পালিয়ে যাওয়া সেই ছেলেটি এখন নটরডেমের জনপ্রিয় শিক্ষক!

“একদিন বাবার সাথে অভিমান করে বাড়ি থেকে চলে যাই। দূরের একটা বাড়িতে থাকতাম। ওই বাড়ির কয়েকটা ছোট বাচ্চা পড়াতাম। খাওয়া দাওয়া ওখানেই ছিল। মাই বয়, আমার এখনো মনে পড়ে আমি একবার ১৫ দিন দাঁত ব্রাশ করি নি। টুথপেস্ট কেনার মত টাকাও ছিল না আমার।

নটরডেম কলেজে যখন পড়তাম আমার সব বই কেনার টাকাও ছিল না। বিকেল বেলা ক্লাস শেষে কলেজ লাইব্রেরিতে বসে ম্যাথ প্রশ্নগুলো খাতায় তুলে নিয়ে যেতাম। রাতে ওই গুলো বাসায় প্র্যাকটিস করতাম। একটা ক্যালকুলেটর কেনার মত টাকাও ছিল না আমার।

কলেজের কুইজ পরীক্ষাগুলোতে আমার অনেক কষ্ট হত। পাশের বন্ধুর ক্যালকুলেটরের আশায় বসে থাকতাম। কখন বন্ধুর অংক করা শেষ হবে তখন আমি ওর ক্যালকুলেটর নিয়ে অংক করব! অনেক সময় সম্ভব হত আবার কোন কোন সময় তাও সম্ভব হত না। এমনটা হওয়ায় স্বাভাবিক তাই না মাই বয়? বিকালবেলা ক্লাস শেষ করে সন্ধ্যায় মগবাজার দুইটা টিউশনি করাতাম। টিউশনি শেষ করে রাতে বাসায় ফিরতাম।

পরের দিনের পড়ার জন্য যখন টেবিলে বই নিয়ে বসতাম তখন ক্লান্তিতে আমার চোখে কান্না চলে আসতো। আমার অনেক বেশি কষ্ট হতো বিশ্বাস কর মাই বয়। আমি পড়া শেষে অনেক বেশি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে যেতাম একটি সুন্দর সোনালি সকাল দেখার অপেক্ষায়। মাই বয়, আজকে আল্লাহ আমাকে অনেক সম্পদশালী করেছেন। অনেক টাকার মালিক আমি আলহামদুলিল্লাহ।

আমার বাবার কাছে যারা ঋণ পেত আমি সবার ঋণ পরিশোধ করেছি। আমি এখন ১৫০০ টাকার ব্রাশ আর ৫৮০ টাকা দামের টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজি। আমি এখন চাইলেই ফ্ল্যাট কিনতে পারি। আমি চাইলেই একসাথে ৫ ভরি স্বর্ণ কিনতে পারি। আমি চাইলেই দামী গাড়ি কিনতে পারি।

আল্লাহ আমাকে এগুলো কেনার সামর্থ্য দিয়েছেন। মাই বয়, আমি তোমাদের সাথে অহংকার করছি না। আমি তোমাদেরকে অনুপ্রাণিত করছি। আমার জীবনের এসব চড়াই উতরাই শুনে তোমাদের মধ্য থেকেই অনেকেই প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি আর উদ্দম নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা পাবে। আমি জানি এখানে তোমাদের মধ্যে অনেকেই হবে বিশ্বখ্যাত ডাক্তার, অনেকেই হবে নাসার বিখ্যাত বিজ্ঞানী, অনেকেই হবে বুয়েটের বিখ্যাত ইঞ্জিনিয়ার আবার অনেকেই হবে অক্সফোর্ড-ক্যামব্রিজের জনপ্রিয় অধ্যাপক। তোমাদের সাথে কথা বলার সময় সম্মান দিয়ে বলতে হয়। তাই তো তোমাদের কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমাকে দু'বার ভাবতে হয়। মাই বয় কখনো হতাশ হবে না। এই যে বাবু মনমরা হয়ে বসে থাকবে না। সারাক্ষণ সতেজ আর প্রাণচাঞ্চল থাকবে বাবু।

প্রচণ্ড উদ্যম আর দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে তোমাকে সামনের জঞ্জাল পথটায় এগিয়ে যেতে হবে। তুমি পারবে বাবু! আমি জানি। তোমাকে পারতেই হবে। আমার আস্থা আছে তোমার উপর। আমি জানি তুমিই পারবে। মনে রাখবে মাই বয়, বৈধভাবে সফলতার কোন শর্টকাট রাস্তা নেই। "তোমার যে সামান্যটুকু আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকো। সুদিন একদিন আসবেই আসবে"

লেখক : শিক্ষক, গণিত বিভাগ, নটরডেম কলেজ

 

Share this news on: