‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ ও সংবিধানে পাঁচ মূলনীতি চায় সংস্কার কমিশন

একগুচ্ছ সুপারিশসহ প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কাছে আজ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) প্রতিবেদন জমা দিয়েছে অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন, যেখানে সরকারের সাংবিধানিক নামের পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতেও বড় ধরনের পরিবর্তন চেয়েছে তারা।

জানা গেছে, নিজেদের প্রতিবেদনে রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতির মধ্যে তিনটিই বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে অধ্যাপক আলী রীয়াজের কমিশন। সেইসঙ্গে শুধু গণতন্ত্র বহাল রেখে রাষ্ট্র পরিচালনায় নতুন আরও চারটি মূলনীতি সংযুক্তিরও সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এ ছাড়া, সংবিধানে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’-এর পরিবর্তে ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ এবং ‘প্রজাতন্ত্রে’র পরিবর্তে ‘নাগরিকতন্ত্র’ শব্দ ব্যবহারের সুপারিশও করেছে কমিশন।

বর্তমানে সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার যে চার মূলনীতি রয়েছে সেগুলো হলো জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে যে সংবিধান প্রণীত হয়েছিল, তাতে রাষ্ট্র পরিচালনার এই চার মূলনীতি গৃহীত হয়েছিল।

বর্তমানের এই চার মূলনীতির মধ্যে শুধু ‘গণতন্ত্র’ রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত নতুন পাঁচ মূলনীতির মধ্যে। সঙ্গে নতুন মূলনীতি হিসেবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার ও বহুত্ববাদ সংযুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের মহান আদর্শ এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনস্বরূপ সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে এই পাঁচটি নীতি প্রস্তাব করা হয়েছে।

সেইসঙ্গে তিন মূলনীতি বাদ দেওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ এবং এ সংশ্লিষ্ট সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদগুলো বাদ দেওয়ার সুপারিশ করছে কমিশন।

প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ চালুরও সুপারিশ করা হয়েছে তার কমিশনের পক্ষ থেকে।

সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার কাছে নিজেদের সংস্কারের সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে আরও তিনটি কমিশন। এগুলো হলো নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন।

সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই আলোচনার মাধ্যমে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হবে। ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই আলোচনা হবে বলে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নতুন বছরে প্রথম বাড়ল স্বর্ণের দাম Jan 15, 2025
img
‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ ও সংবিধানে পাঁচ মূলনীতি চায় সংস্কার কমিশন Jan 15, 2025
img
৪ বছর মেয়াদি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রার্থীর বয়স ২১ করার সুপারিশ Jan 15, 2025
img
প্রশংসিত নাসা'র বায়না Jan 15, 2025
img
শামীম ওসমান ও নানকের পরিবারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা Jan 15, 2025
img
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: রিজওয়ানা হাসান Jan 15, 2025
img
ভালোবাসা দিবসে " রোদের মায়ায় " নিয়ে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ জয় চৌধুরীর Jan 15, 2025
img
সংস্কার প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা Jan 15, 2025
img
মারা গেলেন আলোচিত নারী উদ্যোক্তা তনির স্বামী Jan 15, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে চার সংস্কার কমিশন Jan 15, 2025