টাকনুর উপরে কাপড় পড়ার বৈজ্ঞানিক উপকারিতাও রয়েছে

ইসলাম বিশ্বজনীন এক চিরন্তন ও শাশ্বত পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। ইসলামে রয়েছে নারীর সম্মান, মর্যাদা ও সব অধিকারের স্বীকৃতি, রয়েছে তাদের সতীত্ব সুরক্ষা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপক কর্মসূচী। তাদের সম্মান, মর্যাদা ও সতীত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতেই ইসলাম তাদের উপর আরোপ করেছে হিজাব বা পর্দা পালনের বিধান। নারীর পর্দা পালনের পাশাপাশি পুরুষের জন্য সতরের সীমারেখা নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত। মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র কুরআন মাজীদের কয়েকটি সূরায় পর্দা-সংক্রান্ত বিধান দেয়া হয়েছে। পর্দার বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা সব শ্রেণীর ঈমানদার নারী-পুরুষকে সম্বোধন করেছেন। নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ করেছেন তিনি যেন তাঁর স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে এবং মুমিন নারীদেরকে চাদর দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত রাখার আদেশ দেন। কিছু আয়াতে উম্মুল মুমিনীনদেরকেও সম্বোধন করেছেন, কোনো কোনো আয়াতে সাহাবায়ে কেরামকেও সম্বোধন করা হয়েছে।

কুরআন মাজীদে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে মুসলিম নারী ও পুরুষের জন্য পর্দার বিধান রয়েছে। এটি শরীয়তের একটি ফরয বিধান। একজন মুসলিম হিসেবে এ বিধানের প্রতি সমর্পিত থাকা ঈমানের দাবি। ইসলামের এই বিধানগুলো শুধু আমাদের আখেরাতে নাজাতেরই উপায় নয়, আমাদের দুনিয়ার জীবনের শান্তি, স্বস্থি ও পবিত্রতারও রক্ষাকবচ। কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অমুসলিমদের প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে আমরা নিজেদের আদর্শ ত্যাগ করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছি।

কুরআন মাজীদের অনেকগুলো আয়াতে এই বিধান দেয়া হয়েছে। সুতরাং কোনো ঈমানদারের পক্ষে এই বিধানকে হালকা মনে করার সুযোগ নেই। সূরা আহযাবের ৫৯ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন- “হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” সূরা আহযাবের ৩৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন- “তোমরা তাঁদের (নবী পত্নীদের) নিকট কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাও। এই বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।” একই সূরার ৩৬ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন- “আল্লাহ এবং তার রাসূল কোনো বিষয়ের নির্দেশ দিলে কোনো মু’মিন পুরুষ কিংবা কোনো মু’মিন নারীর জন্য সে বিষয় অমান্য করার কোনো অধিকার থাকে না। আর যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করে সে অবশ্যই পথভ্রষ্ট।” সুতরাং মুসলমান হিসেবে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- দুই শ্রেণীর দোযখী এখনও আমি দেখিনি। (কারণ তারা এখন নেই, ভবিষ্যতে আত্মপ্রকাশ করবে) এক শ্রেণী হচ্ছে ওই সব মানুষ, যাদের হাতে ষাঁড়ের লেজের মতো চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা মানুষকে প্রহার করবে। (দ্বিতীয় শ্রেণী হচ্ছে) ওই সব নারী, যারা হবে পোশাক পরিহিতা, নগ্ন, আকৃষ্ট ও আকৃষ্টকারী; তাদের মাথা হবে উটের হেলানো কুঁজের ন্যায়। এরা জান্নাতে যাবে না এবং জান্নাতের খুশবুও পাবে না অথচ জান্নাতের খুশবু তো এত এত দূর থেকে পাওয়া যাবে। (সহিহ মুসলিম ২/২০৫, হাদীস : ২১২৮)

ইসলামে নারীর পর্দা পালনের পাশাপাশি পুরুষের জন্য সতরের সীমারেখা নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত। হযরত আলী রা: থেকে বর্ণিত। রাসূল সা: বলেছেন- “নিজের উরু কাউকে দেখাবে না এবং কোনো জীবিত অথবা মৃত ব্যক্তির উরুর প্রতি দৃষ্টিপাত করোনা।” (আবু দাউদ: ৩১৪০)

পুরুষের সতর মানার মধ্যে একটি হল টাকনুর উপরে কাপড় পড়া। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেছেন- পোশাকের যে পরিমাণ অংশ টাকনুর নীচে যাবে, সে পরিমাণ অংশ জাহান্নামে যাবে।অন্য এক হাদিসে রয়েছে- আল্লাহ তায়ালা তিন শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের মধ্যে এক শ্রেণী হল- যারা তাদের পরিধেয় কাপড় টাকনুর নীচে পরিধান করে।

টাকনুর উপরে কাপড় পড়ার বৈজ্ঞানিক উপকারিতাও রয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞান বলছে- পুরুষের গোড়ালির ভেতর প্রচুর পরিমাণে সেক্সচুয়াল হরমোন রয়েছে।গোড়ালি কাপড় দ্বারা ঢাকা থাকলে এই হরমোন আলো ও অক্রিজেন পায় না। এতে করে হরমোন বাড়তে পারেনা। এছাড়া টাকনুর নিচে কাপড় থাকলে তাতে রাস্তায় পড়ে থাকা বিভিন্ন নোঙড়া বস্তু কাপড়ে লাগতে থাকে। যার মাধ্যমে রোগবালাই ছড়াতে পারে।বর্তমান করোনাকালে রাস্তার ধুলোবালিসহ ক্ষতিকর জীবাণু থেকে মুক্তি পেতে টাকনুর উপর কাপড় পড়াই ভালো।

অথচ, আমাদের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের একজন সরকারি কর্মকর্তা তার অধীনস্থদের আলোর পথ দেখাতে ধর্মীয় এই বিধান মেনে চলার নির্দেশনা দিয়ে তাকে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। সম্প্রতি আমরা দেখতে পেলাম- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে কর্মরত মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের পর্দা মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম।তিনি বিজ্ঞপ্তিতে- ইন্সটিটিউটে কর্মরত পুরুষদের টাকনুর ওপরে এবং নারীদের হিজাবসহ টাকনুর নিচে কাপড় পড়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে পর্দা মেনে চলারও নির্দেশ দেন।ধর্মীয় বিধান মেনে চলার এই নির্দেশনা দেয়ার পর থেকে কিছু গণমাধ্যম ও এক শ্রেণীর নামধারী মুসলমান তার পেছনে উঠেপড়ে লেগে যায়। এমনকি স্টাফদেরকে সরকারি কর্ম ঘণ্টায় তাদেরকে কাজের মধ্যে রাখতে অফিস চলাকালীন মোবাইল সাইলেন্ট অথবা অফ করে রাখার নির্দেশনা নিয়েও ওইসব মিডিয়া ও মানুষ সমালোচনা করেন। অথচ অভিযোগ রয়েছ- সরকারি এই কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের কর্ম ঘণ্টাগুলো মোবাইল বা ফেসবুক চালিয়ে নষ্ট করতেছেন।এসব গণমাধ্যম ও অতি উৎসাহী মানুষের আলোচনা-সমালোচনায় বিষয়টি সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নজরে আসে। তারপর মন্ত্রী বিষয়টির ক্ষেত্রে জরুরি পদক্ষেপ নিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে উভয় জায়গা থেকেই জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের পরিচালককে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়া হয়।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা হিসেবে ইসলামের বিধান মেনে চলার নির্দেশনা দিয়ে তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ পেতে হল। এরপর বাধ্য হয়েই নতুন এক বিজ্ঞপ্তিতে ডা. মুহাম্মদ আব্দুর রহিম আগের নির্দেশনা বাতিলের কথা জানান। নতুন বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, ‘উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত সংবাদটির জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং সবার কাছে অনিচ্ছাকৃত এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে দুঃখ প্রকাশ করছি।’

ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অমুসলিমদের প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে কিছু নামধারী মসলমানের চাপের মুখে এ রকম দুঃখ প্রকাশ সত্যিই বেদনার। আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দান করুন।

 

লেখক: ইকবাল আহমেদ, গবেষক

 

টাইমস/আরএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আইনের বাধায় সেনা প্রত্যাহার কার্যক্রম স্থগিত ট্রাম্পের Nov 16, 2025
img
জামিনের পর হিরো আলম, ‌‘আমাকে কেউ জিরো বানাতে পারবে না’ Nov 16, 2025
img
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ: অ্যাডহক কমিটি না থাকলে সভাপতির ভূমিকা ইউএনও-ডিসির Nov 16, 2025
img

পুলিশের কাছে নিখোঁজ তরুণীর বার্তা

আমাকে খুঁইজেন না, বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে আছি এবং ভালো আছি Nov 16, 2025
img
বক্স অফিসে অজয়-রাকুলের ছবি কেমন জমলো? Nov 16, 2025
img
নির্বাচনে যারা পেশিশক্তি দেখাবে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে : ইসি সানাউল্লাহ Nov 16, 2025
img
বিআইআইএসএস-এর নতুন ডিজি রিদওয়ানুর রহমান Nov 16, 2025
img
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে চাচ্ছে: রিজভী Nov 16, 2025
img
এআই প্রযুক্তিতে বানানো ভুয়া ভিডিও নিয়ে সতর্ক করল অর্থ মন্ত্রণালয় Nov 16, 2025
img
কাফনের কাপড়ে রাস্তায় শুয়ে রিজভীকে আটকে দিলেন নেতাকর্মীরা Nov 16, 2025
img
২১ নভেম্বর ঢাকা সেনানিবাসে যান চলাচল সীমিত থাকবে Nov 16, 2025
img
জুলাই সনদ ও গণভোট ঝুঁকিতে পড়তে পারে : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি Nov 16, 2025
img
হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায় আগামীকাল, ন্যায়বিচার চাইলেন মির্জা ফখরুল Nov 16, 2025
img
ফার্স্ট লুকেই ঝড় তুলেছে মহেশ-প্রিয়াঙ্কার সিনেমা Nov 16, 2025
সুখী পরিবার দুটি গুণ | ইসলামিক টিপস Nov 16, 2025
img
মিচেলের সেঞ্চুরিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাল নিউজিল্যান্ড Nov 16, 2025
img
ইবির পরীক্ষার হল থেকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকর্মীকে থানায় সোপর্দ Nov 16, 2025
বাজরাঙ্গি ভাইজানের মুন্নি এবার দক্ষিণ ভারতের বড় পর্দায় Nov 16, 2025
সঞ্জয় কাপুরের মৃত্যু পরবর্তী সম্পত্তি বিবাদে হাইকোর্টের কড়া নজর Nov 16, 2025
যেখানেই গিয়েছি, সব জায়গায় নিজেকে উন্নতি করার চেষ্টা করি : সাইফ হাসান Nov 16, 2025