শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ফলাফল কিংবা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর স্কুলে মোবাইল ফোন নিষেধাজ্ঞার কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব নেই—সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি বিশ্বের প্রথম উদ্যোগ, যা মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাগত অর্জনের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করেছে।
গবেষণাটি পরিচালনা করেন বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. ভিক্টোরিয়া গুডইয়ার। তিনি বলেন, ‘স্কুলে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করা কি একেবারেই অপ্রয়োজনীয়? বিষয়টি তা নয়। তবে শুধুমাত্র নিষেধাজ্ঞাই যথেষ্ট নয়। বরং আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের ফোনে অতিরিক্ত সময় কাটানোর প্রবণতা কমানোর দিকে।’
বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং ল্যানসেটের ইউরোপীয় স্বাস্থ্যনীতিবিষয়ক জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় ইংল্যান্ডের ৩০টি স্কুলের ১,২২৭ জন শিক্ষার্থীর ওপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গবেষকরা স্কুলগুলোর বিভিন্ন নিয়মকানুন পর্যবেক্ষণ করেন, বিশেষত ক্লাসের ফাঁকে এবং টিফিনের সময় মোবাইল ব্যবহারের নিয়মাবলী পর্যালোচনা করা হয়।
ফলাফল বলছে, যেখানে স্মার্টফোন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক কার্যকলাপ, ঘুমের মান কিংবা শ্রেণিকক্ষে আচরণে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যায়নি। মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য কোনো ইতিবাচক বা নেতিবাচক পরিবর্তন পাওয়া যায়নি। গবেষকরা মানসিক সুস্থতা নির্ধারণে ‘ওয়ারউইক-এডিনবার্গ ওয়েলবিয়িং’ স্কেল ব্যবহার করেছেন, যা শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ ও বিষণ্নতার স্তর বিশ্লেষণ করে।
শিক্ষকদের অভিমত অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা ইংরেজি এবং গণিত বিষয়ে তাদের প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন করেছে কি না, সেটিও বিশ্লেষণ করা হয়। তবে ফোন নিষিদ্ধকরণের ফলে শিক্ষার্থীদের গ্রেড বা শেখার কার্যক্রমে কোনো বিশেষ অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি।
লন্ডনের পশ্চিম অঞ্চলের টুইফোর্ড স্কুলের নিয়ম অনুসারে, কেউ স্মার্টফোন নিয়ে ধরা পড়লে তা সেমিস্টারের বাকি সময়ের জন্য বাজেয়াপ্ত করা হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ মনে করে, এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোবাইল ব্যবহারের বিষয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
অন্য কিছু স্কুলের শিক্ষার্থীরা বলছে, ফোন নিষিদ্ধের ফলে তারা কম বুলিং-এর শিকার হচ্ছে এবং তাদের সামাজিক দক্ষতা উন্নত হয়েছে। এতে বোঝা যায়, মোবাইল নিষিদ্ধ করার বিষয়টি একদিকে যেমন কিছু সুবিধা বয়ে আনতে পারে, তেমনি তা একমাত্র সমাধান নয়।
গবেষকরা মনে করেন, শুধুমাত্র নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং মোবাইল ব্যবহারের একটি ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। শিক্ষার্থীরা যেন ফোনের প্রতি আসক্ত না হয় এবং শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট না করে, সেজন্য বিভিন্ন নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
এই গবেষণার ফলে বোঝা যায় যে, মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাই একমাত্র সমাধান নয়। বরং শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করাই হতে পারে কার্যকর সমাধান।
টিএ/