আইন মন্ত্রণালয় চাইলে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ

প্রবল গণআন্দোলনের মুখে ভারতে অবস্থান নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন।

রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তৌহিদ বলেন, আইন মন্ত্রণালয় বললে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সামরিক কপ্টারে করে প্রতিবেশী আশ্রয় নেন পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে দেশটিতেই থাকছেন তিনি। পরের গন্তব্য এখনো অজানা।

এর মধ্যে ছাত্র আন্দোলনে ‘গণহত্যার’ অভিযোগ তুলে শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের দাবি উঠেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো থেকে। তারমধ্যেই শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার বিষয়ে প্রথমবারের মতো কথা বললেন অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উপদেষ্টা।

দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে আসেন তৌহিদ হোসেন। এতে তিনি এই সরকারের পররাষ্ট্রনীতি, জাতীয় নির্বাচন বিষয়েও কথা বলেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তৌহিদ হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা ফিরবেন কি না সেটি তো আমি বলতে পারব না। এটা যদি আইন মন্ত্রণালয় কখনও আমাকে বলে, তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য চিঠি দেন; আমি দেব। পররাষ্ট্র সচিব চিঠি দেবেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও বঙ্গোপসাগর এলাকা যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া হয়নি বলে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, এটা বলতে পারি, আমি এমন কোনো অঙ্গীকার করিনি। আমার খুব সন্দেহ, রাস্তার ছাত্ররা এই অঙ্গীকার করেছে কি না, জানি না। খুবই আনলাইক।

ভারত-চীন-যুক্তরাষ্ট্রসহ সবার সঙ্গে ভারসাম্যের কূটনীতি

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সবার সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দেশের সঙ্গেই আমরা ভালো সম্পর্ক চাই।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। বিভিন্ন সময়ে সোনালি অধ্যায় বলা হয়েছে। তবে মানুষ যেন মনে করে, সত্যিকারভাবে দুই দেশের মধ্যে সোনালি অধ্যায় তৈরি হয়েছে। আমরা সবসময় আমাদের স্বার্থ দেখব, প্রতিবেশীর স্বার্থও দেখব।
সরকারের লক্ষ্য সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা

উপদেষ্টা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে নির্বাচন দেওয়া। বলেন, আমরা সবার আগে দেশে স্থিতিশীলতা আনতে চাই। তারপর পরিস্থিতি বোঝা যাবে। সে অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমেই এ সরকার সরে যাবে।

তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে চূড়ান্তভাবে একটি নিরপেক্ষ এবং সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর। এটা নিয়ে সন্দেহের কোনো সুযোগ নেই। আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে, স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। সেটি সাতদিন লাগতে পারে, ১৫ দিন লাগতে পারে, আবার দুই মাসও লাগতে পারে। নির্বাচন অবশ্যই করতে হবে।

তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা বিভিন্ন খাতে সংস্কার আনতে চাই। তবে দেশকে স্বর্গ বানিয়ে যেতে পারব না। আশা করি, পথ দেখিয়ে দিতে পারব।
এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, বিদেশিদের যে কনসার্ন, তা আমাদেরও কনসার্ন। আমরাও তাই চাই, দেশে কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যেন না ঘটে।

সহিংসতা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যাবে না

তিনি বলেন, দেশে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তবে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় কোনো কারণেই যেন সহিংসতা না হয়। কোনোভাবেই মেনে নেয়া যাবে না।
তিনি জানান, সোমবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে বসবেন।

আন্দোলনে নিহতদের আর্থিক সহায়তা, আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে প্রয়োজন অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা দেব। আহতরা যেন সর্বোচ্চ চিকিৎসা পান, তা আমরা নিশ্চিত করব। নিহত ও আহতদের সঠিক তালিকাও করা হবে।

আরবি আমিরাতে আটক বাংলাদেশিদের মুক্তির চেষ্টা হবে

আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করে দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়া প্রবাসীদের মুক্তির বিষয়ে দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কথা বলবেন বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। বলেন, ‘ছাত্রজনতার আন্দোলনকে সমর্থন করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও বিক্ষোভ করেছেন। এরমধ্যে আরব আমিরাতে বেশ কয়েকজন কর্মীকে আটক করা হয়, এমনকি জেলও দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমরা গভীরভাবে দেখছি। তাদের মুক্ত করতে প্রধান উপদেষ্টা নিজেই উচ্চ পর্যায়ে কথা বলবেন।’

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সালমান, আনিসুলসহ নতুন মামলায় গ্রেফতার ৭ জন Jul 21, 2025
img
ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নেই: ফরিদা আখতার Jul 21, 2025
শুল্কের দাপটে বিপদে রপ্তানি খাত, সরকারের ব্যর্থ দরকষাকষি! Jul 21, 2025
যা যা থাকছে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সামরিক মহড়ায় Jul 21, 2025
স্বামীর গায়ে হাত তুললেন সোনাক্ষী! ভিডিও ভাইরাল Jul 21, 2025
শুধু অভিনেত্রী নয়, ভালোবাসার নাম ছিল শেফালী,পরাগের শোকবার্তা Jul 21, 2025
img
সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জরুরি নির্দেশনা মাউশির Jul 21, 2025
img
২৪ ঘণ্টায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ১৬০২ জন Jul 21, 2025
img
রেখার ‘সতিন’ হতে চেয়েছিলেন অন্য এক অভিনেত্রী Jul 21, 2025
img
জুলাই যোদ্ধাদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা থাকছে না : মুক্তিযুদ্ধ উপদেষ্টা Jul 21, 2025
img
কে সেই নায়ক? বলিউড পার্টিতে টাবুকে জোর করে চুমু খেয়েছিলেন Jul 21, 2025
img
গোপালগঞ্জে নিহত ৩ জনের মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দিল আদালত Jul 21, 2025
img
নভেম্বর পর্যন্ত সারের ঘাটতি হবে না : কৃষি উপদেষ্টা Jul 21, 2025
img
নতুন প্রজন্মের সঙ্গে প্রতারণা করছেন আপনারা: ব্যারিস্টার সুমন Jul 21, 2025
img
সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে চলতি মাসেই জুলাই সনদ : আলী রীয়াজ Jul 21, 2025
img
ভুটান লিগে প্রথমবারের মতো খেলতে গেলেন দুই ফরোয়ার্ড তহুরা ও শামসুন্নাহার Jul 21, 2025
img
বিতর্কিত ৩ নির্বাচন : ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তথ্য নিচ্ছে ইসি Jul 21, 2025
img
সিদ্ধার্থ-কিয়ারার সন্তানের সঙ্গে সালমানের ছবি ঘিরে তোলপাড় Jul 21, 2025
img
আইসিসির সদস্যপদ পেল আরও নতুন ২ দেশ Jul 21, 2025
img
‘এ মানুষগুলো বিশ্বাসঘাতক’, কেকের মৃত্যু নিয়ে অভিজিতের বিস্ফোরক মন্তব্য Jul 21, 2025