সমুদ্রগর্ভ থেকে ফিরে আসছে ইতালির প্রাচীন নগরী

প্রায় ২,০০০ বছর আগে ক্রেতাইও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে গিয়েছিল প্রাচীন রোমান বন্দরের শহর ‘আইনারিয়া’। এখন সেই শহরের ধ্বংসাবশেষ ফিরিয়ে আনা হচ্ছে জলের তলদেশ থেকে। ইতালির ইসকিয়া দ্বীপের উপকূলে, কার্তারোমানা উপসাগরের নিচে পাথর, কাঠ আর টালির ছাঁদে তৈরি এক বিস্ময়কর সভ্যতা ধীরে ধীরে আবারও দৃশ্যমান হচ্ছে।

১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো দুইজন স্কুবা ডাইভার আইনারিয়ার অস্তিত্বের প্রমাণ পান – রোমান যুগের পাত্র ও সীসার তৈরি ইনগট উদ্ধার হয় উপকূল থেকে। যদিও পরবর্তীকালে তদন্ত বন্ধ হয়ে যায় এবং সাইটটি প্রায় ৪০ বছর ধামাচাপা পড়ে থাকে। অবশেষে ২০১১ সালে স্থানীয় নাবিকদের নেতৃত্বে খননকাজ আবার শুরু হয় এবং ২ মিটার গভীরতায় পাওয়া যায় একটি বিশাল রোমান বন্দরের কাঠামো।


প্রত্নতাত্ত্বিকরা সেখানে খুঁজে পেয়েছেন প্রাচীন রোমান অ্যাম্ফোরা (পাত্র), মুদ্রা, মোজাইক, সমুদ্রঘেরা ভিলা এবং এমনকি একটি কাঠের জাহাজের ধ্বংসাবশেষ। রোমান সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল এই শহর। কার্বন ডেটিং অনুযায়ী, বন্দরের কাঠামো নির্মিত হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৭৫ থেকে খ্রিস্টীয় ৩০ সালের মধ্যে। ২০২০ সালে উদ্ধারকৃত একটি জাহাজ থেকে মিলেছে সীসার তৈরি গুলির মতো অস্ত্র ও সামুদ্রিক সামগ্রী, যা শহরটির সামরিক গুরুত্বের ইঙ্গিত দেয়।

এখন প্রতি গ্রীষ্মে স্থানীয় প্রত্নতাত্ত্বিক দল সমুদ্রতলে খনন চালান, যদিও বাজেট সীমিত হওয়ায় কার্যক্রম চলে শুধুমাত্র মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। পর্যটকদের জন্য চালু হয়েছে গ্লাস-বটম নৌকা ট্যুর, স্কুবা ডাইভিং এবং স্নরকেলিংয়ের মতো উদ্যোগ। দর্শনার্থীরা ৩ডি ভিডিও এবং নিচু কাচঘেরা মেঝেতে প্রদর্শিত প্রাচীন নিদর্শন দেখে অনুধাবন করতে পারেন এক হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার ছোঁয়া।

আইনারিয়া একসময় কেবল ইতিহাস ও কল্পনার মধ্যবর্তী এক নাম ছিল, কিন্তু আজ তা বাস্তব এবং দৃশ্যমান। প্রত্নতত্ত্ববিদ আলেসসান্দ্রা বেনিনি বলেন, "আমরা বন্দরের অংশ পেয়েছি, এখন আমাদের স্বপ্ন হলো আবাসিক শহরের ভিত্তি খুঁজে পাওয়া।"


প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন, এই শহর এক বিশাল ভূকম্প বা সুনামির ফলে সমুদ্রে বিলীন হয়ে যায়। আজকের দিনে ইসকিয়া দ্বীপের সৌন্দর্য, স্পা সংস্কৃতি আর পর্যটনের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই ইতিহাস এখন সামনে আসছে নতুন করে। বেনিনি বলেন, "পম্পেইয়ের মতো, আইনারিয়াও ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর – আমরা এখন তার ইতিহাস নতুন করে লিখছি।"


ইউটি/টিএ


Share this news on:

সর্বশেষ

img
মরিচ গুঁড়া ছিটিয়ে ছুরিকাঘাত, হাসপাতালে কন্নড় অভিনেত্রী Jul 13, 2025
img
স্টারকিড নয়, অভিনেত্রী হয়ে উঠতে চান শানায়া কাপুর Jul 13, 2025
img
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনে নিহত অন্তত ১১০ ফিলিস্তিনি Jul 13, 2025
img
তরুণ প্রজন্ম আর কোনো নির্বাচনী ভাগ-বাটোয়ারায় বিশ্বাস করে না: নাহিদ ইসলাম Jul 13, 2025
img
ঢাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা Jul 13, 2025
img
শঙ্কামুক্ত চাঁদপুরের সেই খতিব, আসামির জবানবন্দিতে যা জানা গেল Jul 13, 2025
img
ক্ষমতায় গেলে বিএনপি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে: এনসিপি Jul 13, 2025
img
সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের দাবি মহিলা পরিষদের Jul 13, 2025
img
রংপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গ্রেফতার Jul 13, 2025
img
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের রোমাঞ্চকর ফাইনালে আজ মাঠে নামছে চেলসি-পিএসজি Jul 13, 2025
img
আরও পাঁচ দিন বজ্রসহ ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা Jul 13, 2025
img
বাংলাদেশে অপরাজনীতির কবর রচনা করতে হবে : নুরুল হক নুর Jul 13, 2025
img
মধ্যপ্রাচ্যে সন্তান জন্ম কমে অর্ধেকে, সমাজ বদলের ইঙ্গিত Jul 13, 2025
img
আর কেউ ব্যাকবেঞ্চার নয়, মালয়ালম সিনেমা বদলে দিল ক্লাসের চিত্র Jul 13, 2025
img
নড়াইলে পানিতে ডুবে প্রাণ গেল ২ জনের Jul 13, 2025
img
রাশিয়ার সঙ্গে পরমাণু চুক্তির বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা ইরানের Jul 13, 2025
img
স্বর্ণের দাম ঊর্ধ্বমুখী, আগামীতে আরও বাড়ার সম্ভাবনা Jul 13, 2025
img
চেয়ারের মজা যদি নিতে হয়, চেয়ারের দায়িত্বও নিতে হবে : রুমিন ফারহানা Jul 13, 2025
img
অপকর্মকারীদের বেশিরভাগই ৫ আগস্টের পর দলে ঢুকেছে: সোহেল Jul 13, 2025
img
মিটফোর্ডের ঘটনার বিচার চেয়ে নওগাঁয় ছাত্র-জনতার মশাল মিছিল Jul 13, 2025