মঙ্গলবার (১১ মার্চ) এ আদেশ দেন হাইকোর্ট।এর আগে সোমবার (১০ মার্চ) রাষ্ট্রপতিকে স্পিকারের শপথ পড়ানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন কবি শহীদুল্লাহ ফরায়জী।
রিটকারীর পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক বলেন, আমাদের সংবিধানে দুই জন প্রধানের কথা বলা আছে। একজন হলেন রাষ্ট্রপতি অপরজন হলেন- প্রধান বিচারপতি। তারা একে অপরকে শপথ পড়াতেন। সেটি ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে স্পিকারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেটি আবার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল করে, প্রধান বিচারপতির কাছে নেয়া হয়। দীর্ঘ কয়েক বছর চলার পর ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে স্পিকারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেটিই চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে রিটে। রিটে আইন সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
ওমর ফারুক আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান বিচারপতির শপথ পড়ানোর বিধান ছিল। পরবর্তীতে সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রপতিকে স্পিকারের শপথ পড়ানোর বিধান সংযুক্ত করা হয়। আমরা রিটে চেয়েছি রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে যেমন শপথ পড়াবেন, তেমনি রাষ্ট্রপতিকে প্রধান বিচারপতি শপথ পড়াবেন।
বিগত ২০১৩ সালের ১৮ জুন প্রধান বিচারপতির পরিবর্তে স্পিকার দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে শপথ পড়ানোর বিধান করে সংবিধানে আনা পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি (৬৪৮৭/২০১৩) দায়ের করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ড. মো. ইউনুস আলী আকন্দ।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৫৩ (ক) ফরম ১ এর ‘প্রধান বিচারপতি’ শব্দগুলির পরিবর্তে ‘স্পিকার’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হবে। রিটে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব ও জাতীয় সংসদের স্পিকারকে বিবাদী করা হয়।
ওই সময় ইউনুস আলী জানিয়েছিলেন, শুধু রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে ছাড়া ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশের সব রাষ্ট্রপতিকে শপথ পড়িয়েছেন প্রধান বিচারপতি। আর এবার রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকে সংসদের ডেপুটি স্পিকার শপথ পড়িয়েছেন। বর্তমান সংবিধান অনুসারে স্পিকার রাষ্ট্রপতিকে শপথ পড়ানোর বিধান রয়েছে। ডেপুটি স্পিকারকে এ সুযোগ দেয়া হয়নি।
কিন্তু ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তৃতীয় তফসিলের ১৪৮ অনুচ্ছেদের শপথ ও ঘোষণায় সংশোধনী আনা হয়। এই সংশোধনীতে প্রধান বিচারপতির বদলে স্পিকারকে রাষ্ট্রপতির শপথের দায়িত্ব দেয়া হয়। এর আগে সংবিধানে ১৪ বার সংশোধনী আনা হয়। কিন্তু কোনো সময়ই সংবিধানের এই বিধানে কোনো সরকার হাত দেয়নি।
সংবিধানের ৫৩ (ক) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতিকে স্পিকারের মাধ্যমে শপথ পাঠ করানো সংবিধান ও আইন বহির্ভূত। এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর প্রতি আঘাত করা হয়েছে বলে রিটকারী আইনজীবী জানিয়েছিলেন ওই সময়।
তিনি জানান, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সংবিধানেও বিধান রয়েছে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান বিচারপতি বা আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারক শপথ পড়াবেন। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ও দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ছাড়া বা সব রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতির কাছে শপথ নিয়েছেন।
রিটে রাষ্ট্রপতির শপথ সংক্রান্ত সংবিধানের তৃতীয় তফসিল ৫৩ (ক) অনুচ্ছেদকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে তা জানতে চেয়ে রুল জারির আবেদনও করা হয়।
এমআর/এসএন