স্কুলগামী কিশোরীদের প্রেগনেন্সি টেস্ট বাধ্যতামূলক!

ভালো স্কুলগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। কিন্তু পূর্ব আফ্রিকার প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র কেনিয়ায় স্কুলে ভর্তি হতে কিশোরীদের প্রেগনেন্সি টেস্টের (গর্ভধারণ পরীক্ষা) রিপোর্ট জমা দিতে হয়। বিষয়টি শ্রুতিকটু হলেও ঘটনাটি একদমই সত্য। সম্প্রতি দেশটির নারুক শহরে এই অদ্ভুত নিয়মটি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এতে বলা হয়েছে, স্কুলগামী কিশোরীদের প্রেগনেন্সি ও এফজিএম পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক।

এফজিএম হচ্ছে আফ্রিকার বেশ কিছু দেশে প্রচলিত একটি সামাজিক প্রথা, যেখানে জন্মের পর মেয়েদের জননাঙ্গের বিশেষ অংশ কেটে ফেলা হয়। যা আইনগতভাবে অবৈধ।

নারুক প্রশাসনের আইন অনুযায়ী স্কুলগামী কিশোরীদেরকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন (এফজিএম) ও গর্ভবতী কিনা তা পরীক্ষা করে স্কুল কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট দিতে হবে।

নারুক কান্ট্রি কমিশনার জর্জ নাতেম্বেয়া বলেন, যাদের এফজিএম হয়েছে বলে ধরা পড়বে, তাদেরকে পুলিশ প্রতিবেদন দিতে হবে। আর যারা গর্ভবতী বলে পরীক্ষায় ধরা পড়বে, তাদেরকে এই কাজের জন্য দায়ী পুরুষকে খুঁজে বের করতে হবে।

কেন এই অদ্ভূদ নিয়ম? এর উত্তরে জানা যায়, কেনিয়ার নারুক শহরে কিশোরীদের গর্ভবতী হবার হার সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া স্থানীয় মাসাই সম্প্রদায়ের মধ্যে অবৈধ এফজিএম প্রথার অনুশীলন ব্যাপক। যদিও ইতোমধ্যে ২০১১ সালে কেনিয়ায় এফজিএম প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়। তাই এফজিএম ও কিশোরী বয়সে গর্ভধারণ প্রতিরোধ করতেই সরকার এমন আইন করেছে বলে জানান কমিশনার জর্জ নাতেম্বেয়া।

তবে এফজিএম প্রতিরোধে চেষ্টা করার জন্য কর্তৃপক্ষের উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও স্কুলগামী কিশোরীদের এফজিএম ও প্রেগনেন্সি পরীক্ষার এই কৌশলের তীব্র সমালোচনা করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

তাদের মতে, এফজিএম ও কিশোরী গর্ভাবস্থার জন্য মূলত যেসব উপাদান দায়ী, সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে স্কুলগামী কিশোরীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার এমন কৌশল আদৌ কাজে আসবে না। বরং এ ধরনের উদ্যোগ স্কুলগামী কিশোরীদের জন্য চরম অপমানজনক ও মানবাধিকারের লংঘন।

মানবাধিকার কর্মী ফেলিস্টার গিতঙ্গা বলেন, এফজিএম প্রতিরোধে আমাদের ভিন্ন কোনো কৌশল গ্রহণ করতে হবে, যা কিশোরীদের গোপনীয়তার নিশ্চয়তা দেবে এবং এ তথ্যগুলো ব্যবহার করার জন্য আমাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকতে হবে।

একই সঙ্গে যেসব কিশোরীর এফজিএম হয়েছে বলে জানা যাবে তাদের পরিণতি কী হবে? তারা কি যথেষ্ট মনোসামাজিক সহযোগিতা পাবে? নাকি তাদেরকে স্কুলে ভর্তি হবার অনুমিতি দেয়া হবে না? এসব ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন এই মানবাধিকার কর্মী।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সারা দেশে ২৪ ঘণ্টায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ১৪৫৪ জন Jul 06, 2025
img
ছেলের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ক্ষমা চাইলেন বিজয় সেতুপাতি Jul 06, 2025
img
পাঠ্যপুস্তকে ভুল সংশোধনে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পরামর্শ চাইল শিক্ষা মন্ত্রণালয় Jul 06, 2025
img
এই বিপ্লব সফল হয়েছে সকল মানুষের রক্ত-ঘামের বিনিময়ে : আসিফ মাহমুদ Jul 06, 2025
নতুন অঙ্গ গজানোর প্রযুক্তি আবিষ্কার চীনে Jul 06, 2025
ইলিয়াস আলী গুমে শেখ হাসিনার হাত: এম এ মালেক Jul 06, 2025
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বিএনপি নেতার বাড়ি দখলের বিচার দিলেন এক ব্যক্তি! Jul 06, 2025
img
জন্মদিনে প্রকাশিত রণবীরের নতুন ছবির নজরকাড়া ফার্স্ট লুক Jul 06, 2025
img
ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপিই জিতবে : মান্না Jul 06, 2025
img
প্যান-ইন্ডিয়া দুই তারকা এক ফ্রেমে, উত্তেজনার ঝড় Jul 06, 2025
img
ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে দুই যাত্রীবাসের সংঘর্ষে আহত ৮ Jul 06, 2025
img
পালানোর আগে স্বজনদের খুদে বার্তা পাঠিয়েছিলেন হাসিনা : আলাল Jul 06, 2025
img
বিশেষ দিনের জন্য সুন্দর জামাগুলো সবসময়ই আলমারিতে রেখে দিতাম: সুনেরাহ বিনতে কামাল Jul 06, 2025
img
ভারতে হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক্স অ্যাকাউন্ট Jul 06, 2025
img
মবে জড়িতরা যতই শক্তিশালী হোক খুঁজে আনা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Jul 06, 2025
img
বলিউডে ফিরছেন প্রিয়াঙ্কা, দেখা মিলল রাজামৌলির সেটে Jul 06, 2025
আসছে ২ হাজার গুণ কম খরচে ২ শ গুণ বেশি গতির কোয়ান্টাম কম্পিউটার Jul 06, 2025
img
সন্তান আছে প্রমাণ দিতে পারলে ২৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করলেন তানজিন তিশা Jul 06, 2025
বৈষম্যবিরোধী নেতার বিরুদ্ধে চাঁদা না পেয়ে শ্রমিক লীগ নেতাকে ফাঁসানোর অভিযোগ Jul 06, 2025
ইসলামের নামে অধর্ম, হিংস রাজনীতি কায়েম হয়েছে Jul 06, 2025