশোরদের এই নেতিবাচক আচরণ উঠে এসেছে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে ২৫০ জন শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ এপ্রিল থেকে ২৫ মে পর্যন্ত একটি সমীক্ষা চালানো হয়।

সংস্থার প্রজেক্ট ম্যানেজার অদিতি দে জানান, মূলত কথা বলা ও শোনার সমস্যা রয়েছে, অটিজম বা সেরিব্রাল পলসি আছে, এমন ২৫০ জন পড়ুয়ার মধ্যে সমীক্ষা চালানো হয়।

তিনি বলেন, “এই সমস্যাগুলো যে শুধু এই বিশেষ ধরনের কচিকাঁচাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, এমনটা নয়। অন্য শিশু-কিশোরদের মধ্যেও কমবেশি এই ধরনের প্রভাব বৈশিষ্ট্য এখন থাকা স্বাভাবিক।”

সমীক্ষা চলাকালে শিক্ষার্থীদের যেসব প্রশ্ন করা হয়েছিল, তার মধ্যে আছে; তারা কি জানে কেন বাড়িবন্দি থাকতে হচ্ছে? বাড়িতে থাকতে কি কোনো সমস্যা হচ্ছে? কীভাবে সময় কাটছে? লকডাউনে ঘুমের অভ্যাসে কি বদল হয়েছে? ভয় বা আতঙ্কের কোনো অভিজ্ঞতা হয়েছে? চারপাশের কোনো কিছু কষ্ট দিচ্ছে? ক্ষুধার ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন এসেছে? পড়াশোনা বা অন্য কাজে মনোনিবেশ করতে কি সমস্যা হচ্ছে?

এসব প্রশ্নের উত্তরের ভিত্তিতে মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীই পড়াশোনা বা আশপাশের অবস্থা নিয়ে চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন। ৩৪ শতাংশের মধ্যে টানা ঘরবন্দি থাকতে থাকতে এক ধরনের ভয় কাজ করছে। অনেক শিশু-কিশোরই বলেছে, বাইরে খেলতে যাওয়া বা স্কুলে যাওয়ার ব্যাপার না-থাকায় ঘুম অনিয়মিত হচ্ছে। কেউ বেশি ঘুমাচ্ছে, কারো ঘুমের সময়টাই বদলে গেছে।

সংস্থার কর্মকর্তা অমৃতা মিটার বলেন, ঘরবন্দি থাকায় সার্বিকভাবে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যেই একটা বড় প্রভাব ফেলছে।

শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সৌমিত্রশঙ্কর দত্ত বলেন, “সার্বিক যা পরিস্থিতি, তাতে তো প্রাপ্তবয়স্করাই ভীত। সেখানে শিশুরাও ভয় পাবে, চিন্তা করবে, সেটা স্বাভাবিক। তবে যেটা উচিত, সেটা হলো- এই ভয় কাটাতে তাদের মতো করে বয়সোপযোগী ভাষায় করোনা ও বর্তমান পরিস্থিতি তাদের বোঝানো দরকার।"

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: