বরগুনার বেতাগীতে বিএনপির দুই গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টায় বেতাগী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিতরণ শেষে উপজেলা পরিষদের আশপাশের এলাকায় এই সংঘর্ষটি ঘটে। সংঘর্ষের ফলে শহরজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনার পর পৌর শহরে পরিস্থিতি থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ, ডিবি পুলিশ এবং নৌ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
হামলার বিষয়টি বিএনপির এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে দায়ী করছেন এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করছেন। নাম না প্রকাশের শর্তে তৃণমূলের বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীরা বলেন, দলের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর আগেও দলীয় বিভিন্ন কার্যক্রম ভিন্ন ভিন্নভাবে পরিচালিত করত বলে নেতাকর্মীরা উল্লেখ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বেতাগী গালর্স স্কুল এন্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিতরণ শেষে উপজেলা বিএনপি আহবায়ক মো. হুমায়ুন কবির মল্লিক ও উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক মো. সোয়েব কবিরের মধ্যে কথার কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। মুহূর্তের মধ্যে দেশীয় অস্ত্র রানদা, বগি দা, চ্যানা, লোহার রড, পাইপ, লাঠিসোটাসহ হামলায় লিপ্ত হয়। এসময় এক গ্রুপকে ধাওয়া করে এবং মুহূর্তের মধ্যে অন্য গ্রুপ এসে পাল্টা ধাওয়া করে এবং ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে।
আধা ঘণ্টাব্যাপি এই সংঘর্ষ চলে এবং রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এসময় শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সংঘর্ষে উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক হুমায়ুন কবির মল্লিক, উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক সোয়েব কবির, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল খানসহ দুই গ্রুপের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে থানা পুলিশের এস আই এমাদুল, এএসআই জাহিদুল ও একজন পুলিশ কনস্টেবল আহত হয়েছে।
আহত উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক জামাল খান বলেন, ‘আমাদের যুবদলের নেতাকর্মীদের অতর্কিতভাবে উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক সোয়েব কবির সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা হামলা করেছে। আমরা এই হামলার সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ বিষয় বেতাগী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মো. হুমায়ুন কবির মল্লিক বলেন, ‘গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান শেষে বাড়িতে ফেরার পথে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান কবির ও তার ছেলে সোয়েব কবির সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অর্তকিতভাবে হামলা করেন। আমি নিজেও গুরুতর আহত হয়েছি এবং আমার দলের ১৫-২০ জন নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করেছে। হামলার বিষয়টি বিএনপির দলের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান কবির বলেন, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক হুমায়ুন কবির মল্লিক ২০১৪ সালে বিএনপিতে ঢুকছে। দলে ঢুকে টাকার বিনিময় একটি কমিটি কিনে আনছে এবং বিভিন্ন এলাকায় তার বাহিনী দ্বারা লুটপাট করেছে, বাড়িঘর ভাঙচুর করছে। ৫ আগস্টের পর তার সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। আজকে হুমায়ুন মল্লিক আমার ছেলে সোয়েব কবিরের মাথায় আঘাত করেছে এবং গুরুতর আহত হয়েছে, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। দলের হাইকমেন্টের কাছে এর বিচার দাবি করছে।
এ বিষয় বেতাগী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান মনির বলেন, বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। বর্তমানে পৌর শহরে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।