নিজের স্তন কেটে প্রতিবাদ করেছিলেন যে নারী

ব্রিটিশ শাসিত ভারতের ৫৫০টি প্রিন্সলি স্টেটের একটি ছিল ত্রাভানকোর। বর্তমানে এটি কেরেলা রাজ্যের অন্তর্গত। সেই রাজ্যের রাজা দলিত বা নিচু বর্ণের নারীদের উপর মুলাক্কারাম বা স্তনকর (ব্রেস্ট ট্যাক্স) নামে এক অদ্ভুত কর চালু করেছিল।

ত্রাভানকোর রাজ্যে বসবাসকারী দলিত মহিলারা তাদের স্তন ঢেকে রাখতে পারতেন না। ফলে লোকসম্মুখেও তারা স্তন অনাবৃত রেখেই চলাফেরা করতে বাধ্য হতেন।

কোন দলিত মহিলা যদি তার স্তন আবৃত রাখতে চাইতেন তাহলে তাকে উচ্চমাত্রায় কর দিতে বাধ্য করা হতো। এমনকি কর সংগ্রাহকেরা স্তনের আকার বিবেচনা পূর্বক করের পরিমাণ নির্ধারণ করতেন। এটি ইতিহাসে স্তনকর বা ব্রেস্ট ট্যাক্স নামে পরিচিত।

রাজ্যের পোশাক পরিধানের নিয়ম অনুযায়ী উঁচু বর্ণ ও নিচু বর্ণের লোকদের পোশাক আলাদা করে নির্ধারণ করা ছিল। যাতে করে খুব সহজেই তাদেরকে আলাদা করা যায়। উচ্চ বর্ণের মহিলাদের স্তন এবং কাঁধ আবৃত করে চলাফেরার অধিকার ছিল।

এই সামাজিক বঞ্চনা ও অবিচার তথা বর্ণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন নাঙ্গেলি নামের এক প্রতিবাদী নারী। চেরথালা গ্রামের বাসিন্দা নাঙ্গেলি এজাভা গোত্রের সদস্য। থিয়া, নাদার এবং অন্য সব দলিত নারীদের মতো এজাভা নারীদেরকেও স্তনকর দিতে হতো।

কিন্তু অন্য সব নারীদের মতো নাঙ্গেলি মুখ বুজে এই অন্যায় করপ্রথা স্বীকার করে নিতে অস্বীকৃতি জানান। স্তনকর অমান্য করে নাঙ্গেলি তার স্তন আবৃত রাখতে শুরু করেন। একই সাথে কোন রকম কর প্রদান থেকে বিরত থাকেন।

যখন কর সংগ্রাহক এ সংবাদ শুনতে পেলেন তখন তিনি নাঙ্গেলির বাড়িতে যান এবং তাকে আইন অমান্য করতে নিষেধ করেন। কিন্তু নাঙ্গেলি স্তনকর প্রদান করতে অস্বীকার করেন এবং প্রতিবাদ স্বরূপ নিজের স্তন কেটে ফেলেন।

এতে করে রক্তক্ষরণে নাঙ্গেলির মৃত্যু হয়। নাঙ্গেলির সাথে জ্বলন্ত চিতায় ঝাপ দিয়ে তার স্বামী চিরুকান্দান আত্মহত্যা করেন। এই দম্পতিটি নিঃসন্তান ছিল। এই ঘটনার পরে তাদের আত্মীয়-স্বজন সবাই গ্রাম ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল।

নাঙ্গেলির এই আত্মত্যাগের কথা খুব বেশি লোকের কাছে এখনও পৌঁছায়নি। ১৯ শতকের দলিত নারী হিসেবে নাঙ্গেলি অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তার এই ত্যাগ নারীদের অধিকার আদায়ের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা।

কেরেলার শ্রী সংকরাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার ইকোলোজি এন্ড দলিত স্টাডিজ বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. শিবা কেএম এর মতে, “ত্রাভানকোরের সকল মহিলাদের উদ্দেশ্যেই এই নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ এবং এটি শেষ পর্যন্ত রাজাকে স্তনকর পরিহার করতে বাধ্য করেছিল।”

কারণ এরপর থেকে স্তনকরের বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ হতে থাকে এবং ১৮৫৯ সালে শেষ পর্যন্ত রাজা স্তন কর প্রত্যাহারে বাধ্য হন।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

 

টাইমস/এনজে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রেমিট্যান্স উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি : সমাজকল্যাণমন্ত্রী Apr 18, 2024
img
ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা Apr 18, 2024
img
গবেষণায় বাংলাদেশে বিক্রি হওয়া শিশুখাদ্য সেরেলাক নিয়ে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য Apr 18, 2024
img
আ.লীগের এমপি-মন্ত্রীর সন্তান-স্বজনদের উপজেলা নির্বাচন করতে মানা Apr 18, 2024
img
আইপিএল থেকে ডাক পেয়েও যে কারণে যেতে পারেননি শরিফুল Apr 18, 2024
img
রাত পোহালেই শিল্পী সমিতির নির্বাচন, কে লড়ছেন কার বিপক্ষে Apr 18, 2024
img
লিটারে ৪ টাকা বেড়েছে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম Apr 18, 2024
img
মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা বেতনের কর্মচারী ছিলেন জিয়াউর রহমান : পররাষ্ট্রমন্ত্রী Apr 18, 2024
img
অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা দেশের মানুষের জন্য কোনো কাজ করেনি: প্রধানমন্ত্রী Apr 18, 2024
img
ব্যবসায়ী নাসিরের মামলা : পরীমণিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি Apr 18, 2024