ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েছি : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা প্রত্যয় নিয়েছি। সেজন্য স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজ ব্যবস্থা, স্মার্ট সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য প্রত্যয় নিয়েছি। আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। সম্ভাবনার হাতছানি দেওয়া দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলা দুরন্ত বাংলাদেশ।’

আজ বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা নির্বাচিত হলে দেশকে দারিদ্যমুক্ত করে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করব। মানবাধিকার নিশ্চিত করা, সাইবার নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী তথ্যর গোপনীয়তা নিশ্চিত করা, সাংবাদিকদের জন্য দশম ওয়েজ বোর্ড গঠন করব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ সালের ইশতেহারে দিন বদলের বাংলাদেশ দিয়ে শুরু করেছি। বর্তমান বাংলাদেশ দিন বদলের বাংলাদেশ। ২০০৬ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৬১ মার্কিন ডলার ছিল। বর্তমানে পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলার।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডিজিটাল প্রয়োগের মাধ্যমে ভূমি ব্যবস্থায় সেবা নিশ্চিত করা হবে। ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেমিট্যান্স, আমদানি, রপ্তাানি আয়, পাঁচ থেকে ছয় গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অতি দারিদ্র্যের হার, নিরাপদ পানি, সেনিট্যাশন ব্যবস্থা বৃদ্ধি করেছি। শিশু মৃত্যুহার ও মাতৃ মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী এখন শতভাগে পৌঁছে দিয়েছি। বিএনপি আমলে যা ছিল মাত্র ২৮ ভাগ। একইভাবে চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একইভাবে শিক্ষা ব্যবস্থায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। যুবকদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা হয়েছে। চা উৎপাদন করা হয়েছে।’

কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের রূপান্তর ঘটেছে। আজকের বাংলাদেশ দারিদ্র্যক্লিষ্ট, অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর বাংলাদেশ নয়। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার সময় আমি ও আমার ছোটবোন বিদেশে ছিলাম। সে কারণে আমরা প্রাণে বেঁচে যাই। দীর্ঘ ছয় বছর আমরা রিফিউজি হিসেবে প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হই। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জনগণের সমর্থন নিয়ে আমি দেশে ফিরে আসি। অবৈধভাবে ক্ষমতাসীন সরকার, জাতির পিতার হত্যাকারী ও ষড়যন্ত্রকারী এবং যুদ্ধাপরাধীদের সব রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই আমি দেশে ফিরে আসি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালের ২৩ জুন থেকে ২০০১ সালের ১৫ জুলাই, এই পাঁচ বছর পূর্ণ করে ২৬ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে আমরা ধান ও দানাদার শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করি। স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ, বয়স্ক, বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা প্রবর্তন এবং বর্গাচাষিদের বিনা জামানতে কৃষি ঋণ প্রদান করি।’

আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালের ১ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবং নানা চক্রান্তের ফসল হিসেবে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতার মসনদে আরোহণ করে। এরপরেই দেশে বিপর্যয় নেমে আসে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে ২২ নেতাকর্মীকে হত্যা এবং ৫০০ এর বেশি মানুষকে আহত করে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বেকারত্বর হার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। গার্মেন্ট শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি বৃদ্ধি করেছি।’

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ থিম ও ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ স্লোগানে নিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনী ইশতেহার-২০২৪ ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘দিনবদলের সনদ’ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। সেই ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছিল দলটি। এবার নির্বাচনে বিজয়ী হলে যে ১১টি বিষয়ে আওয়ামী লীগ অগ্রাধিকার দেবে সেগুলো হল–

১.দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

২. কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।

৩. আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

৪. লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষিব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি।

৫. দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো।

৬. ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানো।

৭. নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা।

৮. সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করা।

৯.আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা।

১০. সাম্প্রদায়িকতা এবং সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা।

১১. সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
৫ বলেই ৫ উইকেট, গড়ল নতুন বিশ্বরেকর্ড Jul 13, 2025
img
জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে বিশ্ববাজারে Jul 13, 2025
img
শঙ্কামুক্ত চাঁদপুরের সেই খতিব, আসামির জবানবন্দি আদালতে Jul 13, 2025
img
"আগে উন্নয়ন,পরে গণতন্ত্র" পুরনো বুলি আর চলবে না: মঈন খান Jul 13, 2025
img
সমুদ্রগর্ভ থেকে ফিরে আসছে ইতালির প্রাচীন নগরী Jul 13, 2025
img
ঝিনাইদহে ডিবি পরিচয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ Jul 13, 2025
img
মিটফোর্ডে নিরাপত্তাহীনতায় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একদিনের কর্মবিরতি Jul 13, 2025
img
মোদীর নাম নিলে কানাডা ছাড়ার হুমকি কপিলকে Jul 13, 2025
img
পরিকল্পনার অভাবেই সোহাগ হত্যাকারীর জন্ম: আব্দুল্লাহিল আমান আযমী Jul 13, 2025
img
ইউরোপ ও মেক্সিকোর পণ্যে ৩০% আমদানি শুল্ক ঘোষণা ট্রাম্পের Jul 13, 2025
img
দেশজুড়ে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে জাবি ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল Jul 13, 2025
ডিউক বল নিয়ে লর্ডসে ভারতীয় শিবিরের অসন্তোষ Jul 13, 2025
রাজনীতিতে মন বসছে না কঙ্গনার, ইস্তফার পরামর্শ বিজেপির Jul 13, 2025
মব জাস্টিসে অভিযুক্ত কেউ ছাড় পাবে না, সতর্ক করলেন উপদেষ্টা Jul 13, 2025
img
জামায়াত ও এনসিপিকে হুঁশিয়ারি দিলেন ফজলুর রহমান Jul 13, 2025
কাগজ ছাড়াই চালান বাইক! পরিচয় দিলেন সাংবাদিক Jul 13, 2025
img
বোমা মেরে বিএনপিকে পরাজিত করা যাবে না: রিজভী Jul 13, 2025
img
সন্দেহভাজন বিদেশিদের আগমন বেড়েছে দেশে: মির্জা আব্বাস Jul 13, 2025
img
মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যার আসামি গ্রেফতার নিয়ে যা বলছে ডিএমপি Jul 13, 2025
img
প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড সমাজ ও রাষ্ট্রের ভিতকে নাড়িয়ে দিয়েছে: শাকিল Jul 13, 2025