রফতানিকারকদের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল

রফতানি খাত দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি। তাই পর্যাপ্ত তারল্য নিশ্চিত করতে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করে‌ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

রফতানি সহায়ক প্রাক-অর্থায়ন না‌মের এই তহবিল বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়‌নে গঠন করা হ‌য়ে‌ছে। রফতানিকারকরা এই তহবিল থে‌কে ৪ শতাংশ সুদ বা মুনাফায় অর্থ নি‌তে পার‌বেন।

রোববার (১ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ক্ষেত্রে ভবিষ্যত্ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গতিশীল রাখার লক্ষ্যে রফতানি খাতকে সহায়তা প্রদান করা প্রয়োজন। তাছাড়া, কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক অভিঘাত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর রফতানি কার্যক্রম বেগবান করার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। বৈশ্বিক বিরূপ অর্থনৈতিক অবস্থার বিপরীতে রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর অভিঘাত সহনশীল করার পাশাপাশি দেশের রফতানিমুখী শিল্পের বিকাশ ও প্রসারের চলমান ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে এ খাতের জন্য পর্যাপ্ত তারল্য নিশ্চিত করতে সহজ শর্তে একটি রফতানি সহায়ক প্রাক-অর্থায়ন তহবিল (ইএফপিএফ) গঠন করা হলো।

অনুসরণীয় নীতিমালা
তহবিলের আকার ১০ হাজার কোটি টাকা। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল। স্থানীয় রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানি/স্থানীয় সংগ্রহের বিপরীতে আলোচ্য রফতানি সহায়ক তহবিল হতে প্রাক-অর্থায়ন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।
গ্রাহক পর্যায়ে ঋণপ্রাপ্তির যোগ্যতা
যে কোনো প্রত্যক্ষ রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠান এবং প্রচ্ছন্ন রফতানিকারকের অনুকূলে অর্থায়নের নিমিত্তে এ তহবিল উন্মুক্ত থাকবে। এই তহবিলের অর্থ রফতানিকারকের ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্রের মাধ্যমে উত্পাদনের কাঁচামাল আমদানির জন্য ব্যবহার করা যাবে। ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্রের বিপরীতে স্থানীয় উৎপাদনকারী সরবরাহকারী কাঁচামাল আমদানির জন্যও এই তহবিল থেকে ঋণসুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।
তবে, ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী কোনো খেলাপি গ্রাহক বা গ্রাহক প্রতিষ্ঠানকে এই তহবিলের আওতায় ঋণসুবিধা দেওয়া যাবে না। এই তহবিল থেকে ঋণ সুবিধাগ্রহণকারী কোনো গ্রাহক উক্ত নির্ধারিত রফতানির বিপরীতে রফতানিমূল্য অপ্রত্যাবাসিত থাকলে সংশ্লিষ্ট রফতানিকারক এই তহবিলের আওতায় নতুনভাবে আর কোনো ঋণসুবিধা প্রাপ্য হবেন না। গ্রাহক কর্তৃক রফতানি ঋণপত্রের বিপরীতে কাঁচামাল আমদানির নিমিত্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য কোনো তহবিল থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত হলে এ তহবিলের আওতায় কোনো ধরনের ঋণসুবিধা প্রাপ্য হবে না। কোম্পানি/প্রতিষ্ঠানের রফতানি আদেশ ব্যাংকের রফতানি ঋণপত্রের বিপরীতে প্রদত্ত ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্রের জন্য এ তহবিলের আওতায় প্রাক-অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া যাবে না।

নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে উক্ত রফতানিমূল্য যথাসময়ে প্রত্যাবাসিত না হলে আরো একবার সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা নতুন ঋণসুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। নতুন ঋণ সুবিধা গ্রহণের পূর্বে ইতিপূর্বে ইস্যুকৃত ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্রের বিপরীতে সৃষ্ট দায়ের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ গ্রাহককে নগদে পরিশোধ করতে হবে। তবে, নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণসমূহ বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট সন্তোষজনক মর্মে প্রতীয়মান হতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। গ্রাহক পর্যায়ে সুদ/মুনাফার হার হবে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক হতে ব্যাংকসমূহ কর্তৃক গৃহীত প্রাক-অর্থায়ন তহবিলের বিপরীতে ১ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সুদ বা মুনাফা প্রদান করতে হবে।
ঋণের মেয়াদ
গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের মেয়াদ যাই হোক না কেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সর্বোচ্চ ১৮০ দিন (ছয় মাস) মেয়াদে অংশগ্রহণকারী ব্যাংককে প্রাক-অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া হবে, যা মেয়াদ শেষে সুদসহ এককালীন পরিশোধ করতে হবে। তবে, যৌক্তিক কারণে রফতানিমূল্য প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদ/নির্বাহী কমিটির অনুমোদনক্রমে উপরোক্ত মেয়াদ অনধিক ৯০ দিন বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো যাবে। সেক্ষেত্রে কেইস-টু-কেইস ভিত্তিতে বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক অনাপত্তি পত্র দেবে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আইপিএলের ১০ ফ্র্যাঞ্চাইজি ছেড়ে দিচ্ছে ২৬ ক্রিকেটারকে Nov 14, 2025
img
ভারতের আধিপত্য বাংলার মানুষ আর গ্রহণ করবে না : তাহের Nov 14, 2025
img
গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ী শক্তিই নির্ধারণ করবে গণভোট কেমন হবে: অ্যাটর্নি জেনারেল Nov 14, 2025
img
গণভোটসহ ৫ দফা দাবি জামায়াত ও ইসলামী ৮ দলের Nov 14, 2025
img
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা সামলেছিল ছাত্রশিবির মেডিকেল জোন : ডাকসু ভিপি Nov 14, 2025
img
আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণে সরকারের ২৮ কোটি টাকার অনুমোদন Nov 14, 2025
img
আগামীর গণভোট কেমন হবে, জুলাইয়ের বিজয়ীরা নির্ধারণ করবে: অ্যাটর্নি জেনারেল Nov 14, 2025
img

আমীর খসরু

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি Nov 14, 2025
img
নাশকতার অভিযোগে কুড়িগ্রাম পুলিশের হাতে আকট ৫১ Nov 14, 2025
img
পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের আশ্বাসে খেলতে রাজি হলো শ্রীলঙ্কা Nov 14, 2025
img
আপনারা সংখ্যালঘু না, কেউ আপনাদের সম্পত্তি দখল করতে পারবে না : মান্নান Nov 14, 2025
img
বিএনপি ও জামায়াতের কথামতো হয়েছে সনদ: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী Nov 14, 2025
img
বারবার ধোকা দিয়ে দেশকে সুন্দর করা যাবে না : রেজাউল করীম Nov 14, 2025
img
বাংলাদেশে সিরিজ জিতে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পাকিস্তান Nov 14, 2025
img
শেখ মুজিব স্বাধীনতা চায়নি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন: জয়নুল আবদিন Nov 14, 2025
img
যুবদল নেতার হামলায় আহত ৩ পুলিশ Nov 14, 2025
img
শাকসু নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা Nov 14, 2025
img
রাজধানীতে আ. লীগের ককটেল ফ্যাক্টরির সন্ধান, অভিযান পুলিশের Nov 14, 2025
img
জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বে ‘জবরদস্তিমূলক হস্তক্ষেপ’ নয়: সালাহউদ্দিন আহমদ Nov 14, 2025
img
১০০তম টেস্টের পরও খেলা চালিয়ে যাবেন মুশফিক, আশা করেন শান্ত Nov 14, 2025