ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইন অভ্যন্তরীণ বিষয় : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইন সিএএ এটি তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়, যেহেতু বাংলাদেশ একটি প্রতিবেশি দেশ, সেই হিসেবে আমরা বিষয়টির দিকে নজর রাখছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু, সুন্দর ও অবাধ হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্নমত থাকতেই পারে। যেকোনো দেশের ভিন্নমতকে আমরা সম্মান করি। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশিরভাগ রাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে ভবিষ্যতে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। পৃথিবীর প্রায় ৮০টি দেশের সরকার এবং রাষ্ট্রপ্রধান আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে সম্পর্ক দ্বিতীয় পর্যায়ে উন্নিত করার
অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। সুতরাং আমাদের বিবেচনায় আমাদের এই অঞ্চলের নিরিখে অত্যন্ত সুন্দর, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে।

আজ শনিবার (১৬মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানজি পুকুর লেনে ওয়াইএনটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের মতামত দিতেই পারে। তারা প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, বিরোধী দল অংশগ্রহণ করেনি। বাংলাদেশে ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৯টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। এবং কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ করা না করা, সেটি সরকারের উপর বর্তায় না, সেটি সেই দলের দায়িত্ব। সেই দল বরং নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করার লক্ষ্যে দেশে সহিংসতা ঘটিয়েছিল। এবং সেই সহিংসতার সাথে যারা যুক্ত ছিল, তাদেরই শুধু গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যেটি বলেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব এবং সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে তারা কাজ করছে, আমরাও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, সম্পর্ককে আরো ঘনিষ্টতর করার জন্য, এবং আমাদের যে বহুমাত্রিক সম্পর্ক, সেটিকে আরো বিস্তৃত করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একসাথে কাজ করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। তবে আমাদের দেশে অত্যন্ত সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ এবং উৎসবমূখর পরিবেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমালিয়ায় জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও ২৩নাবিককে মুক্ত করে আনার উদ্যোগ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের টেলিভিশনে কি দেখাচ্ছে, কি হচ্ছে সেটা কিন্তু যারা হাইজ্যাক করেছে তারা দেখে, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশের সব টেলিভিশন দেখার সুযোগ আছে। যখন এই বিষয়টাকে অতিগুরুত্ব দেয়া হয়, জিম্মিদের পরিবারের প্রতিক্রিয়া যখন ওরা দেখে, তখন হাইজ্যাককারীদের অবস্থান আরো অনমনীয় হয় এবং হচ্ছে। এই নেগেটিভ ইম্পেক্টটা হচ্ছে।

বিষয়টিকে সবারই সতর্কভাবে দেখা দরকার উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য তো নাবিকদের এবং জাহাজটাকে মুক্ত করা। সুতরাং আমরা সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্বশীলভাবে যদি আচরণ করি তাহলে এই পরিস্থিতি উত্তরণ সহজ হবে। এটি নিয়ে সরকার কাজ করছে, অতীতেও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্ঠার মাধ্যমে ১০০দিনের মাথায় একই কোম্পানির জাহাজ এবং নাবিকদের মুক্ত করা সম্ভবপর হয়েছিল। এখনো আমরা আশা করছি আমাদের যে সমন্বিত প্রচেষ্ঠা আছে, সুস্থভাবে নাবিকদেরকে ও জাহাজটাকে মুক্ত করে নিয়ে আসতে পারব।

রমজান কিংবা ঈদ উপলক্ষে কোনো পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কোন কারণ নেই জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাকিদের বলেন, দ্রব্যমূল্য যাতে মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে, অসাধু ব্যবসায়িরা যাতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে সেজন্য সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। রমজান উপলক্ষে ন্যায্যমূল্যে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এককোটি মানুষকে ন্যায্যমূল্যে চালসহ অন্যান্য সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। এরপরও দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় অসাধু ব্যবসায়িরা, এমনকি খুচরা বিক্রেতারাও একটি বাজারে একটি পণ্যের দাম একরকম, আরেক বাজারে অন্যরকম করে ইচ্ছেমতো দাম নেওয়ার একটা প্রবণতা তৈরী হয়েছে। খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে এই প্রবণতা আগে দেখা যায়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখলাম, মানুষ এব্যাপারে আগের তুলনায় অনেক বেশি সোচ্চার হয়েছে। অহেতুক দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর প্রবণতা রোধ করার ক্ষেত্রে মানুষের সোচ্চার হওয়াটা সহায়ক।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একই পণ্য বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন দামে যে বিক্রি হচ্ছে তা নিয়ে বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্রিকা অনুসন্ধানী রিপোর্ট করেছে। এব্যাপারে সাংবাদিকদের সহায়তা চাই, আমাদের সরকার সর্বাত্মক চেষ্ঠা করছে, যাতে কেউ অহেতুক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে।

Share this news on: