স্ট্রেস মানব জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্যারিয়ার বা কাজের চাপ থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত-সামাজিক ইস্যু, হালের মহামারীসহ একাধিক কারণে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে। স্ট্রেস বা মানসিক চাপ নানাভাবে আমাদের দেহের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তবে, অনেকে স্ট্রেসের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন নয়, ফলে সময়মতো প্রতিকার বা চিকিৎসা গ্রহণ করেন না।
সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না হলে খুব বেশি চাপ থেকে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে পারে। এর ফলে হৃদরোগের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়। স্ট্রেস আমাদের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। অতএব, সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতা এড়াতে স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা
আমাদের দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং শরীরকে নানা রোগ-ব্যাধি ও অসুস্থতা থেকে রক্ষা করে। বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায় যে, অতিরিক্ত মানসিক চাপ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করতে পারে এবং এর ফলে মারাত্মক রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
ভারতের আর্টেমিস হসপিটালের ডাক্তার, মি. অক্ষয় কুমার এ বিষয়ে ব্যাখ্যা করে বলেন, “মনের অবস্থা অবশ্যই একজনের শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। মনের রাজ্যে ব্যত্যয় ঘটলে তা কেবল মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যই উদ্বেগজনক এমনটা নয়, শারীরিক স্বাস্থ্যের উপরও এটি প্রভাব ফেলে। স্ট্রেস আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয় এবং আপনার অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।”
তিনি আরও বলেন, “স্ট্রেসের কারণে, আমাদের দেহে উচ্চমাত্রার কোর্টিসল বা স্ট্রেস হরমোন উৎপাদন হয়, ফলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা পরিবর্তিত হতে পারে। এর ফলে আমাদের মস্তিষ্ক অ্যান্ডোক্রাইন সিস্টেমে প্রতিরক্ষা সংকেত প্রেরণ করে এবং আমাদের দেহ রোগ প্রতিরোধের জন্য বিশেষ হরমোন নিঃসরণের মধ্য দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। নিয়মিত এই হরমোনের নিঃসরণ ঘটলে তা আমাদের স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। যখন মানুষের মন চাপে থাকে তখন শরীর প্রয়োজনীয় লিম্ফোসাইটস (শ্বেত রক্তকণিকা) উৎপাদন করতে পারে না, ফলে আমাদের দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায়। কারণ জীবাণু ও অ্যান্টিজেন প্রতিরোধ করার জন্য শ্বেত রক্তকণিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।”
মানসিক চাপের ফলে সৃষ্ট অন্যান্য ক্ষতিকারক প্রভাব
আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য প্রধানত চাপের কারণে প্রভাবিত হয়। অনিয়ন্ত্রিত উদ্বেগ, হতাশা, দুঃখ, রাগ উদ্দীপনা ও অন্যান্য স্ট্রেস মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
স্ট্রেস আমাদের হজমেও প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে বমি বমি ভাব, বমি ও আরও অনেক ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। স্ট্রেসের কারণে ক্ষুধা মন্দা বা বদহজম জাতীয় সমস্যা দেখা দেয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
অতিরিক্ত চাপ দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি সৃষ্টি করতে পারে এবং এর ফলে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাজ সম্পাদনে অক্ষমতা তৈরি হবার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া স্ট্রেস অনিদ্রা, উচ্চ রক্তচাপের উচ্চ ঝুঁকি বৃদ্ধি, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, অম্বল ও ঘনঘন মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। তথ্যসূত্র: এনডিটিভি
টাইমস/এনজে/জিএস