বর্তমান আধুনিক সমাজে সময়ের সাথে মানুষের একাকীত্ব দিন দিন বেড়ে চলেছে। এই একাকীত্ব মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বয়ে নিয়ে আসতে পারে নানা অভিশাপ। সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রায় অর্ধেক মানুষ মাঝে মধ্যে বা সর্বদা একাকীত্ব অনুভব করেন।
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একাকীত্ব আরও বেশি। অনেকেই মনে করেন তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একাকীত্বের পেছনে প্রযুক্তি, ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার অনন্য ভূমিকা রয়েছে।
বিচ্ছিন্নবোধের মতো নেতিবাচক মানসিক প্রভাব ছাড়াও একাকীত্ব শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যও নানা কুফল বেয়ে আনে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এর সাথে ওজন বৃদ্ধি ও করোনারি হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি বৃদ্ধির মতো নানা নেতিবাচকতার সম্পর্ক রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজ লন্ডন কর্তৃক আয়োজিত এক নতুন সমীক্ষায় নিঃসঙ্গতার সাথে যুক্ত বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, যারা নিঃসঙ্গ থাকেন তাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় বেশি থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, নিঃসঙ্গতা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ। এই সমীক্ষায় বয়স, লিঙ্গ, জাতিস্বত্তা, সম্পদ, ধূমপান, শরীরচর্চা, শরীরের ওজন, অ্যালকোহল গ্রহণ, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের মতো বিষয়গুলোও বিবেচনা করা হয়েছে। গবেষণাপত্রটি ডায়াবেটোলজিয়া জার্নালে প্রকাশিত হয়।
সমীক্ষাতে পঞ্চাশ বছরের বেশি বয়স্ক ৪ হাজার ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের গড় বয়স ছিল ৬৫ বছর। ১২ বছর ধরে চলা এই গবেষণা চলাকালীন সময়ে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৬৪ জন বা প্রায় ৬% টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন।
গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ড. রুথ হ্যাকেট বলেন, “আপনি যদি দীর্ঘকাল ধরে একাকীত্বে ভুগতে থাকেন, সময়ের সাথে সেটি মানসিক চাপ বা স্ট্রেস সৃষ্টি করে। এর ফলে দেহে বেশ কিছু নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে, যা থেকে ডায়াবেটিস টাইপ-২ রোগটিতে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়।”
তবে গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন করা, একা বসবাস করা ও একাকীত্ব অনুভবের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। একাকীত্ব ঠিক কিভাবে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে তা নির্দিষ্ট করতে আরও বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করা হয়।
তথ্যসূত্র: মেডিক্যাল নিউজ টুডে
টাইমস/এনজে