আমাদের দেহের অন্যতম প্রধান সৌন্দর্যবর্ধক একটি উপাদান হলো চুল। তাই যখন আমাদের চুল পড়তে শুরু করে তখন চিন্তার কোন অন্ত থাকে না।
নারী-পুরুষ কিংবা বয়স নির্বিশেষে সকলেই চুল পড়া সংক্রান্ত জটিলতার শিকার হতে পারেন। আধুনিক জীবনের নানা চাপের কারণে চুল পড়া সমস্যাটি ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।
তবে বর্তমানে চলমান কোভিড-১৯ মহামারীর এই সময়ে চুল পড়া বৃদ্ধিও যেন একটি নতুন বাস্তবতা। আমরা অনেকেই এই অস্থির সময়ে চুল পড়া সমস্যাটির মুখোমুখি হচ্ছি। এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, আমরা সবাই মানসিকভাবে পর্যুদস্ত এবং এই স্ট্রেসের কারণে অপেক্ষাকৃত দ্রুত গতিতে আমাদের চুল উঠতে শুরু করেছে।
ধারণা করা হচ্ছে যে, বিশ্ব অর্থনীতি একটি গভীর মন্দার দিকে যাচ্ছে, যা থেকে পুনরুদ্ধারে কয়েক বছর সময় লাগবে। এছাড়াও আরও নানা কারণে আমাদের মানসিক চাপ এই মহামারী পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ তৈরির কারণ কী?
ভারতীয় কসমেটিক চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রিঙ্কি কাপুর এ বিষয়ে বলেন, “এটি একটি নজিরবিহীন সময় এবং এটি সকলের পক্ষেই কঠিন। বিশ্বের কেউ এবং কোন কিছুই এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিল না। এই মহামারীর ফলে সৃষ্ট সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, ভাইরাস সম্পর্কে উদ্বেগ, চাকরি এবং আয়ের বিষয়ে অনিশ্চয়তা, অনুশীলনের অভাব এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন প্রভৃতি সমস্ত কিছুই আমাদের স্ট্রেসের মাত্রা বাড়িয়ে তুলেছে।”
এই মানসিক চাপের কারণে টেলোজেন এফ্লুভিয়াম দেখা দিতে পারে। “গত কয়েক মাসে আরও বেশি রোগী তীব্র হারে চুল হারানোর অভিযোগে করছেন এবং তাদের অনেকের টাক পড়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ডা. কাপুর আরও বলেন, টেলোজেন এফ্লুভিয়াম স্ট্রেসের কারণে চুল পড়ার সবচেয়ে সাধারণ ধরণ, তবে এছাড়াও ট্রাইকোটিলোমানিয়া (চুল টেনে তোলার আকাঙ্ক্ষা) এবং অ্যালোপেসিয়া আইরিটা এর জন্য দায়ী হতে পারে।
আমাদের দেহ সার্ভাইভাল মুডে চলে যায় তখন কী ঘটে?
আমরা যখন মানসিক চাপে বা উদ্বেগে থাকি তখন আমাদের শরীর ‘সার্ভাইভাল’ (নিজেকে সংরক্ষণের তাগিদ) মুডে চলে যায়, এতে করে চুলের স্বাভাবিক চক্র পরিবর্তিত হয় এবং চুল পড়া বৃদ্ধি পায়। এই পর্যায়ে আমাদের শরীর তার সমস্ত উপাদান শুধুমাত্র টিকে থাকার জন্য অতি প্রয়োজনীয় মূল ক্রিয়াকলাপগুলি পরিচালনায় নিয়োজিত করে এবং ত্বকে ভাল রক্ত প্রবাহ, দৈহিক বৃদ্ধি এবং প্রজনন প্রভৃতি ক্রিয়াকলাপগুলি এ সময় অবহেলিত হয়।
তীব্র মানসিক চাপের ফলে চুলের ফলিক্যাল সমূহে অকালেই টেলোজেন নামক উপাদানের বৃদ্ধি ঘটে এবং শীঘ্রই চুল পড়তে শুরু করে। মনে রাখতে হবে যে, স্ট্রেসের প্রাথমিক লক্ষণ সমূহের মধ্যে একটি হলো চুল পড়া।
মানসিক চাপ ও উদ্বেগের ফলে সৃষ্ট চুল পড়া ঠেকাতে কি করবেন?
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ এক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। তাই নিয়মিত শরীরচর্চা, মেডিটেশন ও মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন করা যেতে পারে।
এছাড়াও প্রচুর প্রোটিন সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য এই ধরণের চুল পড়া কমাতে সহায়তা করে। আয়রন ও ওমেগা সমৃদ্ধ খাবার যেমন- ব্ল্যাক কোকো পাউডার, ফ্লেক্সসিডস, কুমড়ো ও তিলের বীজ, বাদাম এবং আখরোট জাতীয় খাবার খান।
চুলে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি নারিকেল এবং হিবিস্কাস তেল ব্যবহার করতে পারেন। মাথার ত্বক পরিস্কার রাখতে নিয়মিত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।
তবে আশার কথাটি হলো মানসিক চাপ ও উদ্বেগের ফলে ঝড়ে যাওয়া চুল স্থায়ী ভাবে বিলীন হয়ে যায় না। টেলোজেন এফ্লুভিয়ামের কারণে চুলের শেড স্থায়ী নষ্ট হয় না- ফলে এক বা দুই সপ্তাহ পরে কিংবা পরের মাসে আবারও চুল গজাতে শুরু করে। তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
টাইমস/এনজে/এসএন