শীতকাল ও শীতের শেষের অন্যতম প্রিয় সবজি বাঁধাকপি। এটি অনেকভাবেই রান্না করা যায়—কেউ ভেজে খান, কেউ রান্না করে, কেউ আবার কাঁচা সালাদ বানিয়ে খেয়ে থাকেন। তবে আজ জানাবো বাঁধাকপির একটি নতুন রেসিপি, যা আপনাকে দেবে ভিন্নধর্মী এক স্বাদ।
এই রেসিপির নাম হলো বাঁধাকপির শুভ্রানী। যদিও এটি খুব বেশি পরিচিত নয় এবং এর ইতিহাসও জানা যায়নি, তবে একবার চোখের সামনে দেখলে মনে হবে একবার তো এই রেসিপি ট্রাই করা উচিত।
দুধসাদা ক্রিমে মাখামাখা বাঁধাকপির ঝাল-মিষ্টি স্বাদ। অদ্ভুত বিষয় হলো, বাংলাদেশে এ রান্নার ইতিহাস খুব একটা স্পষ্ট না হলেও বিদেশে খানিকটা একই ধরনের রেসিপি জনপ্রিয়। তার নাম ‘ক্রিম ক্যাবেজ’। ক্রিম ক্যাবেজ রান্নাটি জনপ্রিয় হয়েছিল ১৯৩০ সালের দিকে।
সে সময় গোটা বিশ্বে মন্বন্তর পরিস্থিতি। বেকারত্ব, দারিদ্র, অনাহার চলছে। সকলেই চেষ্টা করছেন টাকা বাঁচিয়ে রাখতে। সেই ভাবনা থেকেই দৈনন্দিন খরচে রাশ টানা। মুদির দোকানের খরচ কমানো।
বাঁধাকপির মতো সবজিকে দুধ বা ঘন ক্রিমে মাখিয়ে পেঁয়াজ-রসুন-গোলমরিচ দিয়ে খাওয়ার চল সে সময় থেকেই।
ফাইবারে সমৃদ্ধ বাঁধাকপি যেমন পেট ভর্তি রাখত অনেকক্ষণ, তেমনই যেকোনো কিছুর সঙ্গে খাওয়াও যেত। ক্রিম ক্যাবেজের উৎপত্তি এব জনপ্রিয়তা সেই সময় থেকেই।
পরবর্তী কালে সেই রান্নাই কোনোভাবে বিদেশিদের হাত ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছিল কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর আপাতত অজানাই। তবে উৎপত্তি যেমনই হোক, স্বাদবদলে বাঁধাকপির শুভ্রানীর জবাব নেই। চেনা সবজির অচেনা এই রান্না কিভাবে করবেন দেখ নিন।
উপকরণ
১টি বাঁধাকপি (সবুজ পাতাগুলো বাদ দিয়ে জিরিজিরি করে কেটে নেওয়া)
১/২ কাপ কড়াইশুঁটি
২টি কাঁচামরিচ
১/২ কাপ নারকেল কোরা
১ টেবিল চামচ গুঁড়া দুধ
১ চা-চামচ ময়দা
২টি ছোট এলাচ
৩-৪টি লবঙ্গ (মাথার ফুল গুলো বাদ দিয়ে নিতে হবে)
১ গাঁট দারচিনি
২টি তেজপাতা
১/২ চা-চামচ কালো জিরা
২ চা-চামচ সাদা তেল
১ চা-চামচ ঘি
স্বাদমতো লবণ
স্বাদমতো চিনি
প্রণালি
কুচোনো বাঁধাকপিতে সামান্য লবণ দিয়ে হাত দিয়ে মাখিয়ে ঢাকনা দিয়ে রেখে দিন, যাতে বাঁধাকপি থেকে পানি বেরিয়ে যায় এবং পাতাগুলো নরম হয়ে যায়।কোরানো নারকেলে এক কাপ উষ্ণ পানি ঢেলে কিছুক্ষণ রেখে দিন। তারপর তা ছেঁকে নারকেলের দুধ বের করে নিন। নারকেলের দুধ বের করা হয়ে গেলে তাতে গুঁড়াদুধ ও ময়দা ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
কড়াইয়ে সাদা তেল ও ঘি দিয়ে তাতে তেজপাতা ছিঁড়ে দিন। এলাচ, লবঙ্গ, দারচিনি থেঁতো করে দিয়ে কালো জিরা দিন। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করার পরে সুগন্ধ বের হলে তার মধ্যে দিয়ে দিন লবণ দিয়ে মেখে রাখা বাঁধাকপি এবং কড়াইশুঁটি। আঁচ কমিয়ে বাঁধাকপিটা ভাজতে হবে। তবে রং ধরতে দেওয়া যাবে না। তরকারির নাম যেহেতু শুভ্রানী, তাই সাদা রং বজায় রাখতে হবে। বাঁধাকপি ভাজা হলে তাতে দিয়ে দিন আগে থেকে তৈরি করে রাখা নারকেলের দুধের মিশ্রণ ও চিনি। এই পর্যায়ে লবণও দেখে নিতে হবে। প্রয়োজন হলে এই সময়েই লবণ দিয়ে নিতে হবে। নারকেলের দুধ দিয়ে বাঁধাকপি ভালোভাবে মাখিয়ে তার মধ্যে দিয়ে দিন দুটি চেরা কাঁচামরিচ। এর পরে ঢাকা দিয়ে রান্না হতে দিন।
মিনিট দুয়েক পরে নাড়াচাড়া করে আবার ঢাকা দিয়ে রান্না হতে দিতে হবে। এভাবে বেশ কয়েক বার নাড়াচাড়া করার পরে যখন দেখবেন তরকারি থেকে তেল ছেড়ে আসছে, তখন আরো এক বার নাড়াচাড়া করে আঁচ বন্ধ করে মিনিট দুয়েক রেখে তার পরে নামিয়ে নিন।
বাঁধাকপির এই শুভ্রানী রুটি-লুচি-পরোটার সঙ্গেই খেতে বেশি ভালো লাগবে।