৭ মার্চের ভাষণ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় এনে দিয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের স্বাধীনতা বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ফসল বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুধু গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নয় মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ও এনে দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) সকাল ১১টা ৩০ মিনিটের দিকে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিনি এ কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বিশ্বে স্বাধীনতার জন্য এ যাবৎ যারা ভাষণ দিয়েছেন, তাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ ৭ মার্চের ভাষণ। আর ৭ মার্চের ভাষণ শুধু বাঙালিকে উদ্বুদ্ধই করেনি বিজয় এনে দিয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্য।

বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার নামটা মুছে ফেলা হয়েছিল। কোনো ছবি দেখানো যেত না। ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিষিদ্ধ। যে স্লোগান দিয়ে লাখো শহীদ রক্ত দিয়েছে, তার সব নিষিদ্ধ।

তিনি বলেন, এমনকি ইতিহাস লিখতে গেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম আসবে…একটা বইয়ে অনেক ছবি। আমার এখনও মনে আছে। তার মাঝখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ছবি। সেটা একটা কাগজ দিয়ে ঢেকে আঙুল দিয়ে চেপে ধরে দেখানো হচ্ছে টেলিভিশনে, কিন্তু ওই ছবিটা দেখানো যাবে না। নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে একটি গোষ্ঠী চেয়েছিল এদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে। তারা ৭ই মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করে এবং ‘জয় বাংলা’ শ্লোাগানও নিষিদ্ধ করে। ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম মুছে দিতে উদ্যত হয়। কিন্তু ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যায় না। তারই প্রমাণ জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর এ ভাষণকে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি। শুধু তাই নয়, ইউনেস্কো মনে করে এ ভাষণটির মাধ্যমে জাতির পিতাই প্রকারান্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন।

তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে যেভাবে হত্যা করা হলো। পাকিস্তানিরা বলতো বাংলাদেশ স্বাধীন হলে কিছু করতে পারবে না। বাংলাদেশ তাদের কাছে বোঝা ছিল, স্বাধীন হয়ে ভালই হয়েছে- এ ধরনের কথা তারা বলেছে। কিন্তু স্বাধীনতার মাত্র ৩ বছর ৭ মাসের মধ্যে একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে যখন বঙ্গবন্ধু স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করলেন। এরপর যখন দেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, সেটাই

স্বাধীনতাবিরোধীদের সহ্য হয়নি। দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, পাকিস্তানিরা তাকে হত্যা করতে পারেনি। কিন্তু যারা আমাদের দেশের, যারা দিনরাত আমাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করত, তাদেরই দেখলাম ঘাতকরূপে।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই ভাষণে তিনি বাঙালির দীর্ঘদিনের লালিত স্বাধীনতা অর্জনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতাকামী লাখো জনতার উদ্দেশে দেওয়া তার কালজয়ী ভাষণে বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর বাঙালি স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধকালে বজ্রকণ্ঠের এই ভাষণ রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনুপ্রাণিত করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে পরাজিত করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বমানচিত্রে স্থান করে নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ।

এ ভাষণ বাঙালিকে শুধু উদ্বুদ্ধই করেনি বিজয় এনে দিয়েছে বলে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ৭ মার্চের ভাষণে তিনি আমাদের ‘স্বাধীনতা' নামের এক অমরবাণী শুনান এবং সংগ্রামের মাধ্যমে শৃঙ্খলমুক্তির পথ দেখান। তিনি বীর বাঙালির অবশ্যম্ভাবী বিজয়কে উৎকীর্ণ করেন তাঁর ভাষণের শেষ দু'টি শব্দে- ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে।

এর আগে আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
শিক্ষকদের ফোন করে এখনই লং মার্চ না করার আহ্বান হাসনাতের Oct 14, 2025
img
ভারত সফরের আগে বিপাকে অজিরা Oct 14, 2025
img
শিক্ষকদের দুপুরে 'মার্চ টু সচিবালয়' কর্মসূচি Oct 14, 2025
img
ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়তে চান আনচেলত্তি Oct 14, 2025
img
আমি মনে হয় স্বর্গে যেতে পারব না: ট্রাম্প Oct 14, 2025
img
দেশ কোথায় যাচ্ছে : ব্যারিস্টার শামীম হায়দার Oct 14, 2025
img
প্রতিটি জেলায় আলাদা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গঠনের নির্দেশ Oct 14, 2025
img
লড়াই করে হারল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সিরিজ জিতে যত কীর্তি ভারতের Oct 14, 2025
img
তৃতীয় বিয়ে নিয়ে সমালোচনার পরে মুখ খুললেন তনির স্বামী Oct 14, 2025
img
বিএনপির এই রাজনীতিটা অত্যন্ত ইতিবাচক : জিল্লুর রহমান Oct 14, 2025
img
দুই ঘণ্টায় ডিএসইতে অধিকাংশ শেয়ারে দরবৃদ্ধি Oct 14, 2025
img

সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা

কুয়েতের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বাংলাদেশি দূতের সাক্ষাৎ Oct 14, 2025
img
সেনাবাহিনীকে যে ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে, অতীতে কখনো হয়নি : রুমিন ফারহানা Oct 14, 2025
img
এখন গাজাকে পুনর্গঠন করার সময় : ট্রাম্প Oct 14, 2025
img
জামায়াত আমির-ডেনিশ রাষ্ট্রদূত সৌজন্য সাক্ষাৎ Oct 14, 2025
img
দেশে অস্থিরতার চক্র ভাঙার একমাত্র পথ হচ্ছে নির্বাচন : জাহেদ উর রহমান Oct 14, 2025
img
সংগীত কিংবদন্তিদের গল্প নিয়ে বড় পর্দায় ফিরছেন স্ট্রেঞ্জার থিংস তারকা ফিন উলফহার্ড! Oct 14, 2025
img
ইসি নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা নেই জনগণের, ব্যাপক প্রচারণার উদ্যোগ Oct 14, 2025
img
অবরোধ প্রত্যাহার ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের, যানচলাচল স্বাভাবিক Oct 14, 2025
img
স্বর্ণ ৫ হাজার ও রুপা ৬৫ ডলারে পৌঁছাতে পারে ২০২৬ এর মধ্যেই! Oct 14, 2025