নিয়মিত হাতের কাজ করার ফলে যদি কব্জিতে বা হাতের আঙ্গুলে চাপ সৃষ্টি হয় তবে আপনি ধরে নিতে পারেন আপনার কার্পাল টানেল সিনড্রোম রয়েছে। এই রোগটির ফলে হাতের কবজিতে ব্যথা এবং আঙ্গুলের মধ্যে জড়তা বা অসাড়তা দেখা দেয়।
এটা যেন বেড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে আশার কথা হলো, কিছু নির্দেশনা মেনে চললে এর উপসর্গগুলো দূর হবে।
কার্পাল টানেল সিন্ড্রোম মধ্যমা স্নায়ুতে চাপের কারণে ঘটে। এই স্নায়ু আপনাকে আপনার বৃদ্ধ আঙুল বাদে সমস্ত আঙ্গুলের মধ্যে আড়ষ্ট এবং ব্যথার অনুভূতি দেয়।
মধ্যমা স্নায়ু যখন আমাদের কব্জি অতিক্রম করে তখন এটি সরু পথ দিয়ে যায়। যার নাম কার্পাল টানেল- এটি হাড় এবং লিগামেন্ট দিয়ে তৈরি। কব্জি কোন কারণে ফুলে গেলে এই টানেলটি চেপে যায় এবং উপসর্গ দেখা দেয়।
কার্পাল টানেল সিনড্রোম প্রতিরোধের নিশ্চিত কোনো উপায় নেই। কিন্তু আপনি যদি আপনার হাত এবং কবজির উপর চাপ কমাতে পারেন তাহলে এই উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
হালকাভাবে স্পর্শ করার চেষ্টা করুন
প্রায়শই আমাদের প্রতিদিনের রুটিনে আমরা কিছু কাজ করতে অভ্যস্ত হয়ে যাই যেটা সম্পর্কে আমরা কখনো ভাবি না। অনেক সময় কোনো কাজ সম্পন্ন করার জন্য যতটুকু শক্তি প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি প্রয়োগ করে থাকি।
উদাহরণস্বরূপ- আপনি আপনার কিছু সরঞ্জামকে খুব শক্ত করে ধরেন কিন্তু সেটা হালকা করে ধরলেই হতো। আবার আপনি হয়তো আপনার কম্পিউটারের কি-বোর্ড খুব জোরে চাপছেন, সেটা আলতো করে চাপলেই হতো।
বিরতি নিন
আপনার হাত এবং কব্জি বাকাতে হয় এমন কাজ করার সময় মাঝে মধ্যে বিরতি নিন। আদর্শ বিরতির সময় হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। বিরতি দেয়াটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যখন আপনি এমন কাজ করেন যেখানে হাত কম্পিত হয় এবং প্রচুর শক্তি ব্যয় করতে হয়।
একটু পর পর হাতকে প্রসারিত করা
দিনের যেকোনো সময় যখন আপনি বিরতি নিবেন চেষ্টা করবেন এই সাধারণ নিয়মগুলো মেনে চলতে-
হাত বা কব্জিকে নিরপেক্ষ রাখুন
যখন আপনি আপনার কব্জিটিকে সোজা এবং নিরপেক্ষ অবস্থানে রাখবেন তখন সেটা মধ্যমা স্নায়ুর উপর চাপ কমাবে।
ঘুমানোর সময় কব্জিতে ব্রেস পড়ুন যেটা আপনার হাতকে সোজা এবং নিরপেক্ষ রাখতে সহায়তা করবে। এই ব্রেস আপনার উপসর্গগুলো কমিয়ে আনতেও সাহায্য করবে
একটু পর পর হাত পরিবর্তন করুন
বার বার একই হাতের ব্যবহার এড়িয়ে চলার চেষ্ঠা করুন। উদাহরণস্বরূপ- আপনার যেকোনো কাজ যদি আপনি আপনার ডান হাত দিয়ে করে থাকেন তাহলে সেটা বাম হাত দিয়ে করার চেষ্ঠা করুন। আপনার কাজের ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব দুই হাতের ব্যবহার করুন।
দেহ বিন্যাস ঠিক রাখুন
হাত এবং কব্জি দিকে মনোযোগ দেয়াই স্বাভাবিক। তবে,আপনার বাকী শরীর কিভাবে থাকছে সেটিও এক্ষেত্রে প্রভাব রাখতে পারে।
সঠিক ভঙ্গিতে না বসলে আমাদের কাঁধ সামনের দিকে ঝুঁকে থাকে। এর ফলে আমাদের ঘাড় এবং কাঁধের পেশি সংকুচিত হয়, কব্জি ও ঘাড়ের নার্ভের সমস্যা বৃদ্ধি পায়। তাই দেহ বিন্যাস সঠিক রাখুন।
উষ্ণ থাকুন
আপনি যখন ঠাণ্ডায় থাকেন তখন ব্যথাটা খুবই খারাপ ভাবে বাড়তে থাকে। তখন গ্লাভসে আপনার হাত এবং কব্জিকে উষ্ণ রাখতে সহায়ক হতে পারে।
আপনার সুপারভাইজারের সাথে কথা বলুন
যদি আপনার কাজ আপনার লক্ষণগুলোকে বাড়িয়ে দেয় তবে আপনার ম্যানেজারকে বলে কাজের স্থান পরিবর্তন করুন। আপনার লক্ষণগুলো যদি বাড়তে থাকে তাহলে ম্যানেজারের সাথে কথা বলে আপনার ওয়ার্কস্টেশনের সেটআপ থেকে শুরু করে সরঞ্জামগুলো পরিবর্তন করুন।
আপনি আপনার সহকর্মীদের মতোই সমানভাবে কাজ করতে সক্ষম হবেন যদি আপনি একই কাজ বার বার করা থেকে বিরত থাকতে পারেন।
আপনি যদি কম্পিউটারে কাজ করেন তাহলে যা করতে পারেন-
একজন পেশাগত থেরাপিস্ট দেখান
অবস্থার উন্নতি না হলে পেশাদার থেরাপিস্ট এর সহায়তা নিতে পারেন।
তথ্যসূত্র: ওয়েবএমডি।
টাইমস/সুমন/এনজে