দেশকে এগিয়ে নিতে আ.লীগের ক্ষমতায় আসা প্রয়োজন ছিল : শেখ হাসিনা

এবারের নির্বাচনে দেশবাসী আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে বলে উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশকে এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগের এবার ক্ষমতায় আসা প্রয়োজন ছিল।

সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক যৌথসভায় সভাপতিত্বকালে তিনি এ কথা বলেন।

গত বছর ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশ ঘিরে বিএনপি যে ঘটনা ঘটিয়েছে তা আরও ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন জরিপের ফলাফল মাথায় রেখেই বিএনপি এবারের নির্বাচনে আসেনি বলেও দাবি করেন তিনি।

একটি মহল চক্রান্ত করে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দ্রব্যমূল্য কমানোর বিষয়টি সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। সামনে রমজান আসছে, কোনো মানুষের যেন কষ্ট না হয় সেই ব্যবস্থা করা হবে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে যে রেষারেষি চলছে তা বন্ধ করতে নির্দেশ দেন দলীয় প্রধান। নিজ দল এবং দেশের জনগণকে প্রধান শক্তি আখ্যায়িত করে দলীয় নেতাকর্মীদের সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করার তাগিদ দেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশকে এখন আর কেউ দুর্ভিক্ষের দেশ, ভিক্ষুকের দেশ মনে করে না বলে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখন মনে করে বাংলাদেশ একটা উন্নয়নের রোল মডেল।

শেখ হাসিনা বলেন, '৭৫ সালের পর থেকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিকভাবে যে অবস্থায় ছিল, বাংলাদেশ বললে মানুষ মনে করতো একটা দুর্ভিক্ষের দেশ, দুর্যোগের দেশ। এদেশের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। জাতির পিতাকে হত্যার পর অনেক দেশ বলেছে যে, তোমরা তোমাদের নেতাকে হত্যা করেছ? তখন খুনি দেশ হিসেবে আমরা পরিচিত। সে সময় আন্তর্জাতিকভাবে কোথাও গেলে বলত বাংলাদেশ তো হাত-পাততে আসে। এখন অন্তত এটুকু দাবি করতে পারি, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিটা পরিবর্তন হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে এই অফিসে ঢুকতে দিত না, চারদিকে পুলিশ ব্যারিকেড দেওয়া ছিল। অনেক সময় নেতাকর্মীরা আটকা পড়ত, তখন আমি বাধ্য হয়ে জোর করে ঢুকতাম এবং নেতাকর্মীদের উদ্ধার করতাম।

২০০১ এ নির্বাচনের পর আমাদের অফিসটা হয়ে গিয়েছিল হাসপাতাল। কারণ, বিভিন্ন জেলা থেকে আহত নেতাকর্মীরা এখানে আশ্রয় নিয়েছিল। নেতাকর্মীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, খাওয়ার ব্যবস্থা আমরা এখানে করেছিলাম।

তিনি বলেন, '৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর আমাদের ইতিহাসকে বিকৃতি করা হয়েছে। স্বাধীনতাকে বিকৃত করা হয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করা হয়েছে।

তিনি বলেন, নিজেদের দ্বন্দ্বের কারণে বিএনপি যাতে সুযোগ নিতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির দুই কাজ, দুর্নীতি ও মানুষ খুন করা। তাদের দলীয় প্রধানও দুর্নীতির দায়ে কারাদণ্ড পেয়েছেন। তবে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করতে হবে। কারণ জনগণের ভোটে আমরা সরকার গঠন করেছি। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আমরা পেয়েছি। এই বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে।

দ্রব্যমূল্যের কারণে মানুষ কষ্টে আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দ্রব্যমূল্য নিয়ে কাজ করছি। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে এনেছি। এরপরেও কিছু মানুষ চক্রান্ত করে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়াচ্ছে। এসব নিয়ে আমরা কাজ করছি।

নিম্নআয়ের মানুষের জন্য কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ফ্যামিলি কার্ড করে দিচ্ছি। এর সুফল পাচ্ছেন সীমিত আয়ের মানুষ। এছাড়া চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে। উন্নয়নের যে কাজ চলছে, তা শেষ করে এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় হয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগের প্রথম যৌথসভায় আজ বিকেলে যোগ দেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।

সোমবার বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি।

সভার আগে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ফুল দিয়ে শেখ হাসিনাকে বরণ করে নেন।

দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া জানান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা এবং সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে এই যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সমাবেশ ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের যেসব নির্দেশনা দিল জামায়াত Jul 19, 2025
img
গাজার সব ভবন পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করছে ইসরায়েল Jul 19, 2025
img
যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে সিরিয়া ও ইসরায়েল : যুক্তরাষ্ট্র Jul 19, 2025
img
ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় বাড়তে পারে তাপমাত্রা Jul 19, 2025
img
জামায়াতের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাবি শিক্ষার্থীদের জরুরি নির্দেশনা Jul 19, 2025
img
জাতীয় সমাবেশ সফল করতে জামায়াতের ২০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত Jul 19, 2025
img
হঠাৎ মার্চ টু গোপালগঞ্জ কেন, খতিয়ে দেখা প্রয়োজন: এ্যানি Jul 19, 2025
img
এনসিপির নীতি-নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নীলা ইসরাফিল Jul 19, 2025
img
শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার ছাড়া বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয় : ড. সলিমুল্লাহ খান Jul 19, 2025
img
আজ মেঘলা থাকবে ঢাকার আকাশ, বৃষ্টির সম্ভাবনা Jul 19, 2025
img
চাঁদাবাজদের বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে ফেলব : চরমোনাই পীর Jul 19, 2025
img
হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ Jul 19, 2025
img
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার Jul 19, 2025
img
আজ জামায়াতের মহাসমাবেশ, প্রস্তুত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান Jul 19, 2025
img
দেশের দুই বিভাগে ভারী বর্ষণের আভাস Jul 19, 2025
img
ডেঙ্গুতে হাসপাতালে বিজয় দেবরকোন্ডা Jul 19, 2025
img
মোহিত সুরিকে ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানালেন অনীত পাড্ডা Jul 19, 2025
img
মোহিত সুরির চোখে ‘রিয়েল অডিশন’ হয়েছিল ক্যামেরার বাইরে Jul 19, 2025
আ.লীগ নেতাদের ভারতে আশ্রয় নিয়ে মন্তব্য করলেন মমতা Jul 19, 2025
img
কাশিয়ানী ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও শাস্তির দাবি বিএনপির: প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠি Jul 19, 2025