নিজের লিভার উপহার দিয়ে ছেলে বললেন এটি ‘মা দিবসের উপহার’

হেপাটাইটিসে আক্রান্ত মাকে নিজের লিভারের একটি অংশ উপহার দিলেন ছেলে। এটি তার জন্য ‘মা’ দিবসের উপহার। তবে প্রথমে ছেলের এমন উপহার নিতে চাননি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সল্টলেকের এ বাসিন্দা।  

যদিও ডাক্তাররা বলছেন, কয়েক মাস পর লিভার স্বাভাবিকভাবেই ৯০ ভাগ বৃদ্ধি পায়। সেক্ষেত্রে মা ও ছেলের লিভার ফের নবজাতকের ন্যায় সচল ও সক্রিয় হবে। 

লিভার প্রতিস্থাপনের পর মা গেন ফিনলেসন বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা প্রতিদিন ভূমিতেই রয়েছি। এখান থেকে ভবিষ্যতের চিন্তা শুরু করবো। আমাদের আশা ও স্বপ্ন এখান থেকেই শুরু হবে।

৬৩ বছর বয়সী এ মায়ের লিভারে সংক্রমণ হয় ১৯৯১ সালে। তখন ৪ বছর বয়সী শিশুর অটিমুনিন হেপাটাইটিস ধরা পড়ে এবং তা শরীরের ইমিউন সিস্টেমের ফলে লিভার কোষগুলোর বিরুদ্ধে লড়া শুরু করে। সেই সময়ই তাকে চিকিৎসকরা ভবিষ্যতে তার লিভার ট্রান্সপ্লান্টের প্রয়োজন হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তবে তার পর দুই দশক ধরে তিনি বেশ সুস্থই ছিলেন।

তিনি বলেন, আমি হাসপাতালে যাব এবং সেখানে অবস্থান করবো। শরীরের অবস্থা খুব দ্রুতই খারাপের দিকে যাচ্ছিল।

ফিনলেসন গত বছর ন্যাশনাল হসপিটালে যান এবং সেখানে একটি অঙ্গও পেয়ে যান। এরপর তিনি একটু নির্ভার বোধ করেন।

তবে তার ছেলে ব্রান্ডন নিজের লিভার দেওয়ার প্রস্তাব দিলে প্রথমে মা তা নিতে চাননি। কেননা ব্রান্ডনের নিজের পাঁচটি সন্তান রয়েছে।

গেন ফিনলেসন এতটাই বেঁকে বসেন যে, এ ধরনের প্রস্তাবকে স্রেফ উড়িয়ে দেন তিনি। তিনি এ সময় এ বিষয়ে কোনো কথাও বলতে চাননি-যোগ করেন ব্রান্ডন। তবে তার বেশ কিছুদিন পর একটি অভিনব আইডিয়া বের করলাম এবং তাকে কোনো প্রকারে রাজি করানো হলো।

লিভার ট্রান্সপ্লান্টের জন্য প্রথমে চিকিৎসকরা একটি থ্রি-ডি মডেল প্রস্তুত করে। ফেব্রুয়ারিতে তার সার্জারি করা হয়। ডাক্তারদের কাছেও এটা ছিলো প্রথম কোনো অপারেশন। যেখানে একজন জীবিত লোকের লিভারের অংশ অন্য একজনের শরীরে ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়। এ জন্য তারা ব্রান্ডনের শরীরে থ্রি-ডি প্রিন্টেড মডেলটির ব্যবহার করেন।

চিকিৎসক ড. ম্যানুয়েল রদ্রিগুয়েজ বলেন, এক্ষেত্রে সাধারণত আমরা দাতার কাছ থেকে ডান লোব গ্রহণ করি এবং সুস্থতার দিক থেকে অন্তত ৬০ ভাগ সুস্থ লিভার গ্রহণ করি।  তিনি বলেন, বর্তমানে থ্রি-ডি ইমেজিং ও থ্রি-ডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা সুস্থভাবে লিভার সার্জারি করতে পারি।

ডাক্তাররা আরো বলেন, গেন এবং ব্রান্ডনের লিভারগুলো আবার নবজাতক হয়ে উঠতে পারে। কেননা কয়েক মাস পর লিভার স্বাভাবিক আকারের প্রায় ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

লিভার ট্রান্সপ্লান্টের পর এখন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন গেন ফিনলেসন। তিনি জানান, এই বয়সেও তিনি প্রতিদিন অন্তত পাঁচ মাইল হাঁটছেন। ছেলের সম্পর্কে তিনি বলেন, এ অনুভূতি ব্যক্ত করার ভাষা আমার জানা নেই। আমি কৃতজ্ঞ যে সে এমন একজন মানুষ, যে এমন কিছু করবে।

তবে এমন কীর্তির পরও বিষয়টিকে অনেকটা হাস্যরসেই পরিণত করলেন ছেলে ব্রান্ডন। তিনি বলেন, এমনটি তিনি কয়েক বছর ধরেই ভাবছিলেন। সর্বশেষ তিনি তা মা দিবসেই করতে পারলেন। এ যেন মা দিবসেরই উপহার।

 

টাইমস/এমএস/জেডটি

Share this news on: