গলাব্যথা থেকে ক্যান্সারের ঝুঁকি

যাদের দীর্ঘ দিন ধরে গলাব্যথা, সেই সঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্ষিপ্ত, গলাধঃকরণে জটিলতা কিংবা কানের পর্দায় যন্ত্রণা তাদের ক্যান্সার হবার ঝুঁকি রয়েছে।

তাই বর্তমানে যেসব রোগী একটানা দীর্ঘদিন গলাভাঙা বা অবর্ণনীয় গলাব্যথার সমস্যায় ভুগছেন, তাদেরকে গলা বা বাকযন্ত্রের ক্যান্সারের পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

একটানা দীর্ঘদিন বাকযন্ত্রে কর্কশতা থাকলে এসব রোগীদের বাকযন্ত্রের ক্যান্সার পরীক্ষা করা উচিত বলে গবেষকরা মনে করেন।

সম্প্রতি ব্রিটিশ জার্নাল অব জেনারেল প্র্যাকটিস-এ প্রকাশিত এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে এসেছে।

তবে এ ব্যাপারে ভয় না পেতে রোগীদের পরামর্শ দিয়েছেন ক্যান্সার রিয়ার্চ ইউকের গবেষক উয়েলিন লু। তিনি বলেন, সাধারণ গলাব্যথা বা গলাভাঙা সরাসরি বাকযন্ত্রের ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।

এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণাদলের প্রধান গবেষক ড. এলিজাবেথ শেফার্ড বলেন, এই প্রথমবারের মত বাকযন্ত্রের ক্যান্সারের জন্য দায়ী গুরুত্বপূর্ণ সব উপসর্গকে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

‘নতুন এ গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে- এখানে দেখা গেছে যে, বাকযন্ত্রের কর্কশতা বা গলাভাঙা গলায় ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী। তবে এটা তখনই মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে, যখন গলাভাঙার সঙ্গে একটানা দীর্ঘদিন গলা ব্যথা থাকে’- বলেন ড. শেফার্ড।

অন্য একজন গবেষক অধ্যাপক উইলি হ্যামিল্টন বলেন, আমরা সাধারণত সবাই বিভিন্ন সময় গলাব্যথায় ভুগে থাকি। তাই বলে যেকোনো সাধারণ ব্যথাই ক্যান্সারের জন্য দায়ী নয়।

বরং যাদের দীর্ঘদিন অস্বাভাবিক গলাব্যথা থাকে এবং এটা এতই তীব্র হয় যে, রোগীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়, সেক্ষেত্রে ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

‘তবে যখন একটানা দীর্ঘদিন গলাভাঙা, সেই সঙ্গে তীব্র গলাব্যথা, শ্বাস-প্রশ্বাস ও গলাধঃকরণে সমস্যা একসঙ্গে হবে তখনই এটা ক্যান্সারের উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করা হবে”-বলেন অধ্যাপক হ্যামিল্টন।

এ ব্যাপারে সঠিকভাবে রোগীকে নির্বাচন করে চিকিৎসার জন্য অন্যত্র সুপারিশ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে অনেক আগে থেকেই রোগীর ক্যান্সার সনাক্ত করা যাবে এবং রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পাবে বলে মনে করেন ড. শেফার্ড।

উল্লেখ্য, সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও পুরুষদের ক্ষেত্রে অতি সাধারণ একটি রোগ বাকযন্ত্রের ক্যান্সার। কারণ এটা ধূমপান ও মাদক সেবনের সঙ্গে সম্পর্কিত।

প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা গেলে এর চিকিৎসা ও নিরাময় সম্ভব। এ রোগের চিকিৎসায় সাধারণত রেডিওথেরাপি, সার্জারি কিংবা ক্যামোথেরাপি পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

তবে ক্যান্সার মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেলে আংশিক বা সম্পূর্ণ বাকযন্ত্র সরিয়ে ফেলতে হতে পারে। ফলে এসব রোগী আর স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে বা শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে পারবে না।

এ ক্ষেত্রে কথা বলার জন্য কণ্ঠনালীতে থ্রট-ইমপ্ল্যান্ট বা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস 

Share this news on: