টিনজাত খাবার কতটা স্বাস্থ্যকর?

সামরিক বাহিনীর জন্য সরবরাহ করা খাদ্য যাতে নষ্ট না হয়, সেই কৌশল উদ্ভাবন করতে পারলে ১২হাজার ফরাসী মুদ্রা উপহার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন নেপোলিয়ন।

১৭৯৫ সালে তিনি এই পুরস্কারটি নিকোলাস অ্যাপার্টকে দিয়েছিলেন। যিনি কাঁচের বোতলে ফোটানো পানিতে ডুবিয়ে রেখে মাংস ও খাদ্যদ্রব্য প্রক্রিয়াজাত করার কৌশল আবিষ্কার করেছিলেন।

একসময় ফরাসীদের এই গোপন রহস্যটি জেনে যায় ইংরেজরা। ১৮১০ সালে পিটার ডুরান্ড ক্যানে খাবার সংরক্ষণের জন্য ধাতব পদার্থের ব্যবহার শুরু করেন। সেই থেকে টিনজাত খাবারের প্রচলন শুরু, যা আজও অব্যাহত রয়েছে।

আজ বিশ্বের অধিকাংশ দেশের টিনজাত খাবার বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এটা কতটা স্বাস্থ্যকর?

বিশেষজ্ঞদের মতে, টিনজাত খাবার প্রক্রিয়াকরণের সময় অতি উচ্চ তাপমাত্রায় চাপ প্রয়োগ করে খাদ্যকে ক্যানে বদ্ধ করে সংরক্ষণ করা হয়। দৈনন্দিন রান্না করার ন্যায় এ প্রক্রিয়ায়ও খাদ্যের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।

টাটকা ও হিমায়িত খাদ্যের তুলনায় টিনজাত খাবারে পুষ্টিগুণ কম বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তবে তাজা ও হিমায়িত খাদ্যের সঙ্গে টিনজাত খাদ্যের তুলনা সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত নেই বলে মনে করেন ব্রিটিশ নিউট্রেশন ফাউন্ডেশনের পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ব্রিজেট বেনেলাম।

তিনি বলেন, সাধারণত আমরা বিভিন্ন ধরনের টিনজাত খাবার খাই। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরণের ফল, সবজি, আলু, মটর, ডাল, মাছ, স্যুপ, সিদ্ধ বিচি, মরিচসহ বিভিন্ন রেডিমেড খাবার।

ব্রিজেটের মতে, এসব খাদ্যের কিছু কিছু আবার তাজা ও হিমায়িত খাদ্যের চেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। বিশেষ করে টিনজাত তৈলাক্ত মাছ খুবই স্বাস্থ্যকর। তাছাড়া মটরশুঁটি, ছোলা, ডাল, ইত্যাদি আমিষ এবং আঁশের উত্তম উৎস, যাতে খুব অল্প মাত্রায় চর্বি রয়েছে।

তবে টিনজাত খাবার প্রক্রিয়ার সময় পানিতে দ্রবণীয় কিছু ভিটামিন খাদ্য থেকে চলে যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন, যা সুস্থ ত্বক, রক্তনালী ও অস্থি এবং স্নায়ুতন্ত্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যদিকে বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্য হিমায়িত করে রাখার ফলে যেভাবে পুষ্টিগুণ কমে যায়, একইভাবে টিনজাত প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণের ফলেও পুষ্টিগুণ সমানপরিমাণে হ্রাস পায়।

ব্রিজেট বলেন, টিনজাত খাবারের ক্ষেত্রে ভিটামিন সি এবং থায়ামিনের ন্যায় কিছু পুষ্টিগুণ হারিয়ে যায়, যা রান্নার বেলায় ঘটে থাকে। তবে স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব পড়বে কি না তা ব্যক্তির খাদ্যাভাসের উপর নির্ভর করবে।

তবে যেহেতু সব ধরণের খাদ্যই টিনজাত খাবারে পাওয়া যায় না, তাই কেবল টিনজাত খাবারের উপর নির্ভরশীল না থেকে বিভিন্ন ধরণের খাদ্য খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

একইভাবে ব্রিটিশ ডায়েটিক অ্যাসোসিয়েশনের বিশেষজ্ঞ ফ্রাংকি ফিলিপ বলেন, টিনজাত খাবার খেয়ে হয়ত কিছু দিন ভালো থাকা যাবে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে টিনজাত খাবার খাওয়া সীমিত করা উচিত। সেইসঙ্গে, কী ধরনের ক্যান নির্বাচন করছেন এ বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে বলে তিনি পরামর্শ দেন।

 

 টাইমস/এএইচ/জিএস 

Share this news on:

সর্বশেষ