১৪ বছর বয়সে কিশোরের মৃত্যুদণ্ড!

 

জর্জ স্টিনি জুনিয়র, একজন আফ্রিকান বংশদ্ভুত মার্কিন কিশোর। আমেরিকার সাউথ ক্যারোলিনায় দুই শ্বেতাঙ্গ কিশোরীকে হত্যার অভিযোগে ১৯৪৪ সালে ১৪ বছর বয়সে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত।

মাত্র দুই ঘণ্টায় বিচারকার্য শেষ করে আদালত এ রায় দিয়েছিল। আর আদালতের আদেশের মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে তার রায় কার্যকর হয়েছিল।

স্টিনিই হলেন মার্কিন ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ কিশোর যাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। যদিও ৭০ বছর পর ২০১৪ সালে আদালত ওই সময়ে বিচারকার্য নিরপেক্ষ ছিল না বলে আদেশ দেয় এবং তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়।

জানা যায়, বিচার চলাকালে, এমনকী তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মুহুর্তেও সে বাইবেল হাতে নিয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিল! শুধু তাই নয়, তৎকালীন গভর্নরের কাছে সে প্রাণভিক্ষার আবেদন করলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি দণ্ডাদেশের বিরূদ্ধে আপিল করারও সুযোগ পায়নি সে।

আর এ ঘটনায় তার বাবার চাকরি চলে যায়। ঘরছাড়া হয় পুরো পরিবার।

সময়টা ছিল ১৯৪৪ সালের জুন মাস। তখন বিশ্বজুড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজছে। এ সময় স্টিনি জুনিয়র সাউথ ক্যারোলিনার ক্লারেন্ডন কাউন্টিতে তার পরিবারের সাথে থাকতেন। ১৯৪৪ সালের ২৩ মার্চ তাদের বাড়ির পাশেই জঙ্গলে একটি জলাশয়ে দুই শ্বেতাঙ্গ কিশোরী বেটি বিনিকার (১১) এবং ম্যারি এমা (৭) এর লাশ পাওয়া যায়।

সে সময় স্টিনি এবং তার বোন এমি লাশ খুঁজতে পুলিশকে সাহায্য করেছিল। যেহেতু তাদের বাড়ির পাশেই লাশ দুটি পাওয়া যায় তাই পুলিশের ধারণা স্টিনিই ওই দুইজনকে হত্যা করেছে। যদিও পুলিশ তাদের দাবির পক্ষে কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি।

পুলিশ তার বিরূদ্ধে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ আনে। অথচ মেয়ে দুটির ডাক্তারি প্রতিবেদনে ধর্ষণের কান আলামত পাওয়া যায়নি।

সে সময় বিচারকার্য শুরু হওয়ার আগে ৮১ দিন তাকে শহর থেকে ৫০ মাইল দূরে কলাম্বিয়ায় একটি কারাগারে রাখা হয়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে একটি বারের জন্যও তার বাবা-মায়ের সাথে দেখা করার সুযোগ দেয়া হয়নি।

এমনকি আইনি সহযোগিতার জন্য কোনো আইন কর্মকর্তার সাথেও দেখা করার সুযোগ পায়নি সে। আদালতে কিংবা কারাগারে যেখানেই তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে সে ছিল একা। অন্যদিকে বিচারকের মঞ্চে সবাই ছিলেন শ্বেতাঙ্গ। রায়ের দিন আদালতে সহস্রাধিক শ্বেতাঙ্গ উপস্থিত হলেও একজন কৃষ্ণাঙ্গকেও আদালতে থাকার সুযোগ দেয়া হয়নি।

জানা যায়, ১৯৪৪ সালের ১৬ জুন কলাম্বিয়ার কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এ সময় তার মাথায় ২৪০০ ভোল্টের ইলেক্ট্রিক শক দেয়া হয়েছিল। সে যেন চিৎকার করতে না পারে তাই মাস্ক দিয়ে তার মুখ বেঁধে দেয়া হয়েছিল। শক দেয়ার মাত্র চার মিনিটের মধ্যেই সে মারা যায়।

পরবর্তীতে ২০০৪ সালে জর্জ ফ্রিয়ার্সন নামে সাউথ ক্যারোলিনার স্থানীয় ঐতিহাসিক পত্রিকার প্রতিবেদন দেখে এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেন। ২০১৩ সালে তিনি আইনজীবী স্টিভ ম্যাকেঞ্জির সহায়তায় ঘটনার পুনঃতদন্ত ও বিচারের জন্য আবেদন করেন।

স্টিভ ম্যাকেঞ্জি বলেন, ‘‘ওই সময় কোনো প্রকার প্রমাণ ছাড়াই কেবল সন্দেহের মাধ্যমে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। বিনা অপরাধে নিষ্পাপ একটি শিশুকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল।”

অবশেষে ২০১৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর সাউথ ক্যারোলিনার সার্কিট কোর্টের বিচারক কার্মেন মুলেন কিশোর স্টিনিকে নির্দোষ বলে রায় দেন। আর এটা প্রমাণিত হয় যে, কেবল কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার কারণেই এই নিষ্পাপ শিশুটির বিরূদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিল।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আদর্শ মানুষ গড়তে নৈতিক শিক্ষার বিকল্প নেই : মেয়র শাহাদাত Sep 17, 2025
img
তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ হলেন নেদারল্যান্ডসের ফাস্ট বোলার Sep 17, 2025
img
আমরা রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নই : মির্জা ফখরুল Sep 17, 2025
img
ভারতে পালানোর সময় সাবেক এমপির পিএস গ্রেপ্তার Sep 17, 2025
img
হাসিনাসহ সব আসামির বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার চান নাহিদ ইসলাম Sep 17, 2025
img
পুলিশের চরিত্র নয়! ভিন্ন কিছু পেতেই ছোটপর্দায় ডিসিপি অলোক সান্যাল Sep 17, 2025
img
জোর করে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয়, কান্নায় ভেঙে পড়েন অভিনেত্রী মোহিনী Sep 17, 2025
img
আ. লীগকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, এ ব্যাপারে সবাই ঐক্যবদ্ধ : ফুয়াদ Sep 17, 2025
img
গাজা ইস্যুতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারেক রহমান Sep 17, 2025
img
ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকেই জাতীয় নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা Sep 17, 2025
img
কর্মজীবন থেকে ফ্যাশন: সমালোচনার চাপে মালাইকা Sep 17, 2025
img
দাবি না মানলে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা কারিগরি শিক্ষার্থীদের Sep 17, 2025
img
মেসির জার্সি উপহার পেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি Sep 17, 2025
img
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি প্রধান উপদেষ্টার Sep 17, 2025
img
রাকসু নির্বাচনের আগে শিক্ষক-কর্মচারীদের কর্মবিরতি ঘোষণা Sep 17, 2025
img
পূজায় এলো ভালোবাসার গান Sep 17, 2025
img
মুখে হাসি থাকলেও বুকে শুরু হয় ভাঙচুর ঝড় : সাদিয়া জাহান প্রভা Sep 17, 2025
img
দেশ অস্থিতিশীলকারীদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে জনগণ : আমীর খসরু Sep 17, 2025
img
দুর্গাপূজা নিরাপদে উদযাপিত হবে : আইজিপি Sep 17, 2025
img
টি-টোয়েন্টির এক নম্বর বোলার এখন বরুণ চক্রবর্তী Sep 17, 2025