বিসিএসে ব্যর্থ মাহীন বিশ্বখ্যাত ইনটেলস্যাটের ইঞ্জিনিয়ার, বেতন ১০ লাখ!

হাসান মাহীন। ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অনার্স করেছেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। মাস্টার্স করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্বপ্ন ছিলেন বিসিএস ক্যাডার হয়ে দেশসেবা করবেন। একবুক স্বপ্ন নিয়ে বিসিএস দিলেও সেখানে তিনি ব্যর্থ হন। ননক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় তার স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায়। এরপর জীবনের বাঁকে বাঁকে অনেক ব্যর্থতা এসেছে তার জীবনে। ব্যর্থতাকে ছাপিয়ে এখন তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্যাটেলাইট কোম্পানির সফল ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন। তার এখন মাসিক বেতন কত জানেন? ১২ হাজার ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় দশ লাখ টাকারও বেশি। জীবন সংগ্রামে সফল সেই হাসান মাহীন বাংলাদেশ টাইমসের সঙ্গে তার সফলতার গল্পটা শেয়ার করেছেন। চলুন সফল হওয়ার গল্পটা তার মুখ থেকেই শোনা যাক-

মাহীন বলেন, SSC, HSC দুটোতেই প্রথম বিভাগ ছিল আমার। ভর্তি পরীক্ষাতে ভাল বিশ্ববিদ্যালয় এর ভাল কোন সাবজেক্ট এ চান্স না পেয়ে, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য AIUB তে ভর্তি হই। অবশ্য আমার ইচ্ছা ছিলো মেডিকেলে পড়ার। কিন্তু সেখানেও ওয়েটিং লিস্ট
তবে সেটা নিয়ে আমার আফসোস নেই। AIUB থেকে মোটামুটি সিজিপিএ নিয়ে পাশ করে গ্রামীন ফোনে ইন্টার্নি হিসাবে জয়েন করি। এরপর কিছুদিন সেখানে কাজ করার পর কন্ট্রাক্ট শেষ হলে, কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

তারপর একটা মাল্টিন্যাশনাল গার্মেন্টে পরীক্ষা দেই। প্রায় ১১০০ প্রার্থীর মধ্যে ওরা ১২ জন পছন্দ করে গার্মেন্টের নাম ছিলো Lenny Fashion সম্ভবত। তো আমি ছিলাম ইঞ্জিনিয়ারিং টিমে। বেতন ১২০০০ টাকা। খাওয়া এবং যাতায়াত ফ্রি। ৬ মাসের ট্রেইনি পিরিয়ড। তো যাই হোক, জীবনে প্রথম গার্মেন্ট কোম্পানিতে পা রাখলাম। আমার ইন্ডিয়ান বস আমাকে খুব পছন্দ করেছিলেন। কিন্তু একদিন চাকরি করে অসম্ভব শব্দের কারণে সেই চাকরিটা আর করা হয়নি। আব্বা খুব রাগ করেছিলো সেদিন।

এরপর টানা এক বছর একটা ছোট সাবকন কোম্পানীতে BTS ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতাম ১৫০০০ টাকায় প্রতি মাসে। তারপর একটা বেসরকারি পাওয়ার প্ল্যান্ট জিবিবিতে পরীক্ষা দিলে, তারা আমাকে অনুগ্রহ করে নিয়ে নেয়। বেতন ছিল শিক্ষা নবীশ পিরিয়ডে ১২০০০ টাকা। এটা ২০০৯ সালের শুরুর কথা। তারপর সেখানেই কেটে গেল ৭ বছর।
শিক্ষানবীশ থেকে সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হলাম। বেতনও বাড়লো ভাল। এর মাঝে বুয়েটে ভর্তি হলাম ২০১২ সালে। বৃহস্পতিবার শিফটিং ডিউটি দুপুরে শেষ করে বগুড়া থেকে ঢাকা যেতাম।

সন্ধ্যায় ক্লাস করে রাতের বাসে আবার বগুড়া যেতাম। সকালে আবার অফিস করে আবার ঢাকা যেতাম। শুক্রবার আর শনিবার ক্লাস করে আবার বগুড়া যেতাম। এভাবেই ২ বছর কেটেছে। এরপর ৩ তম বিসিএস দিলাম চাকরি করতে করতে। আমি আমার জীবনে এতো পড়ালেখা করিনি যেটা বিসিএস এ করেছি।

সব পরীক্ষা ভালো হয়েছিল। ভাইভাও ভাল দিয়েছিলাম। কিন্তু রেজাল্ট যখন দিল, দেখা গেল আমি ননক্যাডারে মনোনীত হয়েছি। এতো খারাপ লেগেছিলো বলে বুঝাতে পারবোনা। অফিসের সবাই অনেক সান্তনা দিয়েছিল।

এরপর একটা জাপানিজ কোম্পানীতে পরীক্ষা দিয়ে জাপানে চলে আসি মেইন্ট্যানেন্স ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। সেখানে দুই বছর ৬ মাস থাকার পর চাকরি চেঞ্জ করি। তারপর আবার চাকরি চেঞ্জ করি, তখন অ্যামাজন আর ইন্টেলস্যাট ২ জায়গাতেই চাকরি পেয়েছিলাম। তবে ইন্টেলস্যাট বেছেনিয়েছিলাম কারণ এখানে স্পেস নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। এখন ইন্টেলস্যাটে নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছি।

এই চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে আমি যেটা করেছি, সেটা হল আমার সাবজেক্টের ওপর নিয়মিত পড়াশোনা। পাশাপাশি ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করেছি। আমার বর্তমান কোম্পানিতে জাপানিজ ভাষার দরকার না হলেও, আমি নিজের ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য চাকরির ফাঁকে ফাঁকে জাপানিজ স্কুলে ক্লাস করেছি এবং N3 Level পাশ করেছি।

চাকরির পাশাপাশি Networking এর জন্য CCNA, Gilat Sky Edge করেছি।
কারণ আমি নিজেকে প্রমাণ করতে চাই, আমি সক্ষম। ধৈর্য্য হারাইনি কখনও।
আমি কখনো অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করিনি। যা করেছি তা নিজের সাথে অনেক খারাপ পরিস্থিতি আমি পার করেছি। অনেকে অনেক কিছু বলেছে, আল্লাহর উপর ভরসা করেছি, আর চেষ্টা করে গেছি।

আলহামদুলিল্লাহ, আমি সন্তুষ্ট কিন্তু আমি এখনো চেষ্টা করি কিছু শেখার। আমি কিন্তু AIUB তে ভাল বিতার্কিক ছিলাম। জাপানে আসার পর বর্তমানে একটু আধটু প্লেন চালানো শিখছি এখন। যেটা নিতান্তই একটা আমার শখ বলতে পারেন।

টাইমস/জেকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ফের পাকিস্তানি তারকাদের নিয়ে কঠোর অবস্থানে ভারত Jul 07, 2025
img
৫ মাস পর জাতীয় নির্বাচন হবে ধরে নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Jul 07, 2025
img
বিশ্বে বায়ুদূষণে শীর্ষ শহর কুয়েত সিটি, ঢাকার অবস্থান ২৬তম Jul 07, 2025
img
গাজা ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রাণ গেল আরও ৮১ জনের Jul 07, 2025
img
দেশের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় জনগণ ঐক্যবদ্ধ : মির্জা ফখরুল Jul 07, 2025
img
দুপুরের মধ্যে দেশের ৭ জেলায় ৬০ কি.মি. বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস Jul 07, 2025
আ.লীগের নাম, তার ইতিহাস, তার অবদান ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়: রনি Jul 07, 2025
১০ মিনিটে গোটা বিশ্বের সারাদিনের সর্বশেষ আলোচিত সব খবর Jul 07, 2025
সীমান্তে দাদাদের বাহাদুরির দিন শেষ মন্তব্য নাহিদের Jul 07, 2025
img
টেক্সাসে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮২, নিখোঁজ ৪১ Jul 07, 2025
img
আজ ঢাকার যেসব এলাকায় ১১ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে Jul 07, 2025
‘সীমান্তে অনেক বাহাদুরি হয়েছে দাদাদের, সেই দিন শেষ’ Jul 07, 2025
img
‘আমরা আপনাদের নিরাশ করব না, বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যেতে চাই’ সংবর্ধনায় ঋতুপর্ণা-আফঈদার প্রতিশ্রুতি Jul 07, 2025
img
নারী ফুটবলারদের সম্মানে মধ্যরাতে সংবর্ধনা দিল বাফুফে Jul 07, 2025
img
বিএনপির দুইপক্ষের অস্থিরতা, চিলমারীতে পুলিশের টহল জোরদার Jul 07, 2025
img
স্মৃতির ওজন নিয়ে রাম কাপুরের মন্তব্যে তীব্র বিতর্ক Jul 07, 2025
img
মণিরত্নমের পর এবার রণবীরের সঙ্গে! কে এই সারা অর্জুন? Jul 07, 2025
img
পাকুন্দিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে এসিল্যান্ডসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা Jul 07, 2025
img
জীবন থাকতে বাংলার মাটিতে ফ্যাসিবাদের কোন ধরনের পুনর্বাসনই আমরা হতে দিব না: হাসনাত আবদুল্লাহ Jul 07, 2025
img
'তারেক রহমানের অপেক্ষায় গোটা বাংলাদেশ' Jul 07, 2025