ফের জাতিগত নিধনের শঙ্কায় গাজাবাসী

১৫ মাস পর ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও জাতিগত নিধনের শঙ্কা জানিয়েছেন অবরুদ্ধ গাজাবাসী। সম্প্রতি গাজা উপত্যকা খালি করতে ডনাল্ড ট্রাম্পের পরামর্শের পর যুদ্ধবিরতিতেও ভীত-সন্ত্রস্ত দিন যাপন করছেন ফিলিস্তিনিরা।

দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তার জয়ের কারণেই গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা পুনর্গঠনেও সে সময় সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। তবে এবার জানালেন, গাজার ফিলিস্তিনিদের অন্য দেশে সরিয়ে নিয়ে গাজা উপত্যকা খালি করতে চান তিনি।

এ জন্য গাজার বাসিন্দাদের আশ্রয় দিতে মিসর ও জর্ডানের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গত ২৫ জানুয়ারি সাংবাদিকদের কাছে এমন দৃষ্টিভঙ্গির কথাই তুলে ধরেন তিনি। ইসরায়েলের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের এমন বিরোধী অবস্থানে গাজায় আরেকটি জাতিগত নিধনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ট্রাম্প চান গাজার আরও ফিলিস্তিনিদের মিসর ও জর্ডান আশ্রয় দেবে। বিষয়টি নিয়ে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে ইতোমধ্যে কথা বলেছেন তিনি। জানান, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গেও গাজাবাসীদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়ে তিনি কথা বলবেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি চাই, মিসর গাজা থেকে আরও মানুষ নিয়ে যাক। সম্ভবত ১৫ লাখ মানুষের কথা হচ্ছে। তাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গাজা খালি করতে হবে।’

গাজা উপত্যকা সত্যিই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে জানিয়ে জর্ডানের বাদশাহকে ট্রাম্প বলেছেন, গাজা আর বসবাসের উপযোগী নেই। জর্ডান আরও বেশি ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দিলে তিনি খুশি হবেন।

গাজার বাসিন্দাদের সাময়িক সময়ের জন্য অথবা স্থায়ীভাবে এসব দেশে সরিয়ে নেয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প। বলেন, সত্যিকার অর্থে গাজা এখন একটি ধ্বংসযজ্ঞ। প্রায় সবই ধ্বংস হয়েছে। মানুষ মারা যাচ্ছে।

তবে ট্রাম্পের এমন বিতর্কিত মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে গাজার সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগঠন প্যালেস্টাইনিয়ান ইসলামিক জিহাদ- পিআইজে। গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসা এই সংগঠনটি বলেছে, ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজ ভূখণ্ড ছেড়ে যেতে বাধ্য করতে ট্রাম্পের এমন মন্তব্য- যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ উসকে দেয়ার শামিল।

তাদের মতে, ইহুদিবাদী ইসরায়েলের ভাষাতেই কথা বলছেন ট্রাম্প। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দিতে চাওয়া এবং এতে বাধ্য করা ফিলিস্তিনের মানুষের অধিকারের চরম লঙ্ঘন উল্লেখ করে ট্রাম্পের এমন অবান্তর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে মিসর ও জর্ডানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

ইতিহাসবিদরা বলছেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের অন্য কোথাও সরে যেতে বাধ্য করা হলে নাকবা বা মহাবিপর্যয়ের মতো কালো অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড দখল করে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।

এদিকে ইসরায়েলকে ২০০০ পাউন্ডের বোমা সরবরাহে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের স্থগিতাদেশ তুলে নিয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে পোস্টে লিখেছেন, ‘এমন অনেক জিনিস, যা ইসরায়েল চেয়েছিল, অর্থও দিয়েছিল; কিন্তু বাইডেন সরবরাহ করেননি। সেগুলো এখন ইসরায়েলের পথে রয়েছে।’

ট্রাম্পের এমন বক্তব্যে ইসরায়েল সরকার গাজার বেসামরিক মানুষের ওপর এ বোমা দিয়ে হামলা করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে গাজার সীমান্তবর্তী রাফাহ শহরে বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে নিজেদের বাড়িতে ফিরতে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনারাস। যুদ্ধবিরতি চলাকালে হামাস চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করছে অভিযোগ করে গাজার একটি প্রধান সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন তারা।

টিএ/

Share this news on:

সর্বশেষ

img
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে : মান্না Sep 20, 2025
আবারও গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিল যুক্তরাষ্ট্র Sep 20, 2025
জামায়াতে ইসলামী দেশের শান্তি ও শৃঙ্খলার বিরোধী: ড. রেদোয়ান Sep 20, 2025
আদালতের অনুমতিতেই বিদেশ গিয়েছিলেন এনবিআর সদস্য বেলাল চৌধুরী: বাংলাদেশ পুলিশ Sep 20, 2025
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য পেনশন সুবিধায় বড় পরিবর্তন Sep 20, 2025
img
বিসিবির নতুন নির্বাচক হলেন সালমা খাতুন Sep 20, 2025
img
আগামী ৫ মাসে অনেক কিছুই ঘটবে, যা আমরা কল্পনাও করতে পারছি না : মান্না Sep 20, 2025
img
যারাই সরকার গঠন করুক জুলাই আত্মত্যাগকে ধারণ করবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Sep 20, 2025
img
বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনের সব ক্রয় প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে : যুক্তরাষ্ট্র Sep 20, 2025
img
বাংলাদেশের আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা আনতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ৮ দিকনির্দেশনা Sep 20, 2025
img
ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর এলাকায় প্রশাসনের জরুরি নির্দেশনা জারি Sep 20, 2025
"আমরা সেনাবাহিনী ও বসুন্ধরার চোখে চোখ রেখে কথা বলেছি" Sep 20, 2025
মোহাম্মদপুর জোনের এসিসহ ৩ পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার Sep 20, 2025
img
ভারতে বসে দেশবিরোধী অপকৌশলে লিপ্ত শেখ হাসিনা : এ টি এম আজহারুল Sep 20, 2025
img
চ্যাম্পিয়ন ইরানের বিপক্ষে ফুটসালে বাংলাদেশের অভিষেক Sep 20, 2025
img
জামায়াতসহ কয়েকটি দল নির্বাচন নস্যাতের চেষ্টা করছে: প্রিন্স Sep 20, 2025
img
'খেতে যাওয়া’ বিতর্কে ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল পুলিশ Sep 20, 2025
img
জামায়াতকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন রুমিন ফারহানা Sep 20, 2025
img
জেদ্দায় শুরু হতে যাচ্ছে ৫ম হজ সম্মেলন ও প্রদর্শনী Sep 20, 2025
img
বাগরাম বিমানঘাঁটি নিয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে কথা হচ্ছে: ট্রাম্প Sep 20, 2025