মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। বুধবার (১ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল ঢাকার মিরপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ বিষয়ে ব্রিফ করবেন ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ।

এর আগে গত ২৫ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে মানবতার ফেরিওয়ালার মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর সব প্রতারণার খবর প্রকাশ পায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, মিল্টন সমাদ্দার নামক এক ব্যক্তি ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’নামের বৃদ্ধাশ্রম গড়ে রাস্তা থেকে অসুস্থ কিংবা ভবঘুরেদের কুড়িয়ে সেখানে আশ্রয় দেন। সেসব নারী, পুরুষ ও শিশুকে নিয়ে ভিডিও তৈরি করে প্রায়ই তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা যায়।

মানুষের অসহায়ত্ব তুলে ধরে তাদের জন্য বিত্তবানদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তার আবেদনে সাড়াও মেলে প্রচুর। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ১৬টির বেশি নম্বর এবং তিনটি ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা জমা হয়। এর বাইরে অনেকেই তার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অনুদান দিয়ে আসেন। মানবিক কাজের জন্য এখন পর্যন্ত তিনটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও পেয়েছেন মিল্টন সমাদ্দার।

এটি মিল্টনের আসল চেহারা নয়। প্রতিবেদনে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। মানবিকতার আড়ালে তিনি যা করেন, তা গা শিউরে ওঠার মতো। যেই প্রতিষ্ঠানের জন্য এত পরিচিতি, সেই আশ্রম ঘিরেই ভয়াবহ প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন মিল্টন। প্রকৃতপক্ষে যে কয়জনকে লালন-পালন করছেন, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি প্রচার করছেন। লাশ দাফন করার যে হিসেব দিচ্ছেন, তাতেও আছে অনেক গরমিল।

সবচেয়ে ভয়ংকর হলো, মিল্টনের বিরুদ্ধে রয়েছে অসহায় মানুষকে আশ্রয় দেয়ার নামে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির অভিযোগ। মিল্টন সমাদ্দারের ব্যক্তি জীবনেও নৈতিকতা বা মানবিকতার বালাই নেই। কিশোর বয়স থেকেই ছিলেন অর্থলোভী। প্রতিবেশী, চিকিৎসক কিংবা সাংবাদিকরা বিভিন্ন সময় তার কাছে শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। এমনকি নিজের জন্মদাতা পিতাকেও বেধড়ক মারধরের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ফেসবুক পেজ ঘেঁটে দেখা যায়, মিল্টনের আশ্রমে সব সময় আড়াইশ থেকে তিনশ অসুস্থ রোগী থাকেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে রাস্তায় যারা মারা যান, তাদের দাফন করেন মিল্টন। আবার তার আশ্রমে অবস্থানকালেও অনেকে মারা যান। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০০ মরদেহ দাফন করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

মিল্টন জানান, যাদের দাফন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৬০০ জন তার আশ্রমে মারা গেছেন। আর বাকি ৩০০ মরদেহ রাস্তা থেকে এনে তিনি দাফন করেছেন। এসব মরদেহ রাজধানীর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। সরেজমিন মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে গিয়ে জানা যায়, মিল্টন সমাদ্দারের প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে সেখানে সব মিলিয়ে ৫০টি মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়, এসব মরদেহের ডেথ সার্টিফিকেট গণমাধ্যমের কাছে রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিল্টন সমাদ্দারের দক্ষিণ পাইকপাড়া আশ্রমের কাছেই বায়তুর সালাম জামে মসজিদ। এই মসজিদে এক সময় তার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসা মরদেহ বিনামূল্যে গোসল করানো হতো। তার মানবিক কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষ তাকে এই সুবিধা দিয়েছিল। তবে গোসল করানোর সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রায় প্রতিটি মরদেহের বিভিন্ন স্থানে কাটাছেঁড়ার দাগ শনাক্ত করেন। এ বিষয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে মসজিদ কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করলে তিনি ওই মসজিদে মরদেহ পাঠানো বন্ধ করে দেন।

এছাড়া মানবসেবার অন্তরালে যে নির্মম ও বর্বরোচিত চিত্র ফুটে উঠেছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ। মানবসেবা পরম ধর্ম কিন্তু মানব সেবার নামে মুখোশের আড়ালে রাস্তা থেকে অসুস্থ, অসহায় ও নিরীহ মানুষকে তুলে এনে চিকিৎসার নামে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির যে অভিযোগ মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে উঠেছে তা অত্যন্ত ভীতিকর, ন্যাক্কারজনক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। গুরুতর অসুস্থদের হাসপাতালে না নিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানে আটকে রাখা, ভুয়া ডাক্তার কর্তৃক মৃত্যু সার্টিফিকেট তৈরি করা কিংবা মৃত লাশের শরীরে কাটাছেঁড়ার তথ্য প্রতিবেদনে প্রকাশ পায়।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিস্ফোরক আইনের মামলা থেকে মির্জা ফখরুলসহ ২২ জনকে অব্যাহতি Oct 05, 2025
img
বিক্ষোভে উত্তাল ইউরোপ, লন্ডনে আটক অন্তত ৪৪২ Oct 05, 2025
img
বদলে যাচ্ছে ডিসি-ইউএনও পদের নাম, আসছে বড় পরিবর্তন Oct 05, 2025
img
হালান্ড গুঞ্জনে গার্দিওলার রহস্যময় জবাব: ‘ফুটবলে কিছুই অসম্ভব নয়’ Oct 05, 2025
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন শিগগিরই পেশ করবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন Oct 05, 2025
আমাদের জাহাজ অনেক উঁচু; হয়তো তারা হেলিকপ্টারে আসবে Oct 05, 2025
img
আমাকে মেরে ফেলে রিয়া মনিকে বিয়ে করতে চায় ম্যাক্স অভি: হিরো আলম Oct 05, 2025
img

এনসিএল টি-টোয়েন্টি

জয়ের প্রথম সেঞ্চুরিতে চট্টগ্রামের দাপুটে জয় Oct 05, 2025
img
মন খারাপের সুরে আসিফ আলতাফ, নতুন গান ‘ব্যবধান’ Oct 05, 2025
img
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিগত সরকারের দূর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে: শিক্ষা উপদেষ্টা Oct 05, 2025
img

বিসিবি

নির্বাচন পেছানোসহ ৩ দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সংগঠকদের স্মারকলিপি Oct 05, 2025
img
বছরে চার ছবি, নতুন রেকর্ডের পথে ধানুশ Oct 05, 2025
img
ছুটি শেষে চাকসু প্রার্থীদের প্রচারণায় মুখর ক্যাম্পাস Oct 05, 2025
img
আওয়ামী লীগ কি ভারতে গিয়ে কালো জাদু শিখে ফেলল- প্রশ্ন রনির Oct 05, 2025
img
পরিচালনায় আবারও ফিরে আসছেন কঙ্কনা সেন শর্মা Oct 05, 2025
img
মেয়ে ত্রিশলা দত্তের পা ভেঙে দিতে চেয়েছিলেন সঞ্জয় দত্ত! Oct 05, 2025
img
সেনা প্রত্যাহারে রাজি নেতানিয়াহুর দেশ, জানালেন ট্রাম্প Oct 05, 2025
img
দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন নির্বাচন : আমীর খসরু Oct 05, 2025
img
ধোনির নেতৃত্বে না খেলার আক্ষেপ সূর্যকুমার যাদবের Oct 05, 2025
img
বিদেশে বাংলাদেশের সব দূতাবাসে রাষ্ট্রপতির ছবি পুনঃস্থাপন করতে আইনি নোটিশ Oct 05, 2025