যেসব কারণে রাজশাহীর আমচাষিরা এবার বাম্পার ফলনের আশায়

এবছর রাজশাহীর আমে ১০ হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এমনটাই আশা করছেন আমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে অঞ্চলটির গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে আমের মুকুল। অর্ধেক গাছে আমের গুটিও এসেছে।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে নওগাঁয় ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির বাগানে ৪ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন ও রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর বাগানে দুই লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এই তিন জেলায় আম বাগানে প্রায় ৯৩ হাজার হেক্টর জমি জুড়ে মুকুল ও গুটিতে পরিপূর্ণ আছে।

আম ব্যবসায়ীদের মতে, বাণিজ্যিক দিক বিবেচনায় বিভাগের আট জেলা; চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, বগুড়া, পাবনা, রাজশাহী এবং সিরাজগঞ্জের আম প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন ও বিদেশে রফতানি প্রক্রিয়া সহজ হলে আরও বেশি লাভবান হওয়া যাবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমচাষি ও কৃষি বিভাগ জানায়, কুয়াশা কম থাকায় মৌসুমের শুরুতেই ব্যাপক হারে মুকুল দেখা দিয়েছে বাগানগুলোতে। গাছে থাকা মুকুল যাতে ঝরে না পড়ে তাই কীটনাশক স্প্রে ও সেচসহ বিভিন্ন পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

শিবগঞ্জ উপজেলায় আমগাছ আছে ২২ লাখ ৭৪ হাজার ২৫টি। এর মধ্যে মুকুল এসেছে ৮৫ ভাগ আমগাছে। গোমস্তাপুর উপজেলায় আমগাছ আছে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ১০০টি। এরই মধ্যে ৪০ ভাগ গাছে ছোট আমের গুটি দেখা দিয়েছে।

নাচোল উপজেলায় আমগাছ আছে ৩০ লাখ ৪ হাজার ৩৩০টি। এর মধ্যে ৯৩ ভাগে মুকুল এসেছে। এরই মধ্যে আম লক্ষ্য করা গেছে ৭০ ভাগ গাছে। ভোলাহাট উপজেলায় আমগাছ রয়েছে ৯ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫টি। এর মধ্যে মুকুলিত হয়েছে ৯৫ ভাগ আমগাছ। বর্তমানে ৪৫ ভাগ গাছে আমের গুটি বেরিয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, অন ইয়ারের প্রভাবে জেলার আমবাগানগুলোতে বেশি ফলন হওয়ায় চলতি বছর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে ব্যাপক। তবে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমের বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদন ও বিদেশে আম রফতানি বৃদ্ধি করতে হবে। তা না হলে বেশি ফলন হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা কৃষকদের।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি বলেন, বিভাগের আট জেলায় যে পরিমাণ আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তার বাজার মূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক জানান, এই অঞ্চলে ৫০% এরও বেশি আমের মুকুল শুঁটিতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে ৬৫% মুকুল বর্তমানে মটরশুঁটির আকারের, যেখানে ৩৫% মার্বেল পর্যায়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাঘা উপজেলার এক আমচাষি জানান, গত বছর ১ কোটি টাকার আম বিক্রি করেছিলেন, তিনি এ বছর আবার ৩০০ বিঘা জমিতে আম চাষ করছেন। একইভাবে, চর বটতলার কৃষক বিপ্লব গত মৌসুমে ২২ লক্ষ টাকার আম বিক্রি করেছেন। উভয়ই এ বছরের ফলনের ব্যাপারে আশাবাদী।


এমআর/টিএ

Share this news on: