ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রেখে গ্রাহকদের জিম্মি করা হলে, সরকারিকরণের কথা ভাবতে হবে

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) অভিযানে ঝুলন্ত তার অপসারণের প্রতিবাদে রবিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সারাদেশে ইন্টারনেট ও কেবল সংযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ও কেবল অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) নেতৃবৃন্দ। তবে আইএসপিএবি ও কোয়াব এর সাথে ডিএসসিসি’র যে সমন্বয়হীনতার সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য কিন্তু কোনভাবেই সারাদেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ও কেবল ব্যবহারকারীরা দায়ী নন। অথচ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গ্রাহকদেরই জিম্মি করে ডিএসসিসি’র কাছ থেকে দাবি আদায় করতে চাইছে!

ঝুলন্ত তার অপসারণ নিয়ে ডিএসসিসি’র সাথে যে সমন্বয়হীনতার তৈরি হয়েছে সেরকম অচল অবস্থা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সাথে নেই। ডিএসসিসি’র সাথে সমন্বয়হীনতার কারণে সারাদেশের গ্রাহকদেরকে ভোগান্তিতে ফেলা হবে, ডিএনসিসি যে ইতিবাচক সমন্বয় সাধন করলো তার সুফলও কি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে? ডিএসসিসি’র ঝাল তো সারাদেশের গ্রাহকদের উপর মেটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আইএসপিএবি ও কোয়াব নেতৃবৃন্দ, কিন্তু ডিএনসিসি’র এই ইতিবাচক মনোভাবের কী প্রতিদান দিলেন তারা?

হঠাৎ করে তার কেটে দেয়া হলে সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানকে নানা সমস্যায় পড়তে হবে, গ্রাহকদেরকেও ভোগান্তির শিকার হতে হবে এবং একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে ঝুলন্ত তার অপসারণের জন্য অবশ্যই সুন্দর সমন্বয় প্রয়োজন। সে জন্য দুপক্ষকেই আন্তরিক হতে হবে। আলোচনার পথে সেটা হতে পারে কিংবা আইনি পথেও সমাধান হতে পারে। সে রাস্তা তাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে, এই দায়িত্ব গ্রাহকদের নয়, আমাদের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দেয়াও চলবে না।

যে সব ব্যবসায়ী নিজের স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটলে সরাসরি গ্রাহকদের জিম্মি করার কথা ভাবেন তাদের কাছে ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষিত থাকে না। বিশেষ করে ইন্টারনেটের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একটি সেবা খাত এমন লোকদের হাতে একেবারেই নিরাপদ নয়।

বর্তমানের এই কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন সময়ে ইন্টারনেটের উপর মানুষের নির্ভরশীলতা অনেকাংশে বেড়ে গেছে। অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে, বেচা-কেনা হচ্ছে, অনেক অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনলাইনের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, এমনকি চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রেও ইন্টারনেটের ব্যবহার ইতিবাচক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

গোটা দেশ যখন মহামারীর বিরুদ্ধে লড়ছে, সেখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট। এমন একটি জটিল পরিস্থিতিতে দিনের সব থেকে ব্যস্ত সময়টায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হবে! এই সিদ্ধান্ত শুধু গ্রাহকদের সাথে নয়, সমগ্র জাতির সাথে এবং রাষ্ট্রের সাথেও বেঈমানির সমতুল্য। এই পরিস্থিতিতে একটি বিষয় ক্রমেই অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে উঠছে, আর তা হলো ব্যবসায়ীদের হাতে ইন্টারনেট সেবা থাকলে গ্রাহকদের স্বার্থ তথা জাতীয় স্বার্থ ক্রমাগত হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।

একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে ইন্টারনেট প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের জন্যই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে এই মহামারীর সময়ে আমরা দেখেছি শিক্ষা, চিকিৎসা কিংবা ন্যায় বিচারের মতো অসংখ্য সেবা ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যাচ্ছে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা খাত, যেখানে সরাসরি জাতীয় স্বার্থ জড়িয়ে আছে সেটা কি চাইলেই বন্ধ রাখা যায়?

ইন্টারনেট তো মূলত সরকার নিয়ন্ত্রণ করে, এখানে গ্রাহক পর্যায়ে সেবা পৌঁছানোর দায়িত্ব রয়েছে ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে। এইসব ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মান নিয়েও গ্রাহক পর্যায়ে রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ-অসন্তুষ্টি। স্থান ভেদে রয়েছে খরচের আকাশ-পাতাল ফারাক, প্রতিশ্রুত ইন্টারনেট গতিও অধিকাংশ সময় পাওয়া যায় না।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের প্রসারের আগে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়ার এই দায়িত্ব পালন করেছে টিএন্ডটি। কর্তৃপক্ষের স্বদিচ্ছা থাকলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও গ্রাহক পর্যায়ে সরকারি ব্যবস্থাপনাতেই পৌঁছে দেয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে একদিকে যেমন কমে যাবে গ্রাহক ভোগান্তি আর ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ, তেমনি এরকম জিম্মি নাটকেরও মুখোমুখি হতে হবে না।

লেখক: তরুণ সাংবাদিক।

(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিসিবির কাছে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কোয়াবের দাবি Sep 16, 2025
img
ভেনেজুয়েলার নৌযানে মার্কিন হামলা, নিহত ৩ Sep 16, 2025
img
ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড পেলেন রাকসুর শিবির প্যানেলের দ্বীপ Sep 16, 2025
img
কাতারে আর হামলা করবে না নেতানিয়াহুর দেশ : ট্রাম্প Sep 16, 2025
img
লুট করা জিনিস কেনা বা বিক্রির বিরুদ্ধে সতর্কতা জারি নেপালে Sep 16, 2025
img
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান মালয়েশিয়ার Sep 16, 2025
img
ঢাকায় বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস Sep 16, 2025
img
ফিরছে চ্যাম্পিয়নস লিগ, ফুটবল-ক্রিকেটে জমজমাট রাত Sep 16, 2025
img
ইইউ বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ Sep 16, 2025
img
হামাস যেখানেই থাকুক, হামলা করা হবে : নেতানিয়াহু Sep 16, 2025
img
দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে কিনশাসা, ঢাকার অবস্থান ২৩তম Sep 16, 2025
img
শরীর নয়, মন ভালো রাখতেও জরুরি সঠিক খাবার Sep 16, 2025
img
১৬ সেপ্টেম্বর: ইতিহাসে এই দিনে আলোচিত কী ঘটেছিল? Sep 16, 2025
img
শেরপুরে জাতীয় পরিচয়পত্র করতে এসে রোহিঙ্গা যুবক আটক Sep 16, 2025
img
সাতক্ষীরায় ১ দিনে পানিতে ডুবে কিশোরসহ প্রাণ হারাল ৪ Sep 16, 2025
img
চ্যাম্পিয়নস লিগ শুরুর আগে সুসংবাদ পেল রিয়াল মাদ্রিদ Sep 16, 2025
img
৩ জেলার ডিসিকে প্রত্যাহার Sep 16, 2025
img
৩ চাকার যানবাহনগুলো সঠিক গবেষণার মাধ্যমে সমাধানের তাগিদ Sep 16, 2025
img
খুলনায় আড়াই মণ হরিণের মাংসসহ আটক ১ Sep 16, 2025
img
ভালুকায় শ্রমিকলীগের ২ নেতা গ্রেপ্তার Sep 16, 2025