সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভিডিও বানাতে কোন চিঠি ছাড়াই টাকা ছাড় করতে বলে দিয়েছিলেন ফারুকী- প্রকাশ্যে এমন অভিযোগ কোথায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন ফারুকী। কোনো রকম কাগজপত্র ছাড়াই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে টাকা চাইতেন ফারুকী। এ রকম অনৈতিক আবদার মেটাতে মোটেও রাজি ছিলেন না প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক। এ কারণেই সৈয়দ জামিল আহমেদ স্বেচ্ছায় শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদ ছাড়েন। তিনি আবার শিল্পকলায় ফিরতে তিনি চারটি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। এদিকে এ ঘটনার পর উপদেষ্টা ফারুকী দাবি করেছেন, মহাপরিচালকের অভিযোগ সত্য নয়। ডাহা মিথ্যা। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সাত মাসের মাথায় এই প্রথম কোনো উপদেষ্টার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠল।
সম্প্রতি শিল্পকলায় নাট্যোৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ জামিল আহমেদ আচমকা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে উপস্থিত সবাইকে চমকে দেন। তিনি মঞ্চে থাকাকালে শিল্পকলার সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। মহাপরিচালক তাঁর বক্তব্যে সরাসরি সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বিরুদ্ধে শিল্পকলা একাডেমিতে ‘অযাচিত হস্তক্ষেপের’ অভিযোগও তোলেন।
শিল্পকলা একাডেমিতে নাট্যোৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে পদত্যাগের ঘোষণার পর শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপস্থিত ভক্ত-অনুরাগীরা সৈয়দ জামিল আহমেদকে ঘিরে ধরেন। এ সময় কে টাকা চেয়েছেন জানতে চাইলে জামিল আহমেদ সরাসরিই বলেন, ‘উপদেষ্টা’।
তিনি বলেন, ‘১০ থেকে ১৫ দিন আগে উপদেষ্টা ফারুকী আমার কাছে চেক চায়। কোনো রকম চিঠি ছাড়া। শিল্পকলা একাডেমি থেকে তাঁকে টাকা দিতে হবে। কারণ তাঁর খুব দরকার। সে একটা প্রজেক্ট করছে। আমি বলছি না সে টাকা নিয়ে উল্টাপাল্টা করছে। সে চিঠি ছাড়া কেমন করে টাকা চায়?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন বলেছি, না আমাকে চিঠি দেন। চিঠি ছাড়া কোনো টাকা দেব না। সে তখন আমাকে বলে, ‘আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করেছি অনেক, আর করব না।’
এ সময় শিল্পকলা একাডেমির পরিচালনা পরিষদের সদস্য সামিনা লুৎফা নিত্রা তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তখন সৈয়দ জামিল চারটি শর্ত দেন। প্রথম শর্ত– মন্ত্রণালয় থেকে শিল্পকলা একাডেমির কাজে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করা হবে না। এটা সংবাদ সম্মেলন করে বলতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত– শিল্পকলাকে একটা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে দিতে হবে। যদি শিল্পকলা আইনগত সমস্যা করে, তবে পরামর্শ দেবে। কিন্তু হস্তক্ষেপ করবে না। তৃতীয় শর্ত– শিল্পকলায় মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ‘ফোকাল পয়েন্ট’ থাকবে না। এটা নিশ্চিত করতে হবে। চতুর্থ শর্ত– ‘আদিবাসী’ বলার অধিকার চেয়েছেন সৈয়দ জামিল। এ ছাড়া শিল্পকলার কাজের জন্য তিনি ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছেন, যার চিঠি দিতে হবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে।
সৈয়দ জামিল বলেন, একটি ভিডিও নির্মাণের জন্য লিখিত চিঠিপত্র ছাড়া উপদেষ্টার পক্ষ থেকে টাকার জন্য চাপ দেওয়া হলে আমি তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করি। বর্তমানে একাডেমির ভেতরে বিভেদ সৃষ্টির হীন প্রচেষ্টা লক্ষ্য করছি। এ অবস্থায় চারদিকে ঘিরে থাকা চক্রের সঙ্গে আপস করে আমার পক্ষে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন সম্ভব নয় বিধায় আমি পদত্যাগ করেছি।
এদিকে, গতকাল দুপুরে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে সৈয়দ জামিল আহমেদের অনেক অভিযোগ ‘ডাহা মিথ্যা’ বলে দাবি করেছেন উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ফারুকী লিখেছেন, ‘এইটুকু আপাতত বলে রাখি, উনার বলা অনেকগুলা কথা পুরো সত্য নয়, অনেকগুলা কথা ডাহা মিথ্যা এবং কিছু কথা পরিস্থিতি ডিল না করতে পারাজনিত হতাশা থেকে বের হয়ে আসা বলে মনে হচ্ছে। আমার বিস্তারিত লেখা হয়তো উনাকে বিব্রত করতে পারে। কিন্তু আমাকে আপনি এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন, যেখানে আমাকে বিব্রতকর হলেও সত্য বলতে হবে, জামিল ভাই।’ সংস্কৃতি উপদেষ্টা মন্ত্রণালয় ও তাঁর নিজের বক্তব্য পুরোপুরি উপস্থাপনের জন্য কিছুটা সময় চেয়েছেন।
শিল্পকলা একাডেমি পরিচালনায় মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেননি উল্লেখ করে ফারুকী বলেন, ‘ভালো শিল্পী হওয়া আর আমলাতন্ত্রকে কনফিডেন্সে নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানো দুইটা দুই রকম আর্ট। দ্বিতীয় কাজটা করবার জন্য লাগে ধৈর্য এবং ম্যানেজারিয়াল ক্যাপাসিটি। কলিগদের বুলিং না করে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা দিয়ে অনেক কাজ আদায় করে নেওয়া যায়। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গেলে যে কম্পোজার লাগে, সেটার সাথে কোনো একটা থিয়েটার দলে নির্দেশনা দেওয়ার টেমপারামেন্ট এক না। আমার ফিল্ম ইউনিটে আমি যা করতে পারি, একটা সরকারি প্রতিষ্ঠানে আমি তা করতে পারি না।’ স্ট্যাটাসে তিনি জামিল আহমেদের পদত্যাগপত্রটি গৃহীত হতে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ ছাড়া মহাপরিচালক পদে থাকতে জামিল আহমেদের দেওয়া চারটি শর্তের বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।