শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার পেছনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও দায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের সাইড লাইনে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি।
গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা সরকারকে দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন না করায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের কড়া সমালোচনা করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বয়ান ‘ভুয়া’।
আওয়ামী শাসনামলে দেশের অর্থনীতি এবং বিশাল গার্মেন্টস শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য শেখ হাসিনা কৃতিত্ব নিলেও সমালোচকরা তার বিরুদ্ধে বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমত দমনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছিল। এমন মন্তব্য করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ, হত্যা, গুম, দুর্নীতি, অর্থপাচারসহ নানা অভিযোগে তদন্ত চলছে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে।
সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতে ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিলেও দিল্লি তার কোনো উত্তর দেয়নি বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা। রয়টার্সকে বলেন, এর আগে শেখ হাসিনা দাভোসে সবাইকে দেশের শাসনব্যবস্থা কীভাবে চালাতে হয় তা নিয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে সে সময় উপস্থিত বিশ্বনেতাদের কেউ সেটি নিয়ে প্রশ্ন করেননি। এটি কোনো ভালো বিশ্বব্যবস্থা নয় বলেও অভিযোগ করেন মুহাম্মদ ইউনুস।
শেখ হাসিনা স্বৈরাচারী হয়ে উঠার পেছনে সম্পূর্ণভাবে বিশ্বই দায়ী বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, শেখ হাসিনার পরিণতি বিশ্বের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নন ড. ইউনূস। সাক্ষাৎকারে সে কথাই পূনরব্যক্ত করেন তিনি। জানান, ২০২৫ সালের শেষে বা ২০২৬ সালের শুরুতে নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করবে তার সরকার।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে শক্তিশালী বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক থাকলেও, হাসিনার পদত্যাগের পর এবং তিনি দিল্লিতে আশ্রয় নেয়ার কারণে সম্পর্ক কিছুটা টানাপড়েন দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধান্ন উপদেষ্টা বলেন, ‘তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেয়া হোক। শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে ভারত আমাদের সহায়তা করুক।
বাংলাদেশের কঠিন সময়ে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি বন্ধু উল্লেখ করে ইউনূস রয়টার্সকে জানান, দিল্লির সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন ব্যক্তিগতভাবে তাকে বেশ কষ্ট দেয়। ভারতের সঙ্গে তার নিজেরও বেশ ভালো সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অবশ্যই সবচেয়ে শক্তিশালী হওয়া উচিত, কারণ বাংলাদেশের অংশ বাদ দিয়ে ভারতের মানচিত্র আঁকা যায় না।
টিএ/