জয় বাংলার সঙ্গে ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ জাতীয় স্লোগান চেয়ে রুল

জাতীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা’র সঙ্গে ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

সোমবার (০৩ এপ্রিল) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া।

এর আগে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর জাতীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা’র সঙ্গে ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। ওইদিন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া রাসেলসহ ১৩ আইনজীবী এ রিটটি দায়ের করেন। এতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব ও শিক্ষা সচিবকে বিবাদী করা হয়। এ বিষয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর বেঞ্চে শুনানি হয়।

আইনজীবী আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া রাসেল বলেছিলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যখনই জয় বাংলা উচ্চারিত হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে জয় বঙ্গবন্ধু উচ্চারিত হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য এ স্লোগান ছিল উৎসাহমূলক। জয় বাংলা আর জয় বঙ্গবন্ধু একটাই স্লোগান, পৃথক কোনো স্লোগান নয়। হাইকোর্টের একটি রায়ে জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করা হয়েছে। এটিকে এখন আমাদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

চলতি বছরের মার্চে জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। এতে বলা হয়, জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে। সাংবিধানিক পদধারীরা, দেশে ও দেশের বাইরে কর্মরত সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব জাতীয় দিবস উদ্‌যাপন এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ও সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শেষে জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণ করবেন।

এর আগে এ বিষয়ে আইনজীবীরা সরকারের সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব ও শিক্ষা সচিব বরাবর নোটিশটি পাঠানো হয়। নোটিশ পাঠানোর পর গত ২০ জুন এ বিষয়ে আইনজীবী আবদুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া জানিয়েছিলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জয় বাংলা ও জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান একই সঙ্গে উচ্চারিত হয়েছে। একই স্পিরিট নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। দুটি আলাদা কোনো স্লোগান নয়। একই স্লোগান।

এ ছাড়া ২০১৬ সালের ৩ মে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক এবং অভিন্ন। এ দেশটি বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। তাই তো মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র বাঙালির মুখে মুখে স্লোগান ছিল ‘এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান আমাদের জাতীয় স্লোগান।

তিনি আরও বলেন, চলতি বছরে জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে গেজেটভুক্ত করা হয়েছে। আমরা চাই ওই গেজেট সংশোধন করে জয় বঙ্গবন্ধু অন্তর্ভুক্ত করা হোক।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. বশির আহমেদের করা এক রিটের শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। রুলে ‘জয় বাংলা’ কেন জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট।

ওইদিন বশির আহমেদ বলেছিলেন, জয় বাংলা হচ্ছে আমাদের জাতীয় প্রেরণার প্রতীক। পৃথিবীর ৬০টি দেশে জাতীয় স্লোগান আছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য যে আমরা আমাদের চেতনার সেই ‘জয় বাংলা’ স্বাধীনতার এতদিন পরও জাতীয় স্লোগান হিসেবে পাইনি।

তিনি বলেন, জয় বাংলা কোনো দলের স্লোগান নয়, কোনো ব্যক্তির স্লোগান নয়। এটা হচ্ছে আমাদের ন্যাশনাল ইউনিটি। এ স্লোগান দিয়ে একদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

এরপর রুল শুনানি শেষে ২০২০ সালের ১০ মার্চ রায় দেন বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান (প্রয়াত) ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

ওইদিন রায় ঘোষণার সময় আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, জয় বাংলা জাতীয় ঐক্যের স্লোগান। জয় বাংলা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয় স্লোগান ও জয় বাংলা ৭ মার্চের ভাষণের সঙ্গে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

আদালত আরও বলেন, আবেদনকারী সংবিধানের ৩ ও ৪ নম্বর অনুচ্ছেদের ধারাবাহিকতায় জাতীয় স্লোগান হিসেবে জয় বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছেন- এটা এ আদালতের এখতিয়ারবহির্ভূত। কারণ কোনো আইন প্রণয়ন করা এবং সংবিধান সংশোধন করার একমাত্র অধিকার জাতীয় সংসদের।

তবে রাষ্ট্রপক্ষ এ রুলের সমর্থনে হলফনামা দিয়েছেন উল্লেখ করে আদালত রায়ে বলেন, আইন সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান করায় একমত পোষণ করেছেন।

এরপর রায়ের আদেশ অংশ ঘোষণা করে আদালত বলেন:

ক. আমরা ঘোষণা করছি যে, জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে।

খ. সব জাতীয় দিবসে এবং উপযুক্ত ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদাধিকারীরা এবং রাষ্ট্রীয় সব কর্মকর্তা সরকারি অনুষ্ঠানের বক্তব্য শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ যেন করেন, সে জন্য বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

গ. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাসেম্বলি সমাপ্তির পরে ছাত্র-শিক্ষকরা যেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ করেন, তার জন্য বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

এরপর চলতি বছরের ২ মার্চ ‘জয় বাংলা’কে বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
  

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আজ ঢাকার আকাশ মেঘলা থাকবে Jul 12, 2025
img
এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য: সুইচ বন্ধ হয় হঠাৎ Jul 12, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনা চলমান রাখার সিদ্ধান্ত Jul 12, 2025
img
বিএনপির ২ পক্ষের সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী Jul 12, 2025
img
উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শনে ত্রিপক্ষীয় মহড়া Jul 12, 2025
img
অদৃশ্য শত্রু এখন দৃশ্যমান: তারেক রহমান Jul 12, 2025
img
‘লীগ মারত বুলেট দিয়ে, দল মারে পাথর দিয়ে’ স্লোগানে চবিতে বিক্ষোভ Jul 12, 2025
img
আপনারা কি শুধু চাঁদা চান : বিএনপিকে প্রশ্ন হাসনাতের Jul 12, 2025
img
মিটফোর্ডের ঘটনার প্রতিবাদে খুবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ Jul 12, 2025
img
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপনে ঢাবির কর্মসূচি ঘোষণা Jul 12, 2025
img
মিটফোর্ডের ঘটনায় এবি পার্টির নিন্দা ও প্রতিবাদ Jul 12, 2025
img
ছাত্ররা ঘরে ফিরে যায়নি, জুলাই শেষ হয়নি: হাসনাত আব্দুল্লাহ Jul 12, 2025
img
হে সমাজ, জেগে উঠো! মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার প্রমাণ দাও : জামায়াত আমীর Jul 12, 2025
img
আনিসুল, সালমান ও মজুমদার রিমান্ড শেষে কারাগারে Jul 12, 2025
img
মিটফোর্ডের সহিংসতার দায় বিএনপি ও সরকারের, দাবি ইসলামী আন্দোলনের Jul 12, 2025
img
ইতিহাস গড়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নাম লিখাল ইতালি Jul 12, 2025
img
মিটফোর্ডের ঘটনার প্রতিবাদে ইডেনে বিক্ষোভ, ছাত্রদলকে হল ছাড়ার আলটিমেটাম Jul 12, 2025
img
যাত্রাবাড়ীতে ২১ জুলাই মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সমাবেশের ঘোষণা Jul 12, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে একসাথে ছাঁটাই ১৩ শতাধিক পররাষ্ট্র কর্মকর্তা Jul 12, 2025
সোহাগ কাণ্ড নিয়ে কী বলছেন বুয়েটের শিক্ষার্থী? Jul 12, 2025