স্বাস্থ্যখাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পাঁচ দফা চিকিৎসকদের

দেশের স্বাস্থ্যখাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং চিকিৎসা পেশার মর্যাদা রক্ষায় পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। আগামী ১২ মার্চের মধ্যে এসব দাবি পূরণ না হলে সকল চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা যথাক্রমে কর্মবিরতি ও ক্লাস বর্জন করবেন। এমনকি ১২ মার্চ হাইকোর্ট কর্তৃক "ডাক্তার" পদবী সংক্রান্ত রিটের চূড়ান্ত রায় ঘোষণা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মসূচিতে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছেন তারা।

বুধবার (৫ মার্চ) চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলোর সম্মিলিত জোট ইউনাইটেড মেডিকেল অর্গানাইজেশনস অব বাংলাদেশের (ইউমব) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের পক্ষ থেকে ২০১৩ সালে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করার জন্য আদালতে একটি রিট করা হয়েছিল, যার ফলে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে বেআইনিভাবে তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করে দেশের সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। বিগত ১৩ বছরে ৯০ বার কজ লিস্টে আসার পর, এমনকি শুনানির পর্ব গত তিন মাস আগেই শেষ হয়ে যাওয়ার পরও নানাবিধ অদৃশ্য কারণে এই রিটের রায় প্রদান করা হচ্ছে না। এভাবে জনগুরুত্বপূর্ণ একটি রিটকে বারবার পেছানোর মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষকে সঠিক স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তির মৌলিক ও রাষ্ট্রীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো :

১. এমবিবিএস/বিডিএস ডিগ্রীপ্রাপ্তগণ ব্যতীত অন্য কেউ নামের পূর্বে ‘ডাক্তার’ পদবী ব্যবহার করতে পারবে না এবং আদালতে চলমান এই সংক্রান্ত আইন ও জনস্বাস্থ্য বিরোধী সব রিট আগামী ১২ই মার্চের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।

২. রেজিস্টার্ড চিকিৎসক ছাড়া অন্য কেউ স্বাধীনভাবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবে না এই মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।

৩. আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্স কারিকুলাম সংস্কার কমিটি গঠন করে তাদের কোর্স কারিকুলাম পুনঃনির্ধারণ এবং মানহীন সব ম্যাটস (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) বন্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

৪. জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য শূন্যপদে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ এবং চিকিৎসকদের বিসিএসের বয়সসীমা ৩৪ বছরে উন্নীত করতে হবে।

৫. অনতিবিলম্বে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং বেসরকারি চিকিৎসকদের জন্য সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো (পে-স্কেল) প্রণয়ন করতে হবে।

উপরোক্ত পাঁচ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে নিম্নোক্ত কর্মসূচি চলমান থাকবে-
১. ৬-১০ মার্চ: দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ইন্টার্ণ চিকিৎসকগণ কর্মবিরতি পালন করবেন এবং মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করবেন, পাশাপাশি নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন।

২. ৫ মার্চ-১০ মার্চ: প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল, ডিরেক্টর এবং ডিপার্টমেন্ট প্রধানদের স্মারকলিপি প্রদান, কর্মসূচির ব্যাপারে অবহিতকরণ, সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ এবং অনলাইন প্রচারণা।

৩. ১০ মার্চ: জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন।

৪. ১১ মার্চ: দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সব চিকিৎসক কর্মবিরতি পালন করবেন এবং মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করবেন, পাশাপাশি নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন।

৫. ১২ মার্চ: দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সব চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা যথাক্রমে কর্মবিরতি ও ক্লাস বর্জন করবেন। ১২ মার্চ ঢাকার সব চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হবেন এবং ঢাকার বাইরে সবাই নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। (১২ মার্চ রায় প্রদান না করা হলে এবং অন্যান্য দাবি না মেনে নিলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মসূচি চলমান থাকবে।

জানা গেছে, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টদের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে বর্তমানে তিনটি রিট চলমান। এগুলো হলো—ডাক্তার পদবি ব্যবহার সংক্রান্ত ২৭৩০/২০১৩, ডাক্তার পদবি সংক্রান্ত ‘বিএমডিসি অ্যাক্ট ২০১০ এর ধারা ২৯’কে চ্যালেঞ্জ করে ১৩০৪৬/২০২৪ এবং আপডেটেড ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করার বৈধতা চেয়ে ১৩৪৬২/২০২৪। অনতিবিলম্বে এসব রিটের নিষ্পত্তিকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের নিকট উদাত্ত আহ্বান চিকিৎসক সমাজের। অনাথায় দেশের সচেতন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও জনতা ক্রমান্বয়ে আদালত এবং সরকারের উপর আস্থা হারাতে বাধ্য হবে বলেও মনে করেন তারা।

এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ Jul 07, 2025
img
গত ১৭ বছরে পিওনের চাকরিতেও এমপি-মন্ত্রীদের ডিও লেটার লেগেছে: ফয়েজ আহম্মদ Jul 07, 2025
img
রাজধানীর বাইরে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন ঠেকাতে আবেদন Jul 07, 2025
ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে পারব –নাটোরে নাহিদ Jul 07, 2025
রাজউকের অভিযানে স্থানীয়র বাধা; পরে যা জানা গেলো... Jul 07, 2025
img
ক্লাব বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট জয়ের দৌড়ে যারা এগিয়ে Jul 07, 2025
img
‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টকে শক্তিশালী করতে ১০ বছরের স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান প্রণয়ন করা হবে’ Jul 07, 2025
img
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের সাথে হেফাজত আমিরের সৌজন্য সাক্ষাৎ Jul 07, 2025
img
রিয়েল এস্টেট সংস্থার হয়ে প্রচারের কারণে মহেশ বাবুকে আইনি নোটিশ Jul 07, 2025
সাংবাদিক পরিচয়ে এরা কারা? Jul 07, 2025
আয়না ঘরে দিনের পর দিন অমানবিক নির্যাতন: ছাত্রদল নেতার বিবরণ! Jul 07, 2025
জুলাই নিয়ে জাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতভেদ Jul 07, 2025
img
জীবনসঙ্গীকে অবশ্যই ফেমিনিস্ট হতে হবে : বাঁধন Jul 07, 2025
img
মঙ্গলবার ইরান থেকে ফিরবেন আরও ৩২ জন Jul 07, 2025
img
ইনজুরির কারণে বাংলাদেশ সিরিজে থাকছেন না হারিস রউফ! Jul 07, 2025
রেজিষ্ট্রেশনের চিঠি বাতিল করতে ইউনানী চিকিৎসকদের প্রতিবাদ সমাবেশ! Jul 07, 2025
img
কারিগরি শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই : শিক্ষা উপদেষ্টা Jul 07, 2025
img
টি-টোয়েন্টি সিরিজে শ্রীলঙ্কার শক্তিশালী দল ঘোষণা Jul 07, 2025
img
ইয়েমেনের ৩ বন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল Jul 07, 2025
img
পুঁজিবাজারে সূচকের বড় উত্থান, ডিএসইতে লেনদেন ৫৭৩ কোটি Jul 07, 2025