বাংলাদেশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করব : বিবিসিকে ড. ইউনূস

শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণ-আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশের নতুন এই নেতা স্পষ্ট করেছেন, এটি তার বিপ্লব ছিল না। তবে শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ নিয়ে স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করতে তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তার কার্যালয়ে নির্বাচিত কয়েকজন সাংবাদিককে ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। খবর বিবিসির।

৮৪ বছর বয়সী ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি এটা (প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব) করছি, কারণ দেশের তরুণরা এটাই চেয়েছিল এবং আমি তাদের সাহায্য করতে চেয়েছি।’
‘এমনটা আমার স্বপ্ন ছিল না, এটা তাদের (তরুণদের) স্বপ্ন। তাই আমি তাদের স্বপ্নকে সত্যি করতে সাহায্য করছি’, বলেন নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘সবার আগে আইনশৃঙ্খলা, যাতে মানুষ স্বস্তিতে থাকতে পারে বা কাজ যেতে পারে।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর তার সরকারের লোকেরা সম্পূর্ণভাবে ‘লাপাত্তা’ হয়ে গেছেন। ১৫ বছরের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী শাসনের কারণে যা হয়েছে, তা হলো ‘বিশৃঙ্খলা, সম্পূর্ণ জগাখিচুড়ি’।

‘এমনকি সরকার (শেখ হাসিনা সরকার), তারা যা করেছে, তারা যা যা করেছে, আমার কাছে সেসবের কোনো অর্থ নেই…। প্রশাসন আসলে কী, তা তাদের কোনো ধারণাই ছিল না’, বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।

এত বিশৃঙ্খলার মধ্যেও ‘অনেক আশার’ কথা জানান অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে তাদের (শিক্ষার্থী) জন্য, দেশের জন্য নতুন মুখ। কারণ অবশেষে, এই মুহূর্তে, দানব চলে গেছে। তাই এই উত্তেজনা।’

অধ্যাপক ইউনূসের মতে, সংস্কারই মুখ্য। বাকস্বাধীনতার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, সংস্কার একান্ত প্রয়োজন।

শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বাকস্বাধীনতা ব্যাপকভাবে সীমাবদ্ধ ছিল, যারা তার বিরুদ্ধে কথা বলতে চেয়েছিল, তাদের দিয়ে কারাগারগুলো ভরা ছিল। ড. ইউনূস অভিযোগ করেন, তিনি নিজেও বাকস্বাধীনতায় দমনের শিকার হয়েছেন।

শেখ হাসিনার সরকারের একজন স্পষ্টবাদী সমালোচক অধ্যাপক ইউনূস ক্ষুদ্র ঋণের অগ্রগামী হিসেবে সর্বত্র প্রশংসিত। কিন্তু, তাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ‘জনশত্রু’ হিসেবে গণ্য করেছেন। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ড. ইউনূস জানান, তার অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের তালিকায় অবশ্য আরও অনেক কিছু রয়েছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে শিক্ষার্থীদের একটি আসন থাকবে, যা পূর্ববর্তী প্রশাসনের অবসান ঘটাতে তাদের ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ। সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ ইতোমধ্যে তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হয়েছেন।

এরপরই রয়েছে বিচার বিভাগের সংস্কার। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। পক্ষান্তরে তাদের বিরুদ্ধে ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের’ আদেশে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। ড. ইউনূস বলেন, ‘আক্ষরিক অর্থে যিনি প্রধান বিচারপতি ছিলেন, প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন জল্লাদ।’

নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, যার সঙ্গে সবাই একমত হবে না। তবে তিনি আশা করেন, আগে যা হয়েছে, তার চেয়ে ভালো কিছু হবে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমার কাজের অভিজ্ঞতা যা-ই থাক না কেন। আমি বলছি না, আমি সরকার চালাতে পারব। আমি বলছি, আমার কিছু প্রতিষ্ঠান চালানোর অভিজ্ঞতা আছে। আমি যতটা পারি তা ব্যবহার করব। এমন লোক থাকবে যারা এটি পছন্দ করবে, আবার এমনও থাকবে যারা তা অপছন্দ করবে। তবে আমাদের এর মধ্য দিয়েই যেতে হবে।’

Share this news on:

সর্বশেষ

img

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে অর্জন শূন্য

রপ্তানি খাত হুমকির মুখে Sep 26, 2025
img
ওভিয়েদোর বিপক্ষে স্বস্তির জয় বার্সেলোনার Sep 26, 2025
img
ফ্রান্স-স্পেনের আকাশসীমা এড়িয়ে গেলেন নেতানিয়াহু Sep 26, 2025
img
সাতক্ষীরায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাল ১ Sep 26, 2025
img
বায়ুদূষণের শীর্ষে জাকার্তা, ঢাকার অবস্থান ২২তম Sep 26, 2025
img
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময়ের হার Sep 26, 2025
img
ডিএসইর বাজার মূলধন হারাল আরও ১০১৮ কোটি টাকা Sep 26, 2025
img
বীরের বেশে তারেক রহমান প্রত্যাবর্তন করবেন : এনামুল হক Sep 26, 2025
img
ভারতের পর তুরস্কের উপরও চাপ বাড়ালেন ট্রাম্প Sep 26, 2025
img
কক্সবাজারে ৪ রেস্টুরেন্টকে লাখ টাকা জরিমানা Sep 26, 2025
img
আইনি জটিলতায় বাবা হতে পারছেন না সালমান খান Sep 26, 2025
img
ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা, অচল উপকূলের জীবনযাত্রা Sep 26, 2025
img
নোয়াখালীতে পুকুরে ডুবে ২ ভাইয়ের প্রাণহানি Sep 26, 2025
img
বাংলাদেশ থেকে দক্ষ-অদক্ষ কর্মী নিতে আগ্রহী আলবেনিয়া Sep 26, 2025
img
টি-টোয়েন্টিতে তাসকিনের অনন্য সেঞ্চুরির রেকর্ড Sep 26, 2025
img
লাদাখে বিক্ষোভ, বাতিল হলো সোনম ওয়াংচুকের এনজিওর নিবন্ধন Sep 26, 2025
img
সাবেক এমপি ইলিয়াস মোল্লার সহযোগী দেলোয়ার গ্রেপ্তার Sep 26, 2025
img
কাল সৌদিতে শুরু হচ্ছে টানা ১৩ দিনের কমেডি উৎসব, পেছনের উদ্দেশ্য কী? Sep 26, 2025
img
ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্টের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড Sep 26, 2025
img
বিশ্বের বৃহৎ মুসলিম দেশের কথায় ‘অবাক’ নেতানিয়াহুর দেশ Sep 26, 2025