প্রতিবেশি দেশ ভারতকে আন্তর্জাতিক নদী আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক নদী আইনের নীতি অনুযায়ী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতি সহযোগিতামূলক মনোভাব রাখতে হবে। উজানের দেশগুলোকে বিশেষত ভাটির দেশগুলোতে পানি ছাড়ার আগেই সতর্কতা প্রদান করা উচিত, যাতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কমানো যায়।’
শুক্রবার বিকালে হবিগঞ্জের খোয়াই নদীর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ পরিদর্শনের সময় তিনি এই মন্তব্য করেন।
রেজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ‘অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে ভারতের সাথে অভিন্ন নদীগুলোর পানি ছাড়ার বিষয়ে আগাম সতর্কতার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আলোচনা করা হবে।’
পরিদর্শনের পর তিনি হবিগঞ্জ সার্কিট হাউজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং চুনারুঘাট উপজেলার মুরারবন্দ মাজারে পিতার কবর জিয়ারত করেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ আগস্ট সকাল ৯টার পর থেকে শুরু করে ২০ আগস্ট সকাল ৯টা পর্যন্ত মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ২০০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের কারণে ত্রিপুরা রাজ্যের সব ড্যাম ও ব্যারাজের পানি ধারণক্ষমতার সীমায় পৌঁছে যায় এবং ২০ আগস্ট রাতে হঠাৎ করেই বেশির ভাগ ড্যাম ও ব্যারাজের গেট খুলে দেয় ত্রিপুরা রাজ্য কর্তৃপক্ষ।
তাছাড়া ১৯ আগস্ট সকাল ৯টার পর থেকে শুরু করে ২২ আগস্ট সকাল ৯টা পর্যন্ত কুমিল্লা জেলায় মোট ৪৪৫ মিলিমিটার ও ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলায় ৪০৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ১৯ আগস্ট সকাল ৯টার পর থেকে শুরু করে ২০ আগস্ট সকাল ৯টা পর্যন্ত দক্ষিণ ত্রিপুরার বাগাফা নামক স্থানে ৩৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যে স্থান বাংলাদেশের ফেনী জেলার পাশেই অবস্থিত।
এই বৃষ্টিপাত ফেনী জেলার মুহুরী নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। একই দিনে ত্রিপুরা রাজ্যের অন্যান্য স্থানে ৩০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। একই সময়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জি নামক স্থানে ৩৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে যা বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার সুরমা নদীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
কিন্তু ত্রিপুরা রাজ্য কর্তৃপক্ষ কিংবা ভারত সরকার ভাটি অঞ্চলে অবস্থিত বাংলাদেশ সরকারকে ড্যাম ও ব্যারাজের গেট খুলে দেওয়া সম্পর্কে আগে থেকে কোনোরকম তথ্য দেয়নি বা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।