অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ দাবি শিক্ষক দ্বীন ইসলামের

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় নিজের কোনো দায় নেই বলে দাবি করেছেন দ্বীন ইসলাম। শনিবার (১৬ মার্চ) বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন দাবি করেন তিনি।

নিজ এলাকার মানুষ হওয়ায় অবন্তিকা ও তার পরিবারকে যথেষ্ট সহায়তা করেছেন জানিয়ে দ্বীন ইসলাম বলেন, অফিশিয়ালি যে দায়িত্ব পেয়েছিলেন, সে অনুযায়ী তা পালন করেছেন। ঘটনা প্রায় দেড় বছর আগের। অবন্তিকার ব্যাচমেটরা কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। ফেসবুকের কয়েকটি অ্যাকাউন্ট থেকে তাদের নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছিল। জিডি করার সময় অবন্তিকাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ তখন উচ্চতর তদন্তের আশ্বাস দিয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গুজব ছড়ানো আইডির পরিচালককে ধরার আশ্বাস দেয়। পরে থানা থেকে বেরিয়ে অবন্তিকা তার বন্ধুদের ফেসবুকের ফেক অ্যাকাউন্ট থেকে সে গুজব ছড়ায় বলে জানায়। এর জন্য সে দুঃখ প্রকাশ করে। পরে এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা প্রক্টর অফিসে এসে অবন্তিকার বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ৮ আগস্ট একটা লিখিত অভিযোগ দেয়।

দ্বীন ইসলাম আরও বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রক্টর মোস্তফা কামাল আমাকে এবং সহকারী প্রক্টর গৌতম কুমার সাহাকে (গণিত বিভাগ) ২০২২ সালের ১১ আগস্ট তদন্তের দায়িত্ব দেন। পরবর্তী সময়ে গত ১৬ আগস্ট, ২০২২ সালে প্রক্টর স্যারের উপস্থিতিতে আমি এবং সহকারী প্রক্টর গৌতম কুমার সাহা অবন্তিকা এবং তার অভিভাবকদের প্রক্টর অফিসে আসার জন্য আহ্বান করি। পরে অবন্তিকার মা মিটিংয়ে আসেন এবং অবন্তিকার ক্লাসমেটসহ (অভিযোগকারীরা) সবাই উপস্থিত ছিল।

সে সময় অবন্তিকার মা তার ব্যাচমেট (যারা এ অভিযোগ করেছে) তাদের কাছে ঘটনার সত্যতা শুনে বলেন যে, ‘আমার মেয়ে যা করেছে ভুল করেছে, ঘটনার জন্য অভিযোগকারী সবার কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে এবং ভবিষ্যতে আমার মেয়ে আর এই ধরনের কাজ করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। যদি সে এমন কিছু করে তার দায় আমরা নিবো।’

বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অবন্তিকার মা অনুরোধ জানান এবং বলেন, ‘আমার মেয়ে ভালো শিক্ষার্থী কিন্তু সে কয়েকদিন ধরে মানসিকভাবে অসুস্থ এবং ওষুধ খাচ্ছে। তখন তার ব্যাচমেটরা বিষয়টা মানবিক এবং ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেন। এভাবে বিষয়টা প্রাথমিকভাবে মীমাংসা করা হয়। মীমাংসার পর অবন্তিকার মা জিডি তুলে নেয়ার জন্য অভিযোগকারীদের অনুরোধ করেন। কিন্তু অভিযোগকারীরা জিডি তুলে নিতে অসম্মতি জানায়, কারণ তাদের ধারণা অবন্তিকা ভবিষ্যতে এ ধরনের আচরণ আবারও করতে পারে।

সহকারী প্রক্টর হিসেবে জিডি তোলার বিষয়ে কিছু করার ছিল না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা শুধু প্রতিবেদন দেয়ার অধিকার রাখি। অবন্তিকা ও তার পরিবারের সদস্যদের আমি এ বিষয়ে জানিয়ে প্রক্টর স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করারও পরামর্শ দেই। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও অনুরোধ জানাই বিষয়টি মীমাংসা করতে।

তবে অভিযোগকারীরা জানান, তারা অবন্তিকাকে আগামী ৩ মাস পর্যবেক্ষণ করবে এবং যদি সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে, তাহলে জিডি তুলে নেয়া হবে। এর কিছুদিন পর অবন্তিকা ও তার মা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন এবং আমাকে প্রক্টর অফিসে না পেয়ে আমার বিভাগে আসেন। ওইদিন অবন্তিকার মা আমাকে (শিক্ষক দ্বীন ইসলাম) জানান, অবন্তিকার হলের বন্ধুরা ওর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করছেন না, এতে সে মানসিকভাবে আরও ভেঙে পড়েছে। তখন আমি তাদেরকে প্রক্টর অফিসে লিখিতভাবে অভিযোগ করার পরামর্শ দেই। তখন অবন্তিকার মা বলে যা হওয়ার হয়ে গেছে, এখন আর এ বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে চাইছি না।

তখন তিনি (অবন্তিকার মা) বলেন, আমি মেয়েকে আর হলে রাখব না, এতে তার পড়াশোনা খারাপ হয়ে যাবে এবং সে মানসিকভাবে আরও ভেঙে পড়বে। তখন আমি তাকে বলি আপনি অভিভাবক যা ভালো মনে করেন সেটাই করেন। যে কোনো প্রয়োজনে আমার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। অভিযোগ নিষ্পত্তির ৩ মাসেরও কিছুদিন পর অবন্তিকা এবং তার বাবা-মা প্রক্টর অফিসে জিডি তোলার জন্য আসেন, কিন্তু তার ব্যাচমেটরা জিডি তুলতে অসম্মতি জানায়।

তখন অবন্তিকার মা-বাবা এবং অবন্তিকা আবার আমাকে ফোন করে আমার বিভাগে দেখা করতে আসেন। তখন তারা জিডি তোলার বিষয়ে আমাকে অনুরোধ করেন। আমি তখন তাদের বিষয়টা বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি যে বিষয়টা আমার হাতে নেই। আমাদের কাজ তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদান করা এবং আমরা তাই করি। জিডির বিষয়ে প্রক্টর স্যার এবং অভিযোগকারীদের সঙ্গে আলাপ করে নিষ্পত্তি করার পরামর্শ দেই।

সে সময় অবন্তিকার মা কিছুটা হতাশার ভাষায় বলেন, আমি দুজন (অবন্তিকা এবং ওর বাবা) ডিপ্রেশনের রোগীকে নিয়ে এত বছর সংসার করে আসছি। আমি নিজেও অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছি।এবং বলেন আমার মেয়েটা মারাত্মক ডিপ্রেশনে পড়ে গেছে। এরপর অবন্তিকা ও তার পরিবারের কারো সাথে এ বিষয়ে আজ পর্যন্ত আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি।

দ্বীন ইসলাম বলেন, প্রক্টর অফিসে অবন্তিকা এবং তার মাকে একবারই ডাকা হয়েছিল। সেই সময় প্রক্টর মোস্তফা কামাল, সহকারী প্রক্টর গৌতম সাহা এবং অভিযোগকারী ও তার বন্ধুরা উপস্থিত ছিলেন। একাধিকবার ডেকে হেনস্তা করার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। কারণ, বিষয়টি ওইদিনই মীমাংসা হয়ে গিয়েছিল। সুইসাইড নোটে প্রক্টর অফিসে আম্মানের বিরুদ্ধে আনীত যৌন হয়রানি ও ভয়ভীতির অভিযোগের বিচার না পাওয়ার বিষয়টি তৎকালীন প্রক্টর মোস্তফা কামাল ভালো বলতে পারবেন। এ অভিযোগ সম্পর্কে আমি অবগত নই।

Share this news on:

সর্বশেষ

মোট ভোটারের অর্ধেকই অনাবাসিক, বদলে যেতে পারে বিজয়ের সমীকরণ Oct 13, 2025
img
মেঘনায় মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে আটক ১১ জেলে, ৮ জনের কারাদণ্ড Oct 13, 2025
ট্রাইব্যুনালে হেফাজতে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু Oct 13, 2025
প্রয়োজনে নারীরা যেকোনো কার্যক্রমে যুক্ত থাকতে পারেন: শিবিরের ভিপি প্রার্থী Oct 13, 2025
আটক ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে অবশ্যই আদালতে আনতে হবে: চিফ প্রসিকিউটর Oct 13, 2025
পিরোজপুর জেলা জামায়াতের স্মারকলিপি প্রদান Oct 13, 2025
নির্বাচনের ব্যস্ততা নিয়ে যা বললেন জিএস প্রার্থী আম্মার Oct 13, 2025
img
বিপিএলে বিদেশি ফ্র‍্যাঞ্চাইজির আসতে বাধা নেই Oct 13, 2025
রাজনৈতিক পরিচয়ে বেশি সুবিধা পাবে এটা হতে দিব না - বললেন শিবির জিএস ফাহিম Oct 13, 2025
রাবি শিক্ষার্থীদের যেসব অঙ্গীকার দিলেন ছাত্রশিবির প্যানেলের ভিপি প্রার্থী জাহিদ Oct 13, 2025
গান গেয়ে শিবির প্যানেলের প্রচারণা! Oct 13, 2025
শবনম ফারিয়ার মুখোশ ফাঁস: ভণ্ডামি শুধু দেশেই Oct 13, 2025
img
আমাকে গুম করা হতে পারে : এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা Oct 13, 2025
img
ইলিয়াস কাঞ্চনের জন্য দোয়া চাইলেন শাকিব খান Oct 13, 2025
img
মধ্যপ্রাচ্যের মতো ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পকে জেলেনস্কির আহ্বান Oct 13, 2025
img
কক্সবাজারে আদালতের খাস কামরা থেকে বিচারকের আইফোন চুরি Oct 13, 2025
দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান, বিপিএলে যুক্ত হচ্ছে নোয়াখালী Oct 13, 2025
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলা অনিশ্চিত, যা করতে হবে মিরাজদের Oct 13, 2025
img
‘মানিয়ে নিতে না পারলে আপনারই সমস্যা’, দীপিকার ৮ ঘন্টা শিফট প্রসঙ্গে প্রিয়ামনি Oct 13, 2025
img
মাঠ ও মাঠের বাইরে হামজাকে নেতা মানেন বাংলাদেশের কোচ Oct 13, 2025