প্রধানমন্ত্রীকে জবাবদিহিতায় আনতে ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রধান ড.আলী রীয়াজ। একবার প্রধানমন্ত্রী হলেই তাকে আর কখনো জবাবদিহি করতে হয় না। এটা থেকে বেরিয়ে এসে, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ এবং শাসনব্যবস্থায় জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপরও তিনি গুরুত্ব দেন।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন উপস্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে অন্য কোনো পথ না পেয়ে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের আশঙ্কা মোকাবিলায় ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহিতার প্রতিষ্ঠান তৈরির পাশাপাশি সেগুলোর স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে, কমিশনের প্রতিবেদনে এমন সুপারিশ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন করা হলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়া জোরদার হবে। সংবিধানের অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব হবে। সংবিধান সংশোধনে জনগণের ম্যান্ডেট নেওয়া হয়নি আগে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সংকট তৈরি হয়েছে। ড. আলী রীয়াজ বলেন, ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদী শাসনের আশঙ্কা মোকাবিলার উপায় হচ্ছে শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং তা স্থায়ী করা। ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহিতার জন্য প্রতিষ্ঠান তৈরি ও সেগুলোর স্বাধীনতা নিশ্চিত করাও জরুরি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় স্থানীয় পর্যায় থেকে শাসনব্যবস্থার সর্বস্তরে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তাদের প্রতিনিধিত্বকে কার্যকর করে তুলতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও সংস্কারের বিষয়ে সবাই ঐকমত্য আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। কমিশন প্রধান বলেন, গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার হবে কি-না তা ঠিক করবে এই সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনের পূর্বে অনেক সংস্কার সম্ভব। সে সব বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেবেন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সংস্কার নিয়ে সারা দেশের মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছে। লিখিত বক্তব্য দিয়েছে ২৫টি রাজনৈতিক দল ও তিনটি জোট। এ ছাড়া সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি ও সংবিধান বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত পর্যালোচনা করেই প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে। প্রতিবেদনে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান আদর্শ এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের জনআকাঙ্খার প্রতিফলনস্বরূপ সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র’ প্রস্তাব, প্রধানমন্ত্রীর পদের ক্ষমতা হ্রাসসহ সাতটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার বয়স ২১ বছর নির্ধারণের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত এমন নয়। কারণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাহিরেও যোগ্য মানুষ থাকেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তরুণদের ভূমিকা বেশি। তাই আইন প্রণয়নে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। এটি রাজনৈতিক দলের কাছে কমিশনের প্রস্তাবনা। সংবিধানের বিষয়টি কীভাবে হবে, সেটা সরকারের বিষয়। তারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ রকম পরিস্থিতি দেশে আগে কখনোই আসেনি।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং নাগরিকদের সুবিচার প্রাপ্তির জন্যে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপের সুপারিশ আছে। নাগরিকদের অধিকারগুলো সম্প্রসারণের ওপর জোর দিয়েছি এবং সেগুলো বলবৎকরণে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতার বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করেছি।
উল্লেখ্য, ছয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে অধিক পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্যের কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।