করোনাকে অবহেলা কেন?

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনে করোনা ছড়ানোর পর থেকে আস্তে আস্তে পুরো পৃথিবী সংক্রমিত হয়েছে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে। আমাদের দেশে চলতি বছরের মার্চ মাসে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। মার্চের শেষের দিকে দেশব্যাপী অঘোষিত লকডাউন শুরু হয়। কিন্তু আমরা প্রথম থেকেই দেখছি, সাধারণ জনগনের মধ্যে করোনাকে সেভাবে পাত্তা না দেয়ার প্রবণতা।

কোভিড-১৯ এর প্রকোপ শুরু হতে এখন পর্যন্ত দেখা যায়, আমাদের দেশের জনগণের মধ্যে অসচেতনতা সবচেয়ে বেশি। প্রথমদিকের লকডাউনে সরকারের প্রচেষ্টায় মানুষজনকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল, কিন্তু সে সময়ও অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করেননি। আর বর্তমান সময়ের চিত্র তো আরো ভিন্ন। বাইরে বের হলেই আশেপাশের মানুষ দেখে বোঝার উপায় নেই যে, আমাদের দেশে করোনা মহামারীর প্রকোপ চলছে। করোনার জন্য না আছে সচেতনতা, না আছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখে মাস্ক। যেখানে করোনা প্রতিরোধে আমাদের সকলেরই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।

সরকারি হিসেব অনুযায়ী, দেশে দৈনিক করোনায় মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। আর সেই সাথে কমছে করোনার বিষয়ক সচেতনতা। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এর কারণ খুঁজতে গেলে আমাদের করোনা পূর্ববর্তী চিত্র মনে করা উচিত। কেন আমাদের দেশের জনগণ করোনায় মৃত্যু কে অবহেলা করছে?

প্রথমত: এর জন্য দায়ী আমাদের অনিশ্চিত জীবন ব্যবস্থা। যেখানে আমাদের দেশে মৃত্যু অনেক সহজ বিষয় এবং সেই মৃত্যু যেকোনো ভাবেই হতে পারে। যেমন- সড়ক দুর্ঘটনা, পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে, ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে, ঘরে নির্যাতনে, চিকিৎসার অভাবে, চিকিৎসকের অবহেলা ইত্যাদি। আমাদের দেশে এসব কারণে মৃত্যুর ক্ষেত্রে কারো কোনো জবাবদিহিতা নেই। যে কারণে একের পর এক দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু, আগুন লেগে মৃত্যু, চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই।

পরিসখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে মোট ৪৭০২ টি সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে মোট ৫২২৭ জন নিহত হয়েছে। গত এক দশকে আগুন লেগে দেশে প্রায় ২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কাজেই এ দেশে স্বাভাবিক মৃত্যু চেয়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু বেশি হওয়ায় মানুষের মাঝে মৃত্যু নিয়ে তেমন উৎকণ্ঠা নেই। নিশ্চিত জীবনের নিশ্চয়তা না থাকায় তাই মানুষ করোনা মহামারীকেও মানুষ স্বাভাবিকভাবে নিয়েছে।

দ্বিতীয়তঃ দরিদ্রতা মানুষকে করোনার ভয়াবহতা ভুলিয়ে দিয়েছে। আমাদের দেশে ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। যার প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ অতিদারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করছে। সে হিসেবে আমাদের ১৬ কোটি মানুষের সোয়া তিন কোটি মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এই গরীব দেশের মানুষদের জীবনে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন কাজ করা অতীব জরুরী। একদিন কাজ না করলে এই সোয়া তিন কোটি মানুষের পেটে খাবার যায় না। তাই এসব মানুষ করোনাকে পাত্তা না দিয়ে জীবন বাঁচানোর তাগিদে কাজে নামতে বাধ্য হয়েছে।

আরেকটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অনেক গবেষক মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যুহার বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ করোনাকে অবহেলা ও ইচ্ছাকৃত অসচেতনতা। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা দেখছি, করোনা কি ভয়াবহ অবস্থা রুপ নিয়েছে সেখানে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো আমাদের দেশেও মানুষ ইচ্ছাকৃত অসচেতনতাকে প্রাধান্য দিয়ে করোনাকে কিছু মনেই করছেন না। এটা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে। তাই করোনায় বাংলাদেশে মৃত্যুহার কমানোর জন্য আমাদের উচিত আরও স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কারণ করোনায় একটি একটি করে মৃতের সংখ্যা বাড়লেও আমাদের জীবন থেকে একজন একজন করে আপনজন হারিয়ে যাচ্ছে। একটি পরিবারের উপার্জনক্ষম মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে। যার পরিণতি ভবিষ্যতে আমাদের ভোগ করতেই হবে। লেখক- উম্মে কুলসুম শিলা, শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

 

টাইমস/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সুখ-দুঃখ চক্রের মতো ঘোরে: সোহিনী সরকার Nov 08, 2025
img
৪ লাখে চলছে না, ভরণপোষণে ১০ লাখ চান শামির সাবেক স্ত্রী! Nov 08, 2025
img
জানা গেল ২০২৬ সালের রোজা ও ঈদের সম্ভাব্য তারিখ Nov 08, 2025
img
ওয়াহাব রিয়াজকে ঘিরে চলা জল্পনা দূর করল পিসিবি Nov 08, 2025
img
ভাগ্য নয়, পরিশ্রমই আসল শক্তি বললেন টাইগার শ্রফ Nov 08, 2025
img
রাতের তাপমাত্রা কমবে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কমতে পারে দিনের তাপমাত্রাও Nov 08, 2025
img
গরম গরম জিলাপির নরম শরম রাজনীতি : রনি Nov 08, 2025
img
৩ দাবিতে শহীদ মিনারে অবস্থান প্রাথমিক শিক্ষকদের Nov 08, 2025
img
রংপুরের হয়ে বিপিএলে মাতাবেন মোস্তাফিজ Nov 08, 2025
img
কলেজের মেয়েরা প্রতি সপ্তাহেই প্রেমিক বদলায়: রাবিনা Nov 08, 2025
img
১,০০০তম ম্যাচের সামনে গার্দিওলা, 'অবিশ্বাস্য এক পথচলা' নিয়ে আবেগঘন মন্তব্য Nov 08, 2025
img
ফিনালিসিমায় মেসি-ইয়ামাল মুখোমুখির তারিখ জানাল ফিফা Nov 08, 2025
img
ধানের শীষ রেকর্ড সংখ্যক ভোটে বিজয়ী হবে: নজরুল ইসলাম আজাদ Nov 08, 2025
img

হংকং সিক্সেস

কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৫৪ রানে হারল বাংলাদেশ Nov 08, 2025
img
ইরান শান্তি চায়, কিন্তু চাপে নতি স্বীকার করবে না : পেজেশকিয়ান Nov 08, 2025
img
শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের 'নির্যাতনের' অভিযোগে জি-২০ সম্মেলন বর্জন ট্রাম্পের Nov 08, 2025
img
ভিএপিটি অডিট করে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে নির্দেশ ইসির Nov 08, 2025
img
মালিতে ৫ ভারতীয় অপহরণের শিকার Nov 08, 2025
img
২ দিনের সফরে পাবনায় পৌঁছেছেন রাষ্ট্রপতি Nov 08, 2025
img
বেলুচিস্তানে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প Nov 08, 2025