ধূমপানের অপকারিতার শেষ নেই, এই বদভ্যাসটির ফলে হৃদরোগ, ক্যান্সার, ফুসফুসের রোগ ও উচ্চ রক্তচাপ সহ নানা ধরণের জটিল সব রোগের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। তাই নিজেকে সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান রাখতে ধূমপান ত্যাগ করা অতি প্রয়োজনীয়। ধূমপান ত্যাগ করার মাত্র এক ঘণ্টা পর থেকেই আমাদের দেহ এর সুফল পেতে শুরু করে।
আসুন ধূমপান ত্যাগের পর দেহের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নিই-
১ ঘণ্টা পর
শেষবার ধূমপান করার ২০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মধ্যে হৃদপিণ্ডের স্পন্দন স্বাভাবিক হয়ে আসে, রক্তচাপ কমতে শুরু করে এবং রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করে।
১২ ঘণ্টা পর
ধূমপান ত্যাগ করার ১২ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের দেহ ধূমপানের ফলে রক্তে বেড়ে যাওয়া ক্ষতিকর পদার্থ কার্বন মনোক্সাইড পরিষ্কার করে। এর ফলে রক্তে কার্বন মনোক্সাইডের মাত্রা কমে গিয়ে স্বাভাবিক হয়, অন্যদিকে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে যায়।
১ দিন পর
ধূমপান ছেড়ে দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমতে শুরু করে। ধূমপানের ফলে সৃষ্ট উচ্চ রক্তচাপ কমে আসে, উপকারী কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমতে থাকে। দেহে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে কর্ম উদ্দীপনা বাড়তে শুরু করে।
২ দিন পর
ধূমপানের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ুপ্রান্ত সুস্থ হয়ে উঠতে থাকে এবং ঘ্রাণ ও স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
৩ দিন পর
রক্তে নিকোটিনের পরিমাণ প্রায় শূন্য হয়ে যায়, রক্তে নিকোটিন না থাকা স্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক। তবে এই পর্যায়ে বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে যেমন- মাথা ব্যথা, অস্বস্তিকর অনুভূতি, মেজাজ পরিবর্তন প্রভৃতি।
১ মাস পর
এক মাসের মধ্যে ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত হয়। এর ফলে কাশি এবং ঘন ঘন শ্বাস নেয়ার প্রবণতা কমে যায়।
১-৩ মাস পর
বেশ কয়েক মাস ধরে রক্ত সঞ্চান বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং দেহ ধূমপানের ফলে সৃষ্ট ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার প্রক্রিয়া চালিয়ে যায়।
৯ মাস পর
ফুসফুসের কার্যকারিতা অনেকটাই উন্নত হয়ে ওঠে। ধূমপানের ফলে হ্রাসপাপ্ত ফুসফুসের সিলিভা (চুল সদৃশ উপাদান) আবারো ফিরে আসে, ফলে ফুসফুসে সংক্রমণ কমে যায়। ফুসফুসে সংক্রমণ জনিত রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কমে যায়।
এক বছর পর
এক বছরের মধ্যে ব্যক্তির জটিল হৃদরোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি ৫০% পর্যন্ত কমে যায় এবং পরবর্তী আরো এক বছর ধরে তা কমতে থাকে।
৫ বছর পর
সিগারেটের ধোয়ার সাথে দেহে অনেক ক্ষতিকর পদার্থ প্রবেশ করে যা রক্ত জমাট হওয়া বা দানা বাঁধার সম্ভাবনা ও শিরা-উপশিরা সংকোচন ঘটায়, ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। ৫ বছর সময়ের মধ্যে দেহ নিজেকে পুনরুদ্ধার করে এবং রক্তনালীগুলি আবারো প্রসারিত হয়। ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে আসে।
১০ বছর
ধূমপান ত্যাগকারী ব্যক্তির ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রায় ৫০% হ্রাস পায়। এছাড়া ধূমপানের ফলে সৃষ্ট অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকিও উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসে।
১৫ বছর
হৃদরোগ ও প্যানক্রিয়েটিক ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে গিয়ে অধূমপায়ী ব্যক্তির সমান মাত্রায় নেমে আসে।
২০ বছর
ধূমপান জনিত কারণে মৃত্যু, ফুসফুসের রোগ, গলা-মুখ-ফুসফুসের ক্যান্সার ও প্যাক্রিয়েটিক ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত হ্রাস পায়, কখনোই যারা ধূমপান করেননি তাদের সমান হয়ে যায়।
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, ধূমপান ত্যাগ করলে শরীর প্রাকৃতিক উপায়ে নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে শুরু করে। ফলে সময়ের সাথে দেহ ধূমপান করার পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসে।
তথ্যসূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে।
টাইমস/এনজে